পারিজাত মোল্লা: বৃহস্পতিবার রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন নিম্ন আদালত এবং কলকাতা হাইকোর্ট এর আদালত কর্মীরা কর্মবিরতি পালন করলেন।এতে ৪৩৬ কোটি টাকা সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে দাবি রেখে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দাখিল হয়েছে।
এদিন এই মামলার শুনানি পর্বে ডিভিশন বেঞ্চ জানালো -‘ডিএ নিয়ে সরকারি কর্মী সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসুক রাজ্য’।
আগামী ১৭ এপ্রিলের মধ্যে এই বৈঠক করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বকেয়া ডিএ পাওয়ার দাবিতে আন্দোলন জারি এখনও। ধর্মঘট, পেন ডাউন বা সিজ ওয়ার্ক করে প্রতিবাদের জোর আরও বাড়াচ্ছেন সরকারি কর্মীরা।এর আগে শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে রাজ্যের সিংহভাগ স্কুল অচল ছিল।
সেজন্য রাজ্য সরকারের তরফে শোকজ নোটিস পাঠানো অনেককেই। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে সারা রাজ্যে আদালত কর্মীদের কর্মবিরতিতে একপ্রকার স্তব্ধ হল রাজ্যের বিচারদানের গতি।সরকারের থেকে বকেয়া মহার্ঘভাতার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন সরকারি কর্মচারীরা।
তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আদালতের বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীরা। এর ফলে সমস্যায় পড়েছেন আইনজীবী থেকে সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা।
এই ব্যাপারে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, দিনের পর দিন এভাবে কর্মবিরতি চলতে পারে না। রাজ্যের মুখ্যসচিব ও অর্থ সচিবকে কর্মী সংগঠনের ভিতর থেকে তিনজন প্রতিনিধি বেছে নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে। রাজ্যের সঙ্গে কর্মচারীদের কী আলোচনা হল তা জানাতে হবে আগামী ১৭ এপ্রিল’।
বকেয়া ডিএ দাবিতে গত ২৭ জানুয়ারি থেকেই আন্দোলনে নেমেছেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। লাগাতার অনশন করছেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ এবং বকেয়া মহার্ঘ ভাতার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। প্রাপ্য ডিএ না পাওয়ায় আন্দোলনকারীরা কর্মবিরতির ডাকও দিয়েছেন। এর জন্য নানা সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের ক্ষতি হচ্ছে। তার প্রতিবাদেই হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়।
এদিন সেই মামলার শুনানিতে হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, ‘আগামী ১৭ এপ্রিল কর্মচারী সংগঠনের তিন সদস্যের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে নবান্নকে। সেই আলোচনায় কী ঠিক হল তা আদালতকে জানাতে হবে’। ডিভিশন বেঞ্চ মনে করছে , ‘ ডিএ সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার’।কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া ডিএ আদায়ের আন্দোলন এবার বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে দিল্লি নিয়ে যেতে চলেছেন আন্দোলনকারীরা।
আগামী ১০-১১ এপ্রিল দিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্না কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। ওই দু’দিন দিল্লিতে থেকে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের কাছে ডেপুটেশন দেবেন তাঁরা বলে জানা গেছে। মোট ৫০০ জন সরকারি কর্মচারী এই ধর্না কর্মসূচিতে যোগ দিতে দিল্লিতে যাচ্ছেন বিভিন্ন সুত্রে প্রকাশ। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বাজেট অধিবেশনের দিন ৩ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা-র ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
বলা হয়েছিল, ১ মার্চ থেকে ৬ শতাংশ হারে ডিএ পাবেন কর্মীরা। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ৩ শতাংশ হারে ডিএ বাড়িয়েছিল রাজ্য সরকার। এ বারের বাজেটে আরও ৩ শতাংশ যুক্ত হয়েছে। তাই মার্চ মাস থেকে ৬ শতাংশ হারে ডিএ পাবেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা।