”বিশ্লেষকরদের একাংশের মতে, গত দুই দশকে ব্যাপক আর্থিক ও সামাজিক পরিবর্তন হয়েছে চিনে। কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পিত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র থেকে একটি অতি-প্রতিযোগীতামূলক মুক্ত-বাজার অর্থনীতিতে প্রবেশ করেছে চিন, যেখানে কেউ কেউ খুব ধনী হয়ে উঠেছে এবং অন্যরা ধন-সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যার জেরে সমাজের এক শ্রেণীর মানুষের মনে ক্ষোভ, হতাশার সঞ্চার হয়। আর তারাই এই সমস্ত কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে।”
বিশেষ প্রতিবেদন: চিনের শিশুদের স্কুলে ছুরি হামলায় স্তম্ভিত গোটা বিশ্ব। নিস্পাপ ছোট শিশুদের প্রতি একজন মানুষের কী এমন হিংসা বা রাগ থাকতে পারে তা বোঝা যাচ্ছে না।
শোনা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক হামলাটি প্রতিহিংসামূলক ছিল। কিন্ত এখনও হামলাকারীর আসল উদ্দেশ্য জানা যায়নি। একটি সূত্র বলছে, কিন্ডারগার্টেনে ছুরি হামলায় নিহত দুই অভিভাবকের মধ্যে একজন অতীতে হামলাকারীর শিশুকে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা মেরেছিলেন। তবে এ থেকেই হামলা কিনা তা নিশ্চিত নয়।
সম্প্রতি, চিনের একটি কিন্ডারগার্টেনে ছুরি হাতে হামলা চালায় ২৫ বছর বয়সী যুবক। হামলায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ছয়জন। জখম এক। নিহতদের মধ্যে ৩ শিশু, ২ অভিভাবক ও একজন শিক্ষক রয়েছেন। ইতিমধ্যেই আততায়ী যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ আধিকারিকদের অনুমান, পুরানো কোনও শত্রুতার জেরেই ওই হামলার ঘটনা। চিনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় গুয়াংডং প্রদেশের একটি কিন্ডারগার্টেনে হানা দিয়ে আচমকাই ছুরি চালাতে থাকে ২৫ বছরের যুবক। ওই ছুরিতে ক্ষতবিক্ষত হয় তিন খুদে পড়ুয়া, দুই অভিভাবক ও দুই শিক্ষক। আততায়ীর ওই রুদ্রমূর্তি দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্কুলের পড়ুয়া ও শিক্ষকরা। পরে পুলিশে এসে হামলাকারীকে গ্রেফতার করে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে চিনে কিন্ডারগার্টেনে ছুরি হামলার ঘটনা বেড়ে চলেছে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে হুনান প্রদেশে ছুরি হাতে এক ব্যক্তি একটি প্রাইমারি স্কুলে হামলা চালায়। সেই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল দুই জনের।
ওই বছরেরই সেপ্টেম্বরে মধ্য চিনের একটি প্রাইমারি স্কুলে ছুরি হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ৮ পড়ুয়ার, আহত হয়েছিল আরও দু-জন। যে ব্যক্তি হামলা চালায় সে তার আগে বান্ধবীর চোখ খুবলে নেওয়ার অপরাধে আট বছর জেল খেটেছিল। তার আগে ২০১৮ সালে শাংজি প্রদেশের একটি স্কুলে হামলা চালায় ওই স্কুলেরই এক প্রাক্তন ছাত্র। সেই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ৯ পড়ুয়ার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের অপরাধের কোনও যুক্তি নেই, তবে বহু দেশেই এমন ঘটনা সাধারণ হয়ে গিয়েছে। ১৯৯০-এর দশকে চিনে এরকম ধরনের হামলা বা হিংসার খবর শোনা যেত না।
তবে এটা নয় যে, শিশুদের সঙ্গে কখনও খারাপ কিছু ঘটেনি। ২০০১ সালের মার্চে জিয়াংজি প্রদেশে একটি বিস্ফোরণে ৪১ শিশু মারা গিয়েছিল। তদন্তে উঠে আসে, স্কুলেই বোমা বাধার কারখানা ছিল এবং শিশুদের দিয়ে সেই কাজ করানো হতো। সেই ট্র্যাজেডিতে কেঁপে উঠেছিল চিনারা। তবে সেটি ছিল দুর্ঘটনা, কোনও হামলা নয়। এরপর ২০১০ সালের পর থেকে হঠাৎই কেমন যেন সব বদলে যেতে শুরু করল। ক্রমাগত ছুরি হামলার খবর সামনে আসতে থাকে। একটি ছুরি হামলায় ১৭ জন শিশু নিহতের খবর পাওয়া যায়। তবে শিশুদের যে ইচ্ছা করেই হত্যা করা হয়েছিল এটা স্পষ্ট। শিশুদের সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা ও কষ্ট দেওয়াই উদ্দেশ্য ছিল হামলাকারীর। চিনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও এক ভাষণে বলেছিলেন, অন্তর্নিহিত ‘সামাজিক উত্তেজনা’ থেকেই এ ধরনের অপরাধের সংঘটিত হচ্ছে, এগুলির দিকে নজর দিতে হবে।