উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়,সুন্দরবন : জয়নগরের মোয়ার পাশাপাশি সুন্দরবনের মধু জিআই ট্যাগ পাওয়ায় মোয়ার সঙ্গে যুক্তদের ও সুন্দরবনের মৌলেদের অভিনন্দন জানালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার জয়নগর থানার বহড়ু হাইস্কুল মাঠে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে এসে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনের পালকে দুটি নাম উঠে এলো। আমি খুশি। এতে সুন্দরবনের মধুর সুনাম বাড়বে। পাশাপাশি মৌলেদের রোজগার ও বাড়বে।
কারণ ওরা যেভাবে মৌমাছির কামড় খেয়ে জঙ্গল থেকে মধু নিয়ে আসে তাতে ওদের রোজগার বাড়লে ওদের উপকার হয়। জিআই তকমা সুন্দরবনের মধুর, খুশি মৌলেরা। পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের তত্ত্বাবধানে সুন্দরনবন ব্যাঘ্র প্রকল্প ও ২৪ পরগনা বন বিভাগের মৌলেরা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করতে যান।
জয়নগরের মোয়ার পরে এ বার জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) তকমা পায় সুন্দরবনের মধু। বছরের শুরুতেই জলপাইগুড়ির কালোনুনিয়া চাল, নদিয়া, পূর্ব বর্ধমানের টাঙ্গাইল, মুর্শিদাবাদ, বীরভূমের গরদ এবং কোরিয়াল শাড়ির সঙ্গে জিআই তকমা পেয়েছে সুন্দরবনের মধুও। পুণের একটি সংস্থাকে হারিয়ে এই তকমা মিলেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের জিআই পোর্টালে সুন্দরবনের মধুর নাম নথিভুক্ত হয়েছে ইতিমধ্যে।
পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের তত্ত্বাবধানে সুন্দরনবন ব্যাঘ্র প্রকল্প ও ২৪ পরগনা বন বিভাগের মৌলেরা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করতে যান। মাসখানেক ধরে জঙ্গলে মৌচাক খুঁজে সেখান থেকে মধু সংগ্রহ করেন। বন দফতর নির্দিষ্ট দামে তা মৌলেদের থেকে কিনে নেয়। সেই মধুই গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগম প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ‘মৌবন’ নামে বাজারজাত করছে।
এই মধু বন উন্নয়ন নিগমের বিভিন্ন কটেজ-সহ বন দফতরের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র থেকে বিক্রি করা হয়।কোভিড পরবর্তী সময়ে সুন্দরবনের মধুর চাহিদা যথেষ্ট বেড়েছে।আর এই চাহিদার কথা মাথায় রেখে মৌলেরা যাতে আরও বেশি মধু সংগ্রহ করতে উৎসাহিত হন, সে কারণে গত মরসুম থেকেই মৌলেদের বাড়তি দাম দিতে শুরু করেছে বন দফতর।
গত এপ্রিলে ৭৫টি দল মধু সংগ্রহ অভিযানে গিয়েছিল সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায়। ৫৭৬ জন মৌলে এক মাস ধরে দু’দফায় সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করেন। কেজি প্রতি ৪৫-৭০ টাকা করে বাড়তি দাম দেওয়া হয়েছে মৌলেদের। গত এপ্রিল মাসে সুন্দরবন থেকে প্রায় ২০ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করেছিলেন এই মৌলেরা।
আর এ বার জিআই তকমা মেলায় সুন্দরবনের মধুর চাহিদা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সকলেই। খুশির হাওয়া তাই মৌলেদের মধ্যে। সারা বছর ধরে মধুর মরসুমের দিকে বাড়তি রোজগারের আশায় তাকিয়ে থাকেন তাঁরা। গত বার মধুর দাম কিছুটা বাড়তি মেলায় খুশি হয়েছিলেন সকলে। আর এ বার জিআই তকমা মেলায় সেই দাম আরও বাড়বে বলেই আশা তাঁদের।
সুন্দরবনের কুলতলির দেবীপুরের মঙ্গল শাসমল, মৈপীঠের লিচু নাইয়া, লুতফর মোল্লা সহ একাধিক মৌলেরা বলেন, “ জয়নগরের মোয়ার পরে এ বারে জিআই পেয়েছে আমাদের মধু। ফলে আরও চাহিদা বাড়বে,আরও বেশি দাম পাওয়া যাবে।কিছুটা হলেও অর্থকষ্ট কমবে আমাদের।আমাদের সংগ্রহিত মধুর চাহিদা বাড়বে তাই খুব ভালোলাগছে। পাশাপাশি এই মধুর দাম সরকারি ভাবে আরো একটু বাড়ালে আমাদের রোজগার আরও বাড়বে। তবে জি আই পাওয়ায় আমরা খুশি।