পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক:উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই বুলডোজার রাষ্ট্রশক্তির নির্লজ্জ প্রকাশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবৈধ নির্মাণ নির্মূল করা, অপরাধীদের শায়েস্তা করার নামে যথেচ্ছ বুলডোজার চালানো হয়েছে নাগরিক অধিকারের উপর। এই বুলডোজার নীতি ক্রমশই পুরো দেশে ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। তার মাসুল দিতে হচ্ছে সমাজের এক শ্রেণীর মানুষদের। উত্তরপ্রদেশের পাশে দিল্লিতেও ছড়িয়ে পড়েছে বুলডোজারের আতঙ্ক।
১৯ শে রমযানের সেহেরির পর যখন গভীর ঘুমে আছন্ন এলাকাবাসী , ঠিক সেই মুহূর্তে অবৈধভাবে নির্মাণের অভিযোগে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল দিল্লির ২৫০ বছর পুরনো এক মসজিদ সহ মাদ্রাসা। দিল্লির বাংলা মার্কেট সংলগ্ন মসজিদের ফায়জুল কুরআন দারুল উলুম মাদ্রাসায় চালানো হয়েছে বুলডোজার। ভেঙে দেওয়া হয়েছে মসজিদের নবনির্মিত দেওয়াল ও দুটি ঘর। কেন্দ্রের অধীনস্থ ভূমি ও উন্নয়ন দফতরের পক্ষ থেকে এই বুলডোজার চালানো হয়েছে বলেই জানা গেছে। উপস্থিত ছিল দিল্লি পুলিশ ও প্যারা মিলিটারি ফোর্স। এলাকার বাসিন্দারা এসে যাতে প্রশাসনের কাজে বাধা সৃষ্টি না করেন, সেজন্য মসজিদের চারপাশে ভোর রাত থেকে ঘিরে রেখেছিল দিল্লি পুলিশ। অন্যদিকে কোনও তথ্য ও নোটিশ ছাড়াই বেআইনিভাবে মসজিদ ভাঙা হয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ভেঙে দেওয়া মসজিদটি ২৫০ বছরের পুরনো। কয়েক মাস আগেই মসজিদের একাংশ রমযান উপলক্ষে মেরামত করা হয়েছিল। বানানো হয়েছিল দুটি নতুন মাদ্রাসা ঘরও। ছাত্র এবং মসজিদের ইমাম সহ মাদ্রাসায় কর্মরত বেশ কয়েক জন ওই বাড়িতে থাকতো বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে ভূমি ও উন্নয়ন দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কারোর অনুমতি ছাড়াই মসজিদের নতুন কাঠামো তৈরি হয়েছে। জায়গাটা মসজিদ কর্তৃপক্ষের নয় বলেও দাবি করে তারা। তারপরেই মঙ্গলবার নবনির্মিত ওই দেওয়াল ও নতুন দুটি ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাপ্রসঙ্গে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা মাহমুদ মাদানী বিশিষ্ট মুসলিমদের একটি টিম নিয়ে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। মুসলিমদের যাবতীয় সমস্য ও সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনাও করেছেন। তারপরেও মসজিদ, মাদ্রাসা, মাজার কেন ভাঙা হচ্ছে?
বেশ কয়েকদিন আগে দিল্লিতে ফুটপাথ চওড়া করার নামে দুটি ঐতিহাসিক মাজার ভেঙে ফেলা হয়েছে। মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন থাকাকালীন কি ভাবে ওই মাজারের ওপর বুলডোজার চালিয়েছে দিল্লি পুলিশ, সেই নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
বুলডোজার মানে রাস্তা সমান করার এবং গাছ পাথর ইত্যাদি সরিয়ে দেওয়ার যন্ত্রবিশেষ। বুলডোজার মানে বিশাল ইমারত, কাঠামো নিমেষে ধূলিসাৎ করার যন্ত্রবিশেষ। তবে বর্তমান সময়ে বুলডোজার আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওয়াকিফহাল মহল বর্তমান সময়কে বুলডোজার রাজ বলেও আখ্যায়িত করেছে। রাষ্ট্রশক্তির নিপীড়নের নতুন হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বুলডোজার। কোনো নাগরিক শাসকের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেই বুলডোজার দিয়ে তার বাড়ি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নিমেষে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে দিল্লির মসজিদ ও মাদ্রাসা ভাঙা ঘটনায় নিরব রয়েছেন দিল্লির আম আদমি পার্টির সরকার তথা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এমনকি আপের কোনও বিধায়ক কিংবা কাউন্সিলার এই বুলডোজার বাধা দেওয়া তো দূরের কথা ঘটনাস্থলেও আসেনি।
মঙ্গলবার সেহরির পর মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক ও মুসল্লিরা দেখতে পান লাঠি বন্দুক হাতে এলাকা ঘিরে রেখেছে দিল্লি পুলিশ ও প্যারা মিলিটারি ফোর্স। আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বীরবিক্রমে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল মুসলিমদের মুষ্টিচাল ও জুম্মার নমাযের তিল তিল করে সংগ্রহ করা অর্থ দিয়ে তৈরি ইবাদত খানা ও তাদের শিক্ষালয়।