নয়াদিল্লি, ৫ ডিসেম্বর: পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটে ধরাশায়ী হয়েছে কংগ্রেস। শুধু সান্ত্বনা তেলেঙ্গানা। ২৪-এর লোকসভা ভোটের সেমিফাইনালে কার্যত ‘হাত’ সাফ। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ। শুধু তাই নয়, আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ৫ রাজ্যে নির্বাচনের ফলপ্রকাশ হওয়ার পর থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস সহ ইন্ডিয়া জোটের অন্যান্য শরিকরা কংগ্রেসকে বিধতে শুরু করেছে। তৃণমূল সাফ জানিয়ে দিয়েছে, একের পরিবর্তে এক এই নিয়মেই এগাতে হবে কংগ্রেসকে। আসন রফা না করে ভোটে একা লড়ে ‘ভুল’ করেছে কংগ্রেস। সেই ভুল থেকে তাদের শিক্ষা নিতে হবে। সামনেই লোকসভা ভোট। হাতে সময় কম। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের কী ভূমিকা হবে তা নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, সেই পরিস্থিতিতে সবাইকে আরও একবার অবাক করে দিয়ে ফের বিদেশ সফরে রওনা দিচ্ছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি। অতীতেও দল হারলে এই ধরনের পরিস্থিতিতে কর্মী-সমর্থকদের মনোবলকে আরও হতাশ করে দিয়ে বিদেশ সফরে যেতে দেখা গিয়েছে রাহুলকে। জানা যাচ্ছে, আগামী ৮ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়শিয়া এবং ভিয়েতনাম সফরে যাচ্ছেন রাহুল। সেখান থেকে যাবেন বেলজিয়াম, নরওয়ে, ফ্রান্স। সফরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাংসদ, বিদেশের ভারতীয় বিভিন্ন সংগঠন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।
কংগ্রেস সাংসদের এই বিদেশ সফরের খবর সামনে আসতেই শোরগোল শুরু হয়ে গিয়েছে। একদিকে, সংসদে শীতকালীন অধিবেশন চলছে। অন্যদিকে, ভোটে কংগ্রেসের ভরাডুবি। এই অবস্থায় রাহুলের বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক মহলের অনেকের বক্তব্য, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিসগড়ে কংগ্রেসের হার নিয়ে এখন কংগ্রেসের যেটা সবথেকে বেশি প্রয়োজন তা হল হারের কারণ পর্যালোচনা করা। ভোটের ফলাফল কাটছেঁড়া করা। কিন্তু, সেসব না করে রাহুল ফের বিদেশে যাচ্ছেন। যা হয়তো ইন্ডয়া জোটের অনেক শরিক দল ভালচোখে দেখবে না বলে মনে করা হচ্ছে। মল্লিকার্জুন খাড়গে কংগ্রেস সভাপতি হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ৮১ বছরের এই নেতা হাইরমান্ডের উপরই নির্ভরশীল। ফলে ৮ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত রাহুলের অনুপস্থিতি বিরোধী শিবিরে প্রভাব ফেলতে শুরু করবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে এই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল জনমানসে ও ভোটারদের মধ্যে বড় ফেলবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। লোকসভার আগে কোন দল কী অবস্থানে রয়েছে সে সম্পর্কে খানিকটা আভাস পাওয়া গিয়েছে বলে তারা মনে করছে। এই রাজ্যগুলির বিধানসভা নির্বাচনের ফলই অনেকটা ইঙ্গিত দিচ্ছে কেন্দ্রের কুর্সিতে ফের কে বসতে চলেছে। এদিকে, ৫ রাজ্যে ভোটের ফল ঘোষণার পর তড়িঘড়ি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে ফোন করে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক ডাকেন খাড়গে। ৬ ডিসেম্বর বৈঠকের ঘোষণা দেওয়া হয়। আর তা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপোধ্যায় সাফ জানিয়ে দেন, তাঁকে এই বৈঠক সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি। তাছাড়া ওইদিন বৈঠক হলে তিনি উপস্থিত থাকতে পারবেন না। পরে আরও অনেক নেতা-নেত্রী ওইদিন বৈঠকে যেতে বেঁকে বসেন। নীতীশ কুমার, অখিলেশ যাদব, হেমন্ত সোরেনদের অনুপস্থিতির খবর চাওর হতেই বৈঠক স্থগিত করে দেওয়া হয়। আগামী ১৭ ডিসেম্বর পরবর্তী বৈঠকের দিন ধার্য হয়েছে বলে খবর। এই ডামাডোলের পরিস্থিতিতে রাহুলের আরও বেশি করে দেশে থাকা প্রয়োজন ছিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অনেকে বলছেন, কেন্দ্র থেকে মোদি সরকারকে সরাতে কংগ্রেস কতটা আন্তরিক তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।