পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: ১৫০ ঘণ্টা পার হয়ে গিয়েছে। এখনও উদ্ধার করা যায়নি উত্তরাখণ্ডের নির্মীয়মান টানেলে আটকে পড়া শ্রমিকদের। চরম উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগে দিন কাটছে শ্রমিকদের পরিবার-পরিজনদের। আচমকাই উত্তরাখণ্ডের সুড়ঙ্গে উদ্ধারের কাজ স্থগিত করে দেওয়া হল। কারণ সুড়ঙ্গে পাথর সরানোর সময় জোরে ফাটল ধরার শব্দ হয়। এবার উদ্ধারকারী দলের পরিকল্পনা, সুড়ঙ্গের উপর থেকে খোদাই করা হবে। এতদিনেও কেন উদ্ধার করা যাচ্ছে না আটক শ্রমিকদের? তা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন সুড়ঙ্গে কাজ করতে আসা বাকি শ্রমিকরা। এমন দুর্ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রের কোনও তাপ উত্তাপ সেইভাবে সামনে আসেনি।
নির্মীয়মান ওই টানেলে ধস নামে ১২ নভেম্বর, রবিবার। তারপর থেকে সেখানে আটকে রয়েছেন ৪০ জন শ্রমিক।
বার বার দাবি করা হচ্ছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে উদ্ধারকাজ। কিন্তু সেই অর্থে উদ্ধার এগোয়নি একচুলও। বারবার মেশিনের ত্রুটির কারণে ব্যাঘাত হচ্ছে উদ্ধারকাজ। উদ্ধারের জন্য আরও একটি মেশিন আনা হয়েছে ইন্দোর থেকে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ফল শূন্য। ক্রমশ বাড়ছে জনরোষ।
উত্তরকাশীতে সিল্কইয়ারায় টানেলে কাজ করছে দিল্লি থেকে আনা আমেরিকার ড্রিল মেশিন। মেশিনটি ধ্বংসস্তূপের ভিতরে ২৪ মিটার পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছে। আরও একটি ড্রিল মেশিন আনা হয়েছে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর থেকে। বায়ু সেনার সি-১৬ বিমান প্রায় ২০ টন ওজনের এই বিশালাকার ড্রিল মেশিনটি দেরাদুনে নিয়ে এসেছে।
শুক্রবার বিকেলে যখন অপারেশনটি বন্ধ করা হয়েছিল, তখন হেভি-ডিউটি অগার মেশিনটি টানেলের ভিতরে ৬০ মিটার এলাকা জুড়ে ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে ২৪ মিটার পর্যন্ত ঢুকতে পেরেছে মাত্র। তারপর ফের ব্যাহত হয়েছে উদ্ধার কাজ। এমন অবস্থায় শ্রমিকদের ভবিষ্যত নিয়ে সত্যিই আতঙ্ক বাড়ছে। মেশিন যত ব্যর্থ হচ্ছে তত ঈশ্বরকে ডাকছে স্থানীয়রা।
একটি ক্রেনের সাহায্যে পুরোহিত সুড়ঙ্গের মুখে একটি পতাকা রেখে নারকেল ভেঙেছেন। উদ্ধারের ৭ম দিনে সুড়ঙ্গের বাইরে একটি মন্দির বানানো হয়েছে। একদিকে সুড়ঙ্গের ভিতরে মেশিন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অন্যদিকে এর মুখে মন্দির বানানো হয়েছে। পুজো হচ্ছে।
সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের পাইপের সাহায্যে খাবার, অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যেই শুক্রবার দুপুরে খননযন্ত্র দিয়ে সুড়ঙ্গের মুখে আটকে থাকা পাথর সরানোর সময় জোরে ফাটল ধরার শব্দ পান উদ্ধারকারীরা। তারপর থেকেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে উদ্ধারকাজ। উদ্ধারকারীদের ধারণা, সুড়ঙ্গের ভিতরে আরও একটি ধস নেমেছে। উদ্ধারকাজ চালিয়ে নিয়ে গেলে আরও ধস নামতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের কী ভাবে উদ্ধার করা হবে, তা ঠিক করতে বিশেষজ্ঞদের একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও।
উত্তরাখণ্ডের বিখ্যাত তীর্থস্থানগুলি যাতে একটি আর একটির সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে তাই সরকারিভাবে প্রায় ১০,৫০০ কোটি টাকা খরচ করে এই সুড়ঙ্গ বানানো হচ্ছে। যখন এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তখন জিওলজিস্ট ও পরিবেশবিদরা আশঙ্কার কথা শুনিয়ে সাবধান করেছিলেন। ভূতত্ত্ববিদ নবীন জুয়াল বলেন, এখানে যে এমন পরিস্থিতি হতে পারে সে সম্পর্কে কর্তৃপক্ষে আগাম নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।
যে শ্রমিকরা এই সুড়ঙ্গে আটকে রয়েছেন তারা অধিকাংশই পরিযায়ী।
আটক ৪০ জনের মধ্যে ১৫ জন ঝাড়খণ্ডের শ্রমিক, ৮ জন ইউপির, ৪ জন ওড়িশার, ৪ জন বিহারের, ৩ জন পশ্চিমবঙ্গের, অসম ও উত্তরাখণ্ডের ২ জন করে শ্রমিক এবং হিমাচলের ১ জন শ্রমিক এখনো আটকে রয়েছেন সুড়ঙ্গে।
কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, পাইপের মাধ্যমে এই আটক শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছে। পাইপ দিয়ে তাদের অক্সিজেন,খাবার ও ওষুধ পাঠানো হচ্ছে। ছোলা, মুড়ি, বাদাম, শুকনো ফল ও পানীয় জল এই পাইপ যোগে পাঠানো হচ্ছে। সুড়ঙ্গের বাইরে একটা অস্থায়ী চিকিৎসা কেন্দ্র বানিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু অন্ধ সুড়ঙ্গে থেকে কবে উদ্ধার করা যাবে আটক শ্রমিকদের, তার কোনো সুস্পষ্ট উত্তর মেলেনি শনিবারও।