নিজস্ব প্রতিবেদক: সব জল্পনার অবসান। পূর্ব ঘোষণামতোই বুধবার রাজ্য মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ ও রদবদল সেরে ফেললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন যেমন রাজ্য মন্ত্রিসভায় নতুন আট মুখের ঠাঁই হয়েছে, তেমনই বাদ পড়েছেন চার জন। নতুন মন্ত্রী হিসেবে এসেছেন বাবুল সুপ্রিয়, প্রদীপ মজুমদার, পার্থ ভৌমিক, উদয়ন গুহ, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, তাজমুল হোসেন, সত্যজিৎ বর্মন, বিপ্লব রায়চৌধুরী। এছাড়া মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো বীরবাহা হাঁসদা স্বাধীন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। আর বাদ পড়েছেন সৌমেন মহাপাত্র, রত্না দে নাগ, প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিক হুমায়ুন কবীর ও বিতর্কিত শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারী। এদিন মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের পাশাপাশি দায়িত্বেরও রদবদল ঘটানো হয়েছে। বেশ কয়েকজনের দফতর যেমন বদল করা হয়েছে, তেমনই একাধিক দফতরের দায়িত্বে থাকা বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর দায়িত্বও কাটছাঁট করা হয়েছে।
এদিন বিকেলে রাজভবনের থ্রোন হলে আট নতুন মুখ সহ মোট নয় মন্ত্রী শপথ নেন। নতুন শপথ নেওয়া মন্ত্রীদের মধ্যে বীরবাহা হাঁসদা গত বছর তৃতীয় তৃণমূল মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন।
এদিন নতুন মুখ হিসেবে শপথ নেন বাবুল সুপ্রিয়, প্রদীপ মজুমদার, পার্থ ভৌমিক, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, উদয়ন গুহ, তাজমুল হোসেন, সত্যজিৎ বর্মন, বিপ্লব রায়চৌধুরী। মুখ্যমন-ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে নতুন মন্ত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করান ভারপ্রাপ্ত রাজ্যপাল লা গণেশন। মোট তিন দফায় শপথ গ্রহণ হয়। প্রথমে পাঁচ পূর্ণমন্ত্রী শপথ গ্রহণ করেন। পরে দুই স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও সর্বশেষে দুই প্রতিমন্ত্রী শপথ নেন। বাকি আটজন বাংলা ভাষায় শপথ নিলেও বীরবাহা হাঁসদা সাঁওতালি ভাষায় শপথ গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য বাদে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। শপথগ্রহণের পরে মমতার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন বাবুল সুপ্রিয়, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, পার্থ ভৌমিকরা।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পরেই মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে দায়িত্ব পুনর্বন্টন করেন মুখ্যমন্ত্রী। শিক্ষক নিয়োগ বিতর্কে গ্রেফতার হয়ে মন্ত্রিত্ব খোয়ানো পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে থাকা তিন গুরুত্বপূর্ণ দফতর তিনজনের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। শশী পাঁজা পেয়েছেন শিল্প-বাণিজ্য দফতর। পরিষদীয় দফতর পেয়েছেন কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তথ্য-প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিকস দফতরের দায়িত্ব পেয়েছেন মন্ত্রিসভায় নবাগত বাবুল সুপ্রিয়। প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পরে পঞ্চায়েত ও গ্রামান্নোয়ন দফতর সামলাচ্ছিলেন পুলক রায়। তাঁর হাত থেকে এদিন ওই দুই দফতরের ভার সঁপে দেওয়া হয়েছে প্রদীপ মজুমদারের হাতে। এতদিন মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। আর এক প্রয়াত মন্ত্রী সাধন পান্ডের হাতে থাকা ক্রেতা সুরক্ষা দফতর দেওয়া হয়েছে কৃষি বিপনন মন্ত্রী বিপ্লব মিত্রের কাঁধে।
সাংগঠনিক কাজের জন্য মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে সৌমেন মহাপাত্রকে। তাঁর হাতে থাকা সেচ ও জলপথ দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এদিন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া পার্থ ভৌমিককে। মন্ত্রিসভায় নতুন আসা দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহের ভাগ্যে জুটেছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। এতদিন কারা দফতর সামলাচ্ছিলেন উজ্জ্বল বিশ্বাস। তাঁকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর কারা দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হয়েছেন অখিল গিরি। মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর চাকরি নিয়ে বিতর্কে জড়ানো শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর এদিন মন্ত্রিসভা থেকে ছুটি হয়েছে। তাঁর জায়গায় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদের বিধায়ক সত্যজিৎ বর্মনকে। স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসেবে বীরবাহা হাঁসদাকে দেওয়া হয়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠি ও বন দফতরের দায়িত্ব। মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের দুবারের বিধায়ক তাজিমুল হোসেনও এদিন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তাঁকে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ফিরহাদ হাকিম ও মলয় ঘটকের মতো দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর কাজের চাপ কমাতে বেশ কয়েকটি দফতরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এতদিন কলকাতার মহানাগরিকের পাশাপাশি পুর ও নগরোন্নয়ন, পরিবহন ও আবাসনের মতো তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রিত্ব সামলাচ্ছিলেন ফিরহাদ হাকিম। এদিন তাঁর হাতে শুধু পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর রাখা হয়েছে। পরিবহন দফতরের নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে। আর আবাসন দফতরের দায়িত্ব ফের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের কাঁধে সঁপে দেওয়া হয়েছে। ফিরহাদের আগে আবাসন দফতর অরূপের কাঁধেই ছিল। আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের হাতে থাকা পূর্ত দফতর দেওয়া হয়েছে পুলক রায়কে। আর শ্রম দফতরের দায়িত্ব সঁপে দেওয়া হয়েছে বেচারাম মান্নাকে।