আতঙ্কের নতুন নাম জিকা ভাইরাস। করোনা– ডেঙ্গু– ম্যালেরিয়ার পরে এখন চোখ রাঙাচ্ছে এই ভাইরাস। উত্তরপ্রদেশ– কেরলে বেশ কিছু রোগীর শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। যদিও এখনও যা পরিস্থিতি তাতে অত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে– বিশেষত গর্ভবতী মহিলাদের। কারণ এই ভাইরাসে প্রেগন্যান্ট মহিলারা আক্রান্ত হলে সন্তানদেরও ক্ষতি হতে পারে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কী উপসর্গ দেখা দিতে পারে?
চিকিৎসা কী? প্রতিরোধের উপায়ই বা কী? যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ইন্দ্রনীল সাহা।
সমস্যা দেখা দিয়েছিল ২০১৬ সালে। লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়ে গিয়েছিল ভয়াবহভাবে। বহু প্রেগন্যান্ট মহিলা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ফলে তাঁদের সন্তানরা মাইক্রোকেফ্যালি আক্রান্ত হয়ে জন্ম নিয়েছিল। তার প্রেক্ষিতে ওই সব দেশের সরকার আর্জি জানিয়েছিল– ২০১৮ সাল পর্যন্ত সন্তান না নেওয়ার। আর সরকারের তরফ থেকে একথা শোনার পর আচমকাই বেড়ে যায় গর্ভপাতের ঘটনা। আগের তুলনায় বেড়ে যায় গর্ভনিরোধক বড়ির বিক্রিও। এ নিয়ে বিশ্ব জুড়ে বেশ সাড়া পড়ে গিয়েছিল। সেই ভাইরাস এখন ফের মাথা চাড়া দিচ্ছে আমাদের দেশেও। ফলে আতঙ্কও বাড়ছে।
জিকা ভাইরাসের বিশেষত্ব কী?
এই ভাইরাসও ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে। তবে ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার মতো শুধু মশার কামড়ে নয়– মায়ের থেকে সন্তানের বা যৌন সংসর্গের মাধ্যমেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।
উপসর্গ কী?
জিকা ভাইরাস সংক্রমণের পর সাধারণত ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে রোগ লক্ষণ দেখা দেয়। আর তা এক সপ্তাহ মতো স্থায়ী হয়। যদিও বেশিরভাগ সময়ে খুব হালকা উপসর্গ হয়। যেমন– জ্বর– র্যাশ– মাসলে ব্যথা– মাথার যন্ত্রণা– ক্লান্তি ও পেটে ব্যথা। অনেক সময়ে বড়দেরও ব্রেন ও নার্ভাস সিস্টেমে সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
জিকা সংক্রমণ হলে প্রেগন্যান্ট মহিলারা কী ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন?
গর্ভবতী মহিলাদের প্রথম তিন মাসে সংক্রমণ হলে বেশি সমস্যা হয়। এছাড়া সংক্রমণ জটিল হয়ে উঠলে গর্ভপাত– প্রি টার্ম ডেলিভারি সহ গর্ভের সন্তানের নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। সন্তানের শরীরের তুলনায় ছোট সাইজের মস্তিষ্ক (মাইক্রোকেফ্যালি)– চোখ ও মস্তিষ্কের সমস্যা ও জয়েন্টের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা কী?
সাধারণত উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। এই অসুখের জন্য কোনও বিশেষ ওষুধ বা টিকা নেই। আর ডিহাইড্রেশন এড়াতে প্রচুর জল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়
মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য যা যা করণীয় সবই করতে হবে। শরীর ঢাকা থাকে এমন পোশাক পরতে হবে। মশারি টাঙিয়ে ঘুমোতে হবে। পোকামাকড় বা মশা নিরোধক কিছু ব্যবহার করতে হবে। আর যে এলাকায় বেশি এই রোগ দেখা দিয়েছে সেখানে কারও সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে হলে কন্ডোম ব্যবহার করতে হবে।
এছাড়া মশা যাতে বাড়ির আশপাশে জন্মাতে না পারে তার জন্য জল জমতে দেওয়া যাবে না। ঘরের ফুলদানি বা সৌখিন গাছ থাকলে নিয়মিত জল পালটাতে হবে।
এছাড়া জিকার প্রাদুর্ভাব আছে এমন জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া পুরুষদের ক্ষেত্রে তিন মাস আর মহিলাদের অন্তত ২ মাস বাচ্চার জন্য ট্রাই করা উচিত নয়।
যোগাযোগ ৯৮৩০২৪১১১১
সাক্ষাৎকার শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায়