পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: পরাধীন ভারতে যখন দিনের বেলা জানলার বাইরে তাকাতে সাহস করতেন না মেয়েরা, সেই সময় গ্রাম থেকে অনেক দূরে গিয়ে প্রায় ৬ বছর শহরে থেকে রসায়নে স্নাতক হন ভারতের প্রথম মহিলা বিচারপতি ফাতিমা বিবি। তাঁর কঠিন লড়াই, সাফল্য আর সততার গল্প নিয়ে ২০২২ সালে ৩০ মিনিটের একটি ডকুমেন্টরি নির্মাণ করেছিল কেরালা স্টেট ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন।
মালায়লম ভাষায় তৈরি ডকুমেন্টারিটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘নীথিপাথাইলে ধীরা ভানিথা’ (ন্যায়ের পথে একজন সাহসী মহিলা)।
বৃহস্পতিবার ৯৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি…) সুপ্রিম কোর্টের প্রথম মহিলা বিচারপতি ফাতিমা বিবি। মৃত্যুর আগে অবসর যাপন করছিলেন তাঁর পাঠানামথিট্টার বাড়িতে।
ফাতিমা বিবির কঠোর পরিশ্রমের ফলে জীবনের বহু ক্ষেত্রেই তিনি ‘প্রথম’ হয়েছেন। তিনি সর্বোচ্চ আদালতের প্রথম মহিলা বিচারপতি। ভারতের প্রথম মুসলিম মহিলা বিচারপতি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রথম মহিলা চেয়ারপার্সন। তামিলনাডুর প্রথম মুসলিম মহিলা রাজ্যপাল। এমনকি গোটা এশিয়া মহাদেশের প্রথম মহিলা বিচারপতি।
১৯২৭–র ৩০ এপ্রিল কেরলে জন্মগ্রহণ করেন ফাতিমা। রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করার পর বাবার ইচ্ছা পূর্ণ করতে আইনের ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫০ সালে বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে প্রথম মহিলা আইনজীবী হিসবে গোল্ড মেডেল পান।এরপর আইনজীবী হিসাবে কাজ শুরু করে দেন।
আইনজীবী থেকে বিচারপতি হওয়ার পথে পা দেন ১৯৭৪ এ। প্রথমে ডিস্ট্রিক্ট জাজ। পরে ১৯৮০ সালে সেশনস জাজ হিসেবে যোগ দেন। এরপর ইনকাম ট্যাক্স অ্যাপিলেট ট্রাইবুনাল।তারপর ১৯৮৩ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি হন ফাতিমা।নতুন করে ইতিহাস গড়েন ১৯৮৯ সালে।দেশের প্রথম মহিলা বিচারপতি হিসবে সুপ্রিম কোর্টে যোগ দেন তিনি।
১৯৯৩-এ অবসর গ্রহণ করার পর প্রথমে ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন ও পরে তামিলনাড়ুর গভর্নর হিসেবে যোগ দেন।
তিনি তার কর্মজীবনে বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন। রাজীব গান্ধী হত্যা মামলায় চার দণ্ডিত বন্দীর দায়ের করা ক্ষমা ভিক্ষার আবেদন প্রত্যাখ্যান করার পর তিনি তামিলনাড়ুর রাজ্যপালের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি থাকাকালীন বেশ কয়েকটি যুগান্তকারী রায় দেন ফাতিমা।১৯৮৯ সালে তাঁর সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসবে যোগ দেওয়ার ঘটনা আইনের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক ছিল। লিঙ্গভেদের প্রাচীর ভেঙে দেশের মহিলাদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন ফাতিমা বিবি।
নারী স্বাধীনতার ভাবনা যখন বিলাসিতা ছিল, সেই সময়ে ফাতিমা বিবি অন্য ঘরাণার জন্ম দিয়েছিলেন। তাঁর সাফল্যের যাত্রায় সবথেকে বেশি সমর্থন পেয়েছেন বাবা মিরা সাহিবের কাছ থেকে।