ইনামুল হক, বারাসত: ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য যেসব কল্যাণকর কর্মসূচি নিয়েছেন, তা বাস্তবায়িত করার দায়িত্ব কেবল সরকারের নয়। সর্বস্তরের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব এই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।’
বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের নীলদর্পণ সভাঘরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়ন নিয়ে সচেতনতা শিবির ও প্রশাসনিক বৈঠকে এই বার্তা দেন পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান। উপস্থিত ছিলেন সংখ্যালঘু কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান মাইকেল সেন কালভার্ট, শেহনাজ কাদরি, সৈয়দ মারসুদ আলি আল কাদরি, অশোক তুরাখিয়া, সতনাম সিং আলুয়ালিয়া, রফিকুল আলম, মাইনোরিটি কমিশনের সচিব সাকিল আহমেদ-সহ অন্যান্য আধিকারিকরা।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন ) দিব্যা লোঘানাথন, জেলা সংখ্যালঘু আধিকারিক (ডোমা) পূর্ণিমা দে, বিধায়ক রফিকুর রহমান, জেলা ইমাম হাসানুজ্জামান প্রমুখ। ছিলেন বাকিবিল্লাহ সাহেবও। নিজ নিজ এলাকা এবং সম্প্রদায়ের সমস্যার কথা এদিন তুলে ধরেন বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা।
এছাড়াও সংখ্যালঘু এলাকার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তা, মাদ্রাসা, মক্তব, স্কুল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা, আইনজীবী, চিকিৎসক, শিল্পী-সহ নানাস্তরের প্রতিনিধিরা তাদের সমস্যা, দাবি-দাওয়া প্রভৃতির কথা জানান। সংখ্যালঘু সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক জীবন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদির ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে বা কী কী সমস্যা আছে তা শোনেন আহমদ হাসান ইমরান। পরে তিনি বলেন, ‘কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দিতে হবে। আমরা প্রশাসকদেরও বিষয়টি জানাবো।’
সিভিল সোসাইটির সঙ্গে বৈঠকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ইমাম প্রতিনিধি মাওলানা হাসানুজ্জামান বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ইমাম সাহেবদের জন্য যে ভাতার ব্যবস্থা করেছেন, তা অনেক সময় সুষ্ঠুভাবে পাচ্ছেন না বহু ইমাম। অনেক সময় ইমাম ভাতা-সংক্রান্ত ফাইল ব্লকস্তর বা জেলাস্তরে দিনের পর দিন পড়ে থাকছে।’
এ ব্যাপারে সংখ্যালঘু দফতরের আধিকারিক থেকে শুরু করে তিনি সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। নারকেলবেড়িয়া শহিদ তিতুমীর মিশনের পক্ষে সম্পাদক রবিউল হক এদিন তিতুমীরকে যথাযথ মর্যাদা দেওয়ার জন্য নারকেলবেড়িয়া ও হায়দারপুর গ্রামকে ‘হেরিটেজ ভিলেজ’ হিসেবে সাজিয়ে ঐতিহাসিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি রাখেন। ওয়াকফ সম্পত্তি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও বেআইনি দখলদার হটানোর জন্য প্রশাসনিক সাহায্যের আবেদন জানান আইনজীবী সফিউল আলম।
সূচিশিল্পী জোহর আলি মল্লিক বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সূচিশিল্পীদের সরকারি অফিসে সঠিক ব্যবহার পান না। সরকারি সাহায্য পেলে এই শিল্পের ব্যাপক উন্নতি হতে পারে।’
এছাড়াও সংখ্যালঘু উন্নয়নের সমস্যা নিয়ে বক্তব্য রাখেন ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইনোরিটিস ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের চেয়ারম্যান রফিকুল হাসান, সরকারি আইনজীবী সাহেব জামান, সোনার বাংলা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন শাবানা পারভীন প্রমুখ। জৈন সম্প্রদায়ের সুধীন্দ্র কুমার জৈন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রসেনজিৎ চৌধুরী, শিখ সম্প্রদায়ের বুটা সিং, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ফাদারা তাঁদের দাবি-দাওয়ার পাশাপাশি সরকারি পরিষেবা পাওয়ার জন্য এই ধরনের শিবির বার বার করার আহ্বান জানান। এদিন সকলের শেষে বক্তব্য রাখেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ একেএম ফারহাদ।
তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিষয়ক দফতরের সঙ্গে রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা, হজযাত্রীদের পরিষেবা, ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ, সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগম, মাইনোরিটিস কমিশনের মতো একাধিক বিভাগ। এ সব কিছুর পরিষেবা যথাযথ পেতে শুধু সমস্যার কথাই তুলে ধরলে হবে না, পদ্ধতিগত দিকগুলো জেনে প্রত্যেককে দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’
এদিনের সভার পর ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইনরিটিস কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে নেতৃত্ব দেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলাশাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী। এই বৈঠকে জেলার উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার, স্বাস্থ্য আধিকারিক ও অন্যান্য বিভাগের আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন।
মাইনোরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা উন্নয়নের বিভিন্ন দিক ও বিভাগ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা সংখ্যালঘুদের বেশকিছু অভিযোগ সম্পর্কে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলাশাসক ও অন্যান্য আধিকারিকদের অনুরোধ করেন।