পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ বাহাদুর শাহ জাফর ছিলেন শেষ মুঘল সম্রাট। তাঁর আরও একটি বড় পরিচয় ছিল, তিনি ১৮৫৭ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সিপাহী বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আর সেজন্য তাঁকে রাজ্যপাট, পরিবার সব হারাতে হয়েছিল। নির্বাসিত হতে হয়েছিল বার্মা (বর্তমানে মিয়ানমার) মুলুকে। ইংরেজরা তাঁকে চির নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। সিপাহীদের খরচ মেটাতে তিনি তাঁর সমস্ত সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছিলেন। এমনই এক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব ও স্বাধীনতা সংগ্রামীর প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে দিল ধর্মান্ধ উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। বাহাদুর শাহ জাফরের ছবি ছিনে টুকরো-টুকরো করে দিল তারা। ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রের কোলহাপুর শহরের একটি বিরিয়ানির আউটলেটে।
ওই দোকানের দেয়ালে টাঙানো ছিল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের ছবি। সেই ছবি জোর করে খুলে ছিড়ে দেয় তারা। ভাঙচুর করে দোকানে। তাদের প্রশ্ন কেন আওরঙ্গজেবের বংশধরের ছবি থাকবে দোকানে?
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার রাতে। স্থানীয় একটি উগ্র দক্ষিণপন্থী সংগঠনের কয়েকজন যুবক রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বিরিয়ানির দোকানে দেওয়ালে টাঙানো বাহাদুর শাহ জাফরের ছবি দেখতে পায়। সঙ্গে সঙ্গে তারা দোকান মালিককে বলে ছবিটি সরিয়ে ফেলতে। কিন্তু, দোকানের মালিক তা না করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ওই কট্টরবাদী সংগঠনের সদস্যরা। তারা দেওয়াল থেকে ছবিটি খুলে নিয়ে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে দেয়। দোকানে ভাঙচুর চালায়। সেইসঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, আওরঙ্গজেবের বংশধরের ছবি দোকানে রাখা যাবে না। ফের যদি এই ধরনের কোনও ছবি টাঙানো হয় পরিণাম ভয়ংকর হবে।
ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়েছে কোলহাপুরের রাজারামপুরী থানার পুলিশও। বৃহস্পতিবার থানার এক অফিসার জাননা, বুধবার রাতে বিরিয়ানির দোকনটিতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। তবে দোকান কর্তৃপক্ষ কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, বাহাদুর শাহ জাফর ছিলেন ২০তম তথা শেষ মুঘল সম্রাট। তিনি ছিলেন একজন উর্দু কবিও। ১৮৬২ সালে বার্মার রেঙ্গুনে (বর্তমান মিয়ানমার) ৮৭ বছর বয়সে মারা যান। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পরে তাঁকে রেঙ্গুনে চিরনির্বাসনে পাঠিয়েছিল ইংরেজরা। রেঙ্গুনে নির্বাসিত থাকা অবস্থায় বেদনার্ত হয়ে লিখিছিলেন, ‘‘কী দুর্ভাগ্য জাফরের, স্বজনদের ভূমিতে তার দাফনের জন্য দু’গজ মাটি, তাও মিলল না।’’ রাজীব গান্ধি প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় মায়ানমার সফরে গিয়ে তাঁর সমাধি সৌধ পরিদর্শন করে লিখেছিলেন, ‘তোমার আত্মত্যাগ থেকেই আমাদের স্বাধীনতার আওয়াজ উঠেছিল। দুর্ভাগ্য তোমার নয় জাফর, ভারতবর্ষের সুনাম ও গৌরবের সঙ্গে তোমার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে।’