পারিজাত মোল্লা : মামলার পরিপেক্ষিতে বিচারপতিদের নানান পর্যবেক্ষণ উঠে আসে। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু শিক্ষক বদলি নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছেন। যার জেরে রাজ্য সরকার আদালতের সহমতে নুতন বদলি নীতি আনে শিক্ষকদের জন্য।
স্কুলের ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত নিয়েও রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতরকে পরামর্শ দিয়েছেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু । তবে এরই মাঝে দুই শিক্ষকের বদলির অনুমতি দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের আরেক এক বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়। যদিও মামলার আবেদন অনুযায়ী বিচারপতি এই নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালত সুত্রে জানা গেছে, ওই দুই শিক্ষকের আবেদন ১৪ বার বাতিল হয়েছিল। অবশেষে তারা বদলি পেলেন কলকাতা হাইকোর্টের তরফে।মালদহ জেলার ভাদো বিএস হাইস্কুলের কর্মশিক্ষা-শরীরশিক্ষা এবং বাংলার শিক্ষক ২০১৩ সালের এসএলএসটি নিয়োগে চাকরি পান। তারা হলেন শরিফুল ইসলাম ও গৌতম প্রামাণিক। তারা দুজনেই বাড়ির কাছাকাছি বদলি চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন।
কিন্তু স্কুলের পরিচালন কমিটি দুই শিক্ষকের বদলির আবেদন করার জন্য যে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা এনওসি দরকার, তা তাঁদের দিচ্ছিল না। নিয়ম অনুযায়ী কোনও শিক্ষক স্কুলে ৫ বছর চাকরি করার পর তিনি বদলির আবেদন করলে স্কুল কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট স্কুল তাকে বদলির এনওসি দিয়ে দেবে। কিন্ত সেই নিয়ম না মানার অভিযোগ উঠেছিল পরিচালন কমিটির বিরুদ্ধে ।
দাবি, ওই দুই শিক্ষকের থেকে যারা অনেক পরে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাদের বদলির জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ এনওসি দিয়েছে। অথচ এই দুই শিক্ষকের বারবার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
জানা গিয়েছে, সরকারি নিয়ম বা নির্দেশ না মেনেই এই কর্মশিক্ষা-শারীর শিক্ষা এবং বাংলার শিক্ষক মোট ১৪ বার আবেদন করলেও স্কুল বারবার সেই আবেদন বাতিল করে দেয়।
এ বিষয়ে মালদার জেলার স্কুল পরিদর্শক, স্কুল শিক্ষা দফতর, এসএসসি এবং সর্বশেষে কমিশনার অফ স্কুল এডুকেশনের কাছেও আবেদন জানিয়ে কোনও সুরাহা না মেলায় কলকাতা হাইকোর্টে দ্বারে আসে দুই শিক্ষক। প্রতিদিন ১২০ কিলোমিটার যাতায়াত করা দুই শিক্ষকের বদলির অনুমতি দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়। সোমবার এই মামলার শুনানি চলাকালীন
আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরী জানান, -‘ স্কুল কর্তৃপক্ষ অন্যায় ভাবে যারা জুনিয়র সহশিক্ষক তাদের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দিয়েছে বেআইনিভাবে। অথচ সিনিয়র শিক্ষকদের এনএসসি দেওয়ার ক্ষেত্রে বারবার স্কুলে শিক্ষকের ঘাটতি দেখিয়েছে প্রধান শিক্ষক। যা বদলির নিয়মের পরিপন্থী’।
স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কার্যত স্বজনপোষণের অভিযোগ এনেছেন আইনজীবী।
এদিন শুনানি শেষে বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায় নির্দেশ দেন, -‘অবিলম্বে কমিশনার অফ স্কুল এডুকেশন পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখবে যে কেন শুধুমাত্র এই দু’জন শিক্ষকের বদলি নিয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে’। বাড়ি থেকে স্কুলে যাতায়ার করতে রোজ পাড়ি দিতে হয় ১২০ কিলোমিটার (যাওয়া-আসার সর্বমোট দূরত্ব) এই লং জার্নি থেকে রেহাই পেতে বদলির আবেদন জানিয়েছিলেন মালদার একটি সরকারি স্কুলের দুই শিক্ষক । একবার কিংবা দু’বার নয়, পরপর ১৪ বার এই আবেদন করেছিলেন তাঁরা । তারপরও সেই আবেদন গ্রাহ্য করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ।
বাধ্য হয়েই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই দুই শিক্ষক । সোমবার দুই শিক্ষকেরই আবেদন খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায় ।