পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ ‘মোদিজি, যোগীজি আপনারা কোথায়? যে আছেন আমাদের বাঁচান। আপনারা বিমান পাঠান। ভারতীয় সেনা পাঠান। আমরা যেখানে আছি, সেটা নিরাপদ নয়। কাল রাতেও কিছু মানুষ আসে এখানে ভাঙচুর চালায়। তারা কে ছিল আমরা জানি না। একটি ভিডিওতে ইউক্রেনে আটকে পড়া এক ভারতীয় ছাত্রীকে কাঁদতে কাঁদতে এই কথা বলতে শোনা যায়।
ওই ছাত্রী আরও বলেন, তিনি উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা তার নাম গরিমা মিশ্র। গরিমা জানান, ‘আগে আমরা ভেবেছিলাম এখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারব, এখন ভাবছি আর বাড়ি ফিরতে পারব না। আমাদের কেউ সাহায্য করছে না। ভারতীয় দূতাবাসে ফোন করলে কেউ ফোন ধরছে না। রাতে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ভেবেছিলাম কোনওভাবে এখান থেকে পালিয়ে যাব। কিন্তু আমার এক বন্ধু এসে আমাদের এখান থেকে বের হতে নিষেধ করে। ওই বন্ধু জানায়, এই রকম কিছু পড়ুয়া পালাতে গিয়ে রুশ সেনাবাহিনীর সামনে পড়ে। প্রথমে তারা গুলি চালায়। সেই মেয়েগুলিকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে কেউ কিছু জানে না, ছেলেদেরও কোনও খোঁজ নেই। আমরা কিছু রোমানিয়ার ভিডিও দেখেছি। সেখানেও মেয়েদের হেনস্থা করা হচ্ছে।’
হাতজোড় করে ওই পড়ুয়াকে বলতে শোনা যায়, আমাদের বাঁচান, ‘জয় হিন্দ, জয় ভারত’। আপনারা প্লিজ এই ভিডিওটি শেয়ার করুন’।
ইউক্রেনে আটক ছাত্রীর ভিডিওটি শেয়ার করেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধি। প্রিয়াঙ্কা বলেছেন যে এই ধরনের ভিডিওগুলি গভীর বেদনাদায়ক। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ট্যাগ করে প্রিয়াঙ্কা লিখেছেন,’ এই শিক্ষার্থীদের ভারতে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা কিছু করা সম্ভব করুন। পুরো দেশ এই ছাত্র এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে আছে। আমি আপনার কাছে আবেদন করছি, সরকারের উচিত তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা’।
সরব হয়েছেন সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধিও। তিনি ট্যুইটে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেছেন। যেখানে দেখা যাচ্ছে সেনাবাহিনীর জওয়ানরা রাস্তায় ফেলে পড়ুয়াদের উপর নির্মম অত্যাচার করছে। এই বিষয়ে তিনি ওই সমস্ত পড়ুয়াদের পাশে থাকার বার্তা দেন। ট্যুইটে এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে রাহুল লেখেন, আমার হৃদয় ওই সমস্ত ভারতীয় পড়ুয়াদের জন্য ব্যথিত করে তোলে। এই সমস্ত ভিডিয়ো ওই পরিবারগুলো ও তাঁদের বাবা-মায়েরা কী করে মেনে নিতে পারেন? পাশাপাশি ভারত সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। রাহুল বলেন, অবিলম্বে ভারত সরকারের উচিত ইউক্রেনে আটকে পড়া পড়ুয়াদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো ও তাঁদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা।
উল্লেখ্য, চারদিকে পড়ছে বোমা। চতুর্দিকে ভারী বুটের শন্ধ। বারুদের গন্ধে ভরে আকাশ-বাতাস। তার মধ্যেই কোনও রকমে বাড়ি ফেরার চেষ্টায় মরিয়া ইউক্রেনে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। কোনরকমে বাঙ্কারে, মেট্রো স্টেশনের ভিতরে দিন কাটছে পড়ুয়াদের। নেই খাবার জল, ফুরোচ্ছে খাদ্য। এই অবস্থায় কম খেয়েই কোনও রকমে দিন কাটাচ্ছে তাদের। প্রচণ্ড শীতকে উপেক্ষা করে, দীর্ঘ পথ পার করে বিমানে ধরার জন্য এলেও বাধা পাচ্ছে তারা। ইউক্রেনসেনা বাহিনীর রক্তচক্ষুর সামনে পড়তে হচ্ছে তাদের। ইউক্রেনে থাকা ভারতীয় থেকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বেছে বেছে লাইন থেকে ভারতীয়দের বের করে দেওয়া হচ্ছে।
রুশ বাহিনী ইউক্রেনে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ায় ভারতীয় ছাত্রদের বাসে করে রোমানিয়া, হাঙ্গেরি এবং পোল্যান্ডের সঙ্গে ইউক্রেনের সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যেখান থেকে তাদের বাড়িতে ফেরৎ পাঠানো হচ্ছে। ১৮ হাজার শিক্ষার্থী ছিল। এখনও ১৬ হাজার আটকে আছে বলে খবর। তবে ফিরতে গিয়ে ইউক্রেন সেনার হাতেই বাধা পাচ্ছে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা, এমনটাই অভিযোগ।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ভোরে আচমকাই সামরিক অভিযানের ঘোষণা করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার পরেই আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে যুদ্ধ অভিযান শুরু হয়। যুদ্ধে বিপর্যস্ত ইউক্রেন। রাজধানী কিয়েভ ও খারকিভে রুশ সেনা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভালোদিমির জেলেনস্কি জানিয়ে দেন, নিজের জীবন দিয়ে দেশকে রক্ষা করবেন তিনি। আত্মসমর্পণের কোনও প্রশ্ন নেই।