বিশেষ প্রতিবেদকঃ কলকাতার কোনও প্রিন্ট মিডিয়া বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় খবরটি প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া এবং দেশের বেশকিছু দিল্লি-কেন্দ্রিক বিখ্যাত নিউজ পোর্টাল এই খবরটিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে দ্য ওয়্যার, দ্য কুইন্ট, ক্ল্যারিয়ন, মাকতুব। এ ছাড়া দৈনিক ‘পুবের কলম’-এও এ সম্পর্কে বারুইপুরে ভিক্টিম পরিবারগুলির সদস্য-সহ মানবাধিকার কর্মীদের এক বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদানের খবর ছোট করে প্রকাশিত হয়েছিল। এমনকী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী মুসলিমদের সংগঠন আইএএমসি বা ইন্ডিয়ান আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিলের পোর্টালেও বারুইপুরের খবরটি প্রকাশিত হয়েছে।
খবরটি হচ্ছে, চারজন তরতাজা সংখ্যালঘু যুবককে বিভিন্ন গ্রাম থেকে তুলে নিয়ে যায় বারুইপুর থানা ও মহেশতলা থানা। এরা হলেন ১. জিয়াউল লস্কর (৩৬), ২. আবদুর রাজ্জাক (৩৪), ৩. সইদুল মুন্সি (৩৩), ৪. আকবর খান (৪০)। এই চারজনকেই পুলিশ পরে আদালতে তুলে বারুইপুরে জেল হাজতে পাঠায়।
পুলিশ এদের সবাইকেই একই অভিযোগে গ্রেফতার করে। পুলিশের নাকি সন্দেহ হয় এরা ডাকাতি করবে! যা সাধারণত পুলিশ বলে থাকে, এরা কিন্তু কেউ ডাকাতির জন্য জড়ো হওয়া অবস্থায় কিংবা ষড়যন্ত্র করার সময় গ্রেফতার করেননি। তিনজনকে বাড়ি থেকেই তুলে এনেছে। গ্রেফতারকৃতরা পরস্পরকে চেনে বলে কোনও পক্ষই দাবি করেনি। এই মুসলিম তরুণরা যে ডাকাতি করবে, তা বারুইপুর ও মহেশতলা থানা কোন গোপন সূত্রে জানল, সেই তথ্যও পুলিশ ফাঁস করেনি। এই চারজন মুসলিম তরুণই মারা যায় পর পর। মাত্র ৬ দিনের মধ্যে রক্তাক্ত লাশ হয়ে বেরিয়ে আসে।
যে তথ্য জানা যাচ্ছে, আবদুর রাজ্জাককে পাঠানো হয় বারুইপুর সাব-ডিভিশনাল হসপিটালে। পুলিশের মতে, সে মারা যায় ২৯ জুলাই। আকবর খান মারা যায় ১ আগস্ট। জিয়াউল লস্করের নিহত হওয়ার তারিখ হল ২ আগস্ট, সইদুল মুন্সিকে পুলিশ মৃত বলছে ৩ আগস্ট। অর্থাৎ মাত্র ৬ দিনের মধ্যে বারুইপুর জেল থেকে ভায়া হাসপাতাল এরা লাশে পরিণত হয়।
জিয়াউল, রাজ্জাক ও আকবরকে তুলে নেয় বারুইপুর থানার পুলিশ। গ্রেফতারকারীরা সিভিল ড্রেসে ছিল বলেও অভিযোগ। আর সইদুল মুন্সিকে তুলে নিয়ে যায় মহেশতলা থানার পুলিশ। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে, জিয়াউল লস্কর, তাঁর বাড়ি ঘুটিয়ারি শরীফ, জীবনতলা থানার সুভাষপল্লি এলাকায়।
২৫ জুলাই, ২০২২ তারিখে সে ঘর থেকে বন্ধুর বাড়ি বারুইপুরে যাচ্ছে বলে বেরিয়েছিল। পুলিশ তাকে ও তার সঙ্গে ২ জনকে ২৬ জুলাই ধরে নিয়ে আসে। সেই দু’জনের নাম সুরজিৎ হালদার ও রবিউল হালদার।বারুইপুর থানা থেকে তাকে আদালতের মাধ্যমে বারুইপুর কারাগারে পাঠানো হয়।জিয়াউল ছিল একজন অটো চালক।
জিয়াউল লস্করের পরিবার থেকে বলছে, তাকে ধরার পর বারুইপুর পুলিশ স্টেশনের ভিতরে নৃশংসভাবে মারা হয়। পরের দিনও বারুইপুর পুলিশ স্টেশনে তার উপর নির্মম প্রহার চলে। এরপর জিয়াউলকে বারুইপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। নিহত হওয়ার তিনদিন আগে সে তার স্ত্রী মারুফা বিবির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। তার বড় বোন সাবেরা জানায়, তিনদিন আগে জিয়াউলের স্ত্রী খুব অল্প সময়ের জন্য তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারে, সেইসময় জিয়াউল অঝোরে কাঁদছিল। যে জানায় তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চলছে। পুলিশ বলছে, সে নাকি ড্রাগে আসক্ত ছিল। সাবেরা সাংবাদিকদের বলেন, যদি জিয়াউল ড্রাগ আসক্ত থাকে তবে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠাতে হবে। কিন্তু তাকে নির্মমভাবে বারুইপুর থানায় এবং কারাগারে অত্যাচার করার অধিকার তো নেই। কারাগারে সে ছিল বিচার বিভাগীয় হেফাজতে। তার সারাদেহে অত্যাচারের দাগ ছিল। জিয়াউলের পরিবার বলছে, আসলে সে ১ আগস্ট মারা যায়। কিন্তু সরকারিভাবে ২ আগস্ট তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। অ্যাডভোকেট তনয় ভট্টাচার্য যিনি সাবেরার আইনজীবী, তিনি বলেন, জিয়াউলের সঙ্গে সুরজিৎ হালদার ও রবিউল হালদারকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, এই দু’জন জানায় জিয়াউল প্রবল অত্যাচারে প্রাণ হারায়। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও তাঁরা এই বলে জামিনের আবেদন করে যে, বারুইপুর জেলে থাকলে তাঁরাও হয়তো জুডিশিয়াল কাস্টডিতেই মারা যাবে। মাজিস্ট্রেট তাদেরকে জামিন প্রদান করেন। মাজিস্ট্রেট তাঁর আদেশে বলেন, জিয়াউলের মৃতদেহের আবারও ‘ইনকোয়েস্ট’ হতে হবে। আর এইসময় একজন মাজিস্ট্রেট এবং জিয়াউলের পরিবারের দু’জন সদস্যও উপস্থিত থাকবেন। তিনি বারুইপুর সংশোধনাগারের সুপারিনটেনডেন্টকেও একটি আদেশ দিয়ে বলেন, এই ব্যক্তি কোর্টের অর্ডার আগেও ঠিকমতো পালন করেনি। পরে এই সম্পর্কে সাবেরা বিবি এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে আমার ভাইয়ের ‘ইনকোয়েস্ট’ প্রক্রিয়া হয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ মতো এইসময় কোনও ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন না এবং আমাদের পরিবারের সদস্যদেরও উপস্থিত থাকতে দেয়নি। শুধুমাত্র আমাদেরকে ভাইয়ের দেহ চিহ্নিত করতে বলা হয়। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ মানা হয়নি।
প্রশ্ন উঠেছে, কেন বিচারকের আদেশকে এইভাবে হেলায় অবহেলা করা হয়? আর এর পিছনে কার বা কাদের হাত রয়েছে?পরদিন জিয়াউলের স্ত্রী থানায় গেলে জানতে পারেন, ২৫ জুলাই রাতে জিয়াউল-সহ তার দুই বন্ধুকে বন্ধুর বাড়ি রাসমাঠ থেকে বেধড়ক মারতে মারতে তুলে নিয়ে গিয়েছে বারুইপুর থানার পুলিশ।
২৬ তারিখ বারুইপুর কোর্টে আনা হলে দেখা যায় তিনি খোঁড়াচ্ছিলেন। সন্দেহজনক ডাকাতির মামলা দেওয়া হয় তাঁদেরও বিরুদ্ধে। বিচারে ২৮ দিন জেল হেফাজত হলে তাঁদের বারুইপুর জেলে নিয়ে যাওয়া হয়।মারুফা জানান, তিনি ২৭ তারিখ জিয়াউলের সঙ্গে বারুইপুর জেলে দেখা করতে যান।
সেই সময় তাঁর স্বামী জানান যে, তিনি সুস্থ আছেন। ২৮ জুলাই জিয়াউল জেল থেকে ফোন করে স্ত্রীকে জানান, তিন হাজার টাকা পাঠাতে হবে। এই টাকা দিলে জেলে ভালোভাবে থাকা যাবে। তাঁর স্ত্রী সেদিনই দু’দফায় তাকে দু’হাজার টাকা পাঠান। তারপর থেকে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ হয়নি।
মারুফা বিবি জানান, ২ আগস্ট ঘুঁটিয়ারি ফাঁড়ির পুলিশ জিয়াউলের বাড়িতে খবর দেয় যে, ৩১ জুলাই জিয়াউল অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তাকে বারুইপুর সুপারস্পেশালিটি হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে সে ১ আগস্ট রাতে মারা গিয়েছে।
অভিযোগ, জিয়াউলের এই অসুস্থতার কোনও খবরই পরিবারকে জানানো হয়নি। প্রথমে পরিবারের লোকজনকে মৃতদেহ দেখতে দেওয়া হচ্ছিল না। নানান টালবাহানার পর পরিবার মৃতদেহ দেখার সুযোগ পায়।
অভিযোগ, জিয়াউলের গায়ে অজস্র মারের কালশিটের দাগ ছিল। জিয়াউলের সঙ্গে একই মামলায় ধৃত অন্য দু’জনের ৩১ জুলাই জামিন হয়েছে। জামিনপ্রাপ্তরা পুলিশের নির্যাতনের কথা বাইরে প্রকাশ করেন। এ নিয়ে বারুইপুর আদালতে সাক্ষীও দেন তাঁরা। মৃতের স্ত্রী মারুফা বিবি বলেন, তাঁরা জানতে পারেন, ২৭ তারিখ রাতে জিয়াউল অসুস্থ হয়ে পড়লে ২৮ জুলাই তাঁকে জেল হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর জিয়াউলের তেমন কোনও চিকিৎসা হয়নি। শরীরে গরম জল ঢালা হয়েছিল বলেও অভিযোগ। লাশের ছবিতে অত্যাচারের দগদগে চিহ্নও রয়েছে। জিয়াউলের পরিবার জিয়াউলকে জেলে পিটিয়ে মারার অভিযোগে কোর্টে মামলা দায়ের করেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আইনজীবী বলেন, সেটা গরম জল না অ্যাসিড তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
যে প্রশ্ন উঠছে, পুলিশ লিখিত বিবৃতি দিয়ে দাবি করছে মারা হয়নি, তবে গায়ে মারের দাগ কেন? মৃতের পরিবারের রোজগারের কেউ নেই, মেয়ে ও ছেলে নিয়ে কীভাবে সংসার চালাবেন মারুফা?
মৃতের নাম আবদুর রাজ্জাক দেওয়ান, বাড়ি, দক্ষিণ সাহাপুর, ডাক, ছোয়ানি, হাড়দহ, থানা- বারুইপুর, জেলা-দক্ষিণ ২৪ পরগনা।তিনি পেশায় মুরগি ব্যবসায়ী। ব্যাবসার কাজে বিহারে থাকতেন। এবারের ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে ফিরেছিলেন।
পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, গত ২৪ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ বারুইপুর থানার চার-পাঁচজন পুলিশ সাধারণ পোশাকে হঠাৎ বাড়ি তাকে থেকে তুলে নিয়ে যায়।
মৃতের স্ত্রী অভিযোগ করেন, বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে পুলিশ প্রবেশ করেছিল। কেন থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তার জবাব দেওয়া হয়নি। কোনও কাগজপত্রও দেয়নি পুলিশ।
অভিযোগ, আবদুর রাজ্জাককে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ বলেছে, ‘ওপর থেকে চাপ আছে’ ধরে থানায় নিয়ে যেতে না পারলে ‘চাকরি থাকবে না’। পরেরদিন তাঁকে বারুইপুর কোর্টে তোলা হলে জানা যায়, ধৃতের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৯৯, ৪০২ ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশে ১৪ দিনের জেল হেফাজত হয়। জানা গিয়েছে, ২৭ জুলাই আবদুরের স্ত্রী বারুইপুর জেলে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে যান।
সেই সময় আবদুর রাজ্জাক সুস্থ ছিল। তবে ৩০ তারিখে দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে বারুইপুর থানার গ্রামীণ পুলিশ রাজ্জাকের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজনকে জানায় যে, আবদুর রাজ্জাক অসুস্থ, তাঁকে বারুইপুর হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় সে মারা গিয়েছে। মৃতের স্ত্রী সোহানা বিবি জানান, ‘বারুইপুর হাসপাতালেরে মর্গে দেহ দেখতে পাই, সেই সময় মৃতদেহের গায়ে অজস্র কালশিটের দাগ ছিল। মুখে রক্ত ছিল।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, মৃত্যুর কারণ পুলিশকে জিজ্ঞেস করলে পুলিশকর্মীরা দুর্ব্যবহার করে তাদের বের করে দেয়। ময়নাতদন্ত হওয়ার সময় বাড়ির কেউকে খবর দেওয়া হয়নি।
যে প্রশ্ন উঠছে, জেল হেফাজতে থাকা ব্যক্তির গায়ে মারের দাগ থাকবে কেন? নিহতের স্ত্রী জানান, পুলিশ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় বলেছিল, থানা গিয়ে সে যে বিহারে থাকে এবং ঈদে বাড়ি এসেছে প্রমাণ হিসাবে ট্রেনের টিকিট দেখালে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে কেন মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হল?
মানবাধিকার সংগঠন ও বাড়ির লোকের দাবি, থানাতেই আবদুর রাজ্জাকের উপর বর্বরোচিত নির্যাতন করা হয়। তারপর কারাগারেও তাকে বেধড়ক মারা হয়। ২৫ তারিখ জেল থেকে ফোন করে রাজ্জাক ২০০০ টাকা চেয়েছিল, সেই টাকা দিলে নাকি ভালো খাবার ও সুবিধা পাওয়া যাবে।
মৃতের স্ত্রী সেই দাবিমত টাকাও দিয়েছিল। জেল থেকে ফোন করতে কে বা কারা তাকে সুযোগ দিয়েছিল এবং টাকা পাঠাতে বলেছিল?
নিহতের নাম সইদুল মুন্সি। বাড়ি মহেশতলা সন্তোষপুর। পুলিশ সইদুলকে গত ২৫ জুলাই বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। আদালতে তাঁর জেল হেফাজত হলে বারুইপুর জেলে নিয়ে যাওয়া হয়।পরিবারের দাবি, তাঁরা ২৭ জুলাই যখন সইদুলের সঙ্গে দেখা করেন, তখন সে সুস্থ ছিল।
পরে জানা যায়, ১ আগস্ট সইদুলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তির বিষয়ে পরিবারের লোকজনকে কোনও খবর দেওয়া হয়নি। ২ আগস্ট পরিবারকে জানানো হয়। পরিবার বারুইপুর হাসপাতালে গিয়ে দেখে, বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালের বাথরুমে উলঙ্গ অবস্থায় মূত্রের উপর ফেলে রাখা হয়েছে সইদুলকে।
তাঁর সারাপিঠে মারের দাগ ছিল বলেও অভিযোগ। চিকিৎসার জন্য তাঁরা বারবার অনুরোধ করলেও কোনও কিছুই করা হয়নি। অবস্থা গুরুতর বলে ডাক্তার আইসিইউতে ভর্তি করতে নির্দেশ দিয়েছিল। সেই সময় বারুইপুর হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি ছিল না। পরিবরের অভিযোগ, তাঁরা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার কথা বললেও পুলিশ তা খারিজ করে দেয়। কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়।
যে প্রশ্ন উঠছে, জেল হেফাজতে থাকা ব্যক্তিকে মারার অভিযোগ উঠবে কেন? যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে পরিবারকে কেন সঠিক সময়ে খবর দেওয়া হল না?
চিকিৎসার কেন বন্দোবস্ত করা হল না? পরিবার বাইরে কোথাও চিকিৎসার প্রস্তাব দিলে কেন পুলিশ তা খারিজ করল? জেলা পুলিশ দাবি করছে মারা হয়নি, তবে কেন মারা গেল? তাহলে কি জেলের ভিতরেই জেল কর্তৃপক্ষ সইদুলের উপরও নির্যাতন করেছিল?
নিহতের নাম আকবর খান। বাড়ি বিষ্ণুপুর থানার আমতলায়। পরিবার দাবি করেছে, বেশ কয়েকদিন ধরে আকবর খানের কোনও খবর তাঁদের জানা ছিল না। পুলিশ যে তাঁকে ধরে নিয়ে গেছে, সে-ব্যাপারে পরিবারের কাউকেই কোনও খবর দেওয়া হয়নি। গত ২ আগস্ট বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ বাড়িতে খবর দেয় যে, সে মারা গেছে।
পরিবারের অভিযোগ, সারা শরীরে মারের দাগ ছিল। পরিবারের আরও অভিযোগ, মৃতদেহ আনতে গেলে পুলিশ জানায় টাকা দিলে তবেই মৃতদেহ পরিবারকে দেওয়া হবে।
মানাবাধিকার সংগঠন ও আইনজীবীরা যা বলছে-
এ নিয়ে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, মৃত বন্দিদের আলাদা থানার পুলিশ তুলে নিয়ে গেলেও তাদের সবাইকেই সন্দেহজনক ডাকাতির মামলা দেওয়া হয়। জেলে পরিবারের লোকজন দেখা করতে গেলে সব বন্দিই সুস্থ ছিল। এরা অসুস্থ হয়ে পড়লেও বাড়ির লোকজনকে সেইদিন কোনও খবর দেওয়া হয়নি। মৃত্যুর একদিন বা দু’দিন পরে গিয়ে পুলিশ বাড়িতে খবর দেয়। চারটি মৃতদেহেই বীভৎস মার-কালশিটের দাগ ছিল। চারজনই কার্যত বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।
এপিডিআর দাবি করেছে, অবিলম্বে এই গোটা ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত করতে হবে এবং দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।
মৃতদের পরিবারকে কমপক্ষে ২০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। জেলবন্দিদের মানবাধিকার হরণ করা চলবে না।