ইমামা খাতুন/বিপাশা চক্রবর্তী: মাথায় হিজাব। গলায় ঝোলানো “ইফ ইউ আর প্রো ইসরাইল… ইউ আর অ্যান্টি হিউম্যানিটি” প্ল্যাকার্ড। রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছেন এক মধ্যবয়স্কা একাকিনী মহিলা। কেন এই ধরনের বেশ তাঁর? প্রশ্ন করতেই জানা গেল, ইসরাইল ফিলিস্তিনের উপর যে অমানুষিক অত্যাচার চালাচ্ছে তা কারুর অজানা নয়। শয়ে শয়ে মানুষের মৃত্যু হয়েছে, এর বেশিরভাগই শিশু-নারী বলে খবরে তিনি শুনেছেন। সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধেই তাঁর এইভাবে প্রতিবাদ।
প্রতিবাদিনীর নাম রুকসানা আলি। পূর্ব-পুরুষ গুজরাতের হলেও তার জন্ম-বিয়ে সব এই কলকাতাতেই। তার পরিবার-পরিজন কেউ গাজায় থাকে না। কিন্তু গাজায় হয়ে যাওয়া এই নৃশংসতা তাকে স্থীর হয়ে বসে থাকতে দিচ্ছে না। গাজাবাসীর জন্য প্রতিনিয়ত তাঁর অন্তরাত্মা কাঁদছে। তিনটি সন্তান, স্বামী শিয়ালদায় ব্যবসা করেন। কিন্তু গাজার ঘটনা শোনার পর থেকেই আর দীর্ঘ মাস দু-চোখের পাতা এক করতে পারেন না তিনি। তার নিজের ঘরেই শিশুসন্তান রয়েছে। তাদের মুখের দিকে তাকালেই বুকটা হু-হু করে ওঠে।
রুকসানাকে প্রশ্ন ছিল, সব সময় বুকে এই প্ল্যাকার্ড নিয়েই রাস্তায় বের হন। রুকসানার বক্তব্য, হ্যাঁ। রাস্তায় বের হওয়ার আগে তার সন্তানরাই তাকে মনে করিয়ে দেন, ‘মা তোমার আইডি কার্ডটা নিয়ে নাও’। এইভাবেই রাস্তায় হেঁটে চলেছেন তিনি।
রুকসানার আরও বক্তব্য, আমি হয়তো গাজার জন্য প্রত্যক্ষভাবে কিছু করতে পারছি না। কিন্তু এইভাবে প্রতিবাদের মাধ্যমে আমি বুঝিয়ে দিতে চাই আমি এই দুর্দশায় গাজাবাসীর পাশে আছি। এখানকার সংবাদমাধ্যমের প্রতিও রুকসানা স্বল্পবিস্তর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রকৃত ঘটনা না জেনেই খবর প্রকাশ করা হচ্ছে। তাই আমি এই পথ বেছে নিয়েছি। বেশ কিছু মানুষ আমার এক কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তবে আমার পরিবারকে আমি পাশে পেয়েছি। আমি এইভাবেই প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।
রুকসানা বলেন, পশ্চিমবঙ্গ একটি একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাজ্য। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি যে ‘আমি ফিলিস্তিনে থাকি না। আমি একজন ভারতীয়। আসল খবর একদিন না একদিন সামনে আসবেই। রুকসানা বক্তব্য, আমি একজন মানুষ। নবী সা. উম্মত। যিনি সর্বদায় মজলুমদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিতেন। সে যে কোনও ধর্মের মানুষ হোক না কেন। আর ফিলিস্তিনিরা আমার ভাই-বোন। তাই আমি বিশ্বাস করি মনুষ্যত্বের খাতিরে ওঁদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। সমাজের কাছে আমার একটা বার্তা তো পৌঁছচ্ছে। ফিলিস্তিন মা-বোনেরা একা নয়। আজ না হয় কাল ফিলিস্তিন জয় হাসিল করবেই।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া চলমান যুদ্ধে শয়ে শয়ে ফিলিস্তিনি হত্যার সাক্ষী গোটা বিশ্ব। রকেটের পর রকেট, গুলির পর গুলিতে গোটা দেশটাকে ছারখার করে দিয়েছে ইসরাইল। গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজারে। তার মধ্যে একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে নারী ও শিশু। ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের মধ্যে পড়ে গুরুতর জখম অন্তত ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি। যুদ্ধের ৩ মাস পার হলেও আগ্রাসন কমাতে নারাজ রক্তপিপাসু নেতানিয়াহু। এত কিছু দেখেও নির্বাক পুরো বিশ্ব।