পারিজাত মোল্লা : আজ অর্থাৎ সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে ডিভিশন বেঞ্চে দারস্থ হতে চলেছে গ্রুপ ডি নিয়োগ মামলায় চাকরি বাতিল হওয়া প্রার্থীদের একাংশ।গত বৃহস্পতিবার গ্রুপ ডি নিয়োগের ক্ষেত্রে ওএমআর শিট বিকৃতির মামলার কড়া নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। ২ হাজার ৮১৯ জনের চাকরির সুপারিশ বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার ১২টার মধ্যেই স্কুল সার্ভিস কমিশনকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশে আশঙ্কায় প্যানেলভুক্ত চাকরি প্রাপকেরা। তাই শুক্রবার সকালেই তড়িঘড়ি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে জরুরি ভিত্তিতে মামলা করার অনুমতি চাইলেন চাকরি প্রাপকেরা। যদিও জরুরি ভিত্তিতে মামলার অনুমতি ফিরিয়ে দিয়েছে হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ডিভিশন বেঞ্চ। মামলা দায়ের করে সোমবার আসার পরামর্শ ডিভিশন বেঞ্চের। ওইদিন সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। ওএমআর শিট বিকৃতি নিয়ে ওয়েবসাইটে নাম দেওয়ার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে জরুরি ভিত্তিতে শুনানির আবেদন জানানো হয়েছিল।
মামলা ফাইল করার অনুমতি চেয়ে গত শুক্রবার বেলা ১২টার আগে শুনানির আবেদন জানানো হয়েছিল। তবে সেই আবেদন ফিরিয়ে দিয়েছে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
উল্লেখ্য , গ্রুপ ডি নিয়োগে ওএমআর শিট বিকৃতি মামলার তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। গাজিয়াবাদ থেকে যে ওএমআর শিটগুলি উদ্ধার হয়েছিল, সেগুলি কমিশনের হাতে তুলে দিয়েছিল সিবিআই। স্কুল সার্ভিস কমিশনও গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চে জানিয়েছিল, -‘ তারাও যাচাই করে দেখেছে ২,৮১৯টি ওএমআর শিটে গরমিল রয়েছে’। সেই কথা শুনে বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছিলেন, ওই চাকরির সুপারিশপত্রগুলি বাতিল করার জন্য।
গত বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে নজিরবিহীন নির্দেশ জারি করা হয়েছে। এসএসসি গ্রুপ ডি নিয়োগ মামলায় ওএমআর শিট বিকৃত করে নিয়োগ পাওয়া ২৮১৯ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ।
উক্ত সিঙ্গেল বেঞ্চে ওএমআর শিট বিকৃত করে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে মামলার শুনানি চলে। গত বৃহস্পতিবার এজলাসে মামলার শুনানি পর্বে বিচারপতি মোট নিয়োগের সংখ্যা জানতে চান। এর প্রতুত্তরে এসএসসি জানায়, -‘৬৮৯৯ জনকে গ্রুপ ডি-তে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল’।এরপর সুপারিশ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হয় সিঙ্গেল বেঞ্চের তরফে ।
২৮১৯ জনের প্রসঙ্গ উঠে আসে শুনানি পর্বে। এরপরেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, -‘এঁদের চাকরি বাতিল করতে হবে’।এর পাশাপাশি এই ২৮১৯ জনের নাম, বাবার নাম, ঠিকানা-সহ পূর্ণাঙ্গ তালিকা শুক্রবারের মধ্যে এসএসসির ওয়েবসাইটে আপলোড করে দিতে হবে বলে আদেশ জারি করা হয়েছে ।
এর আগে এসএলএসটি নিয়োগ দুর্নীতির ক্ষেত্রেও একইভাবে চুরি করে চাকরি পাওয়াদের নাম, বাবার নাম, ঠিকানা-সহ তালিকা ওয়েবসাইটে দিতে বলেছিল হাইকোর্ট। হাইকোর্ট জানিয়েছে , এই তথ্যগুলি জনসমক্ষে জানানো না হলে একই নামের অনেকে থাকতে পারেন। তাঁদের মধ্যে যাঁরা নির্দোষ তাঁদের সামাজিক সম্মান যাবে।
তাই স্পষ্ট হওয়া দরকার বিষয়টি প্রকাশ্যে না এলে’। গ্রুপ ডি-র নিয়োগ প্যানেলের ওয়েটিং লিস্টে থাকা অনেকের ওএমআর শিট বিকৃত করা হয়েছে।মোট ২ হাজার ৮১৯ জনের চাকরির সুপারিশ বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ, -‘ যারা কারচুপি করেছে তাদের প্রত্যেকের চাকরির সুপারিশ বাতিল করতে হবে। এদের তালিকা আবার নতুন করে আপলোড করতে হবে। নোটিস দিতে হবে। সেই সঙ্গে ৬ হাজার ৯৮৮ জন চাকরিপ্রার্থী, যারা অপেক্ষারত রয়েছেন, তাঁদের তালিকা থেকে ওই শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। অপেক্ষমান তালিকায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কারও ওএমআর শিটে যদি পরবর্তী সময়ে বিকৃতি পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ‘।,
উল্লেখ্য, এই গ্রুপ ডি নিয়োগ মামলায় ওএমআর শিট কারচুপি সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। ইতিপূর্বে সিবিআইয়ের তরফে হাইকোর্টে জানানো হয়েছিল ওএমআর শিট কারচুপির কথা। সিবিআই এর আধিকারিকরা উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ থেকে ওএমআর শিটগুলি উদ্ধার করেছেন। সিবিআই যে ওএমআর শিটগুলি দিয়েছে, সেই সবগুলি পরীক্ষা করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। গত বৃহস্পতিবার এসএসসির তরফে আদালতে জানানো হয়, প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ওএমআর শিটের মধ্যে ২ হাজার ৮১৯টি ওএমআর শিটে গরমিল হয়েছে বলে দেখা গিয়েছে। এই কথা শুনে বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় এসএসসিকে বলেন, ‘যদি আপনারা পরীক্ষা করে দেখতে পান কোনও কারচুপি করা হয়েছে, তাহলে পদক্ষেপ করতেই হবে’।
যেহেতু এসএসসি কেবল নিয়োগের সুপারিশ করে, তাই গত শুক্রবার দুপুর ১২ টার মধ্যে সেই চাকরির সুপারিশ বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি মধ্য শিক্ষা পর্ষদকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে সেই নিয়োগ বাতিল করা হয়। আদালত সুত্রে প্রকাশ, স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে আদালতকে শুক্রবার দুপুরের মধ্যে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে, -‘ সিবিআই এর সাথে কোন কোন ওএমআর শিটগুলিকে মিল পাওয়া গিয়েছে’। শুক্রবার দ্রুত শুনানি চেয়ে ডিভিশন বেঞ্চে চাকরিপ্রার্থীরা গেলেও আজ অর্থাৎ সোমবার এই মামলা দাখিল করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।আজই মামলা যেতে পারে ডিভিশন বেঞ্চে।