পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী এবং স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দের পরে এবার অযোধ্যার রামমন্দির শ্রীরামের মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করলেন দেশের চারজনের মধ্যে তৃতীয় শঙ্করাচার্য গুজরাতের দ্বারকাপীঠের স্বামী সদানন্দ সরস্বতী। আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, অযোধ্যায় শ্রীরামচন্দ্রের মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠা নিয়ে উদ্যোগী হয়েছে ‘ধর্মবিরোধী শক্তিগুলি’।
এদিকে শনিবারই আবার পুরীর শঙ্করাচার্য নিশ্চলানন্দ সরস্বতী সাফ জানিয়ে দিলেন, তিনি ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, এদিন তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভপ্রকাশও করেন। ‘উন্মাদ’ বলেও তোপ দাগেন তিনি। যদিও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) জোর চেষ্টা চালাচ্ছে, অন্তত দু’জন শঙ্করাচার্যকে উপস্থিত করে ‘সম্মানরক্ষা’র। ভিএইচপির দাবি, অন্তত দু’জন শঙ্করাচার্য উপস্থিত থাকবেন বলে তাদের আশা।
প্রসঙ্গত, এই অনুষ্ঠানের মূল কেন্দ্রে রয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে কি দ্বারকাপীঠের শঙ্করাচার্য প্রধানমন্ত্রীকে ‘ধর্মবিরোধী’ বলেছেন, এই প্রশ্ন এখন ঘুরছে সারা দেশে। বিশেষ করে অযোধ্যার হাজার হাজার সাধুসন্তের মধ্যে যারা ২২ তারিখে শ্রীরামের মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। এর আগে উত্তরাখণ্ডের জ্যোতিষপীঠের শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী এবং ওড়িশার গোবর্ধন পুরীপীঠের শঙ্করাচার্য স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ বলেছিলেন তাঁরা আমন্ত্রণ পেয়েও শ্রীরামের মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে অযোধ্যায় যেতে রাজি নন। কারণ মন্দির নির্মাণকার্য অসমাপ্ত রেখে শাস্ত্রের মতে বিগ্রহের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা যায় না, যা করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
স্বামী নিশ্চলানন্দ তখন দাবি করেছিলেন, চারজন শঙ্করাচার্যের মধ্যে একজনও যাবেন না অযোধ্যায়। কারণ তাঁরা সবাই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন। গুজরাত আশ্রমে শুক্রবার শঙ্করাচার্য সদানন্দ সরস্বতী সাংবাদিকদের সামনে এই প্রথম মুখ খুললেন। তিনি বলেছেন, যে ধর্মীয় স্থান কোনও বিতর্কে জড়িত, সেখানে হিন্দুশাস্ত্র মতে, পূজার্চনা করা নিষিদ্ধ। সেই জায়গায় ধর্ম বিরোধীদের আখড়ায় পরিণত হয়। রামজন্মভূমির আন্দোলন বিগত ৫০০ বছর ধরে চলছে। আমরা চেয়েছিলাম জায়গাটা হিন্দুদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। আমরা অযোধ্যায় যাই, কারণ সেখানে আধ্যাত্মিক শক্তির বাস রয়েছে। কিন্তু আমরা সেই আধ্যাত্মিক শক্তির উপস্থিতি টের পাব না, যদি সেখানে ধর্ম বিরোধী শক্তি সক্রিয় হয়। আমাদের সংস্কৃতির প্রতীক হচ্ছেন সেইসব মানুষ যাদের পবিত্র আধ্যাত্মিক শক্তির বাস রয়েছে।
দ্বারকাপীঠের শঙ্করাচার্য বলেন, চারজন শঙ্করাচার্যই অযোধ্যায় যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছেন। কিন্তু ২২ জানুয়ারি চারজনের কেউই অযোধ্যায় যাচ্ছেন না। অন্য দুই শঙ্করাচার্যের মতো তিনিও বলেন, অযোধ্যায় শ্রীরামের মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে শাস্ত্রের বিধিনিয়ম না মেনে। বেদের নিয়ম অনুযায়ী সেখানে পূজার্চনা হচ্ছে না। চতুর্থ শঙ্করাচার্য কর্নাটকের শ্রীঙ্গোরিপীঠের স্বামী ভারতীতীর্থ এখনও এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। যদিও দ্বারকাপীঠের শঙ্করাচার্যের মতে তিনিও অযোধ্যার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেইমতো চারজন শঙ্করাচার্যের মধ্যে কেউই অযোধ্যায় ২২ জানুয়ারি যাচ্ছেন না। অযোধ্যার সাধুসন্তদের এক বিরাট অংশের মতে হিন্দু সনাতন ধর্মের সর্বোচ্চ চারজন ধর্মগুরু বা শঙ্করাচার্য যেখানে উপস্থিত থাকছেন না, সেখানে আর যাইহোক ধর্মের কাজ হবে না। গোটা অনুষ্ঠানটাই রাজনৈতিক।