পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : আটদিন ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধে ইউক্রেন যথেষ্ট প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু রাশিয়া এত সহজে থামতে নারাজ। বৃহস্পতিবারই রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সার্জিয়াই লাভরভ রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন এই যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেনি। তবে এই যুদ্ধের শেষ রাশিয়াই করবে। একইসঙ্গে তিনি এও জানিয়ে দিয়েছেন, শান্তিচুক্তি সত্ত্বেও তাঁরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন। একইসঙ্গে অবশ্য এদিন তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন পারমাণবিক হামলার কথা এখন মোটেই ভাবছে না রাশিয়া।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ইউক্রেনে। রাশিয়ার দাবি, যুদ্ধে ইউক্রেনের ২ হাজার ৮৭০ সেনার মৃত্যু হয়েছে। ইউক্রেনের ৬২টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে তারা। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ইউক্রেনের ৬০৬টি ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি। ৩৯টি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। রুশ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইউক্রেনের ১ হাজার ৬১২ অস্ত্র ঘাঁটি। ধ্বংস ৩৯টি অ্যান্টি এয়ারক্র্যাফট মিসাইল, ২২৭টি মর্টার, ৫৩টি ড্রোন। দু’পক্ষের শান্তি বৈঠক হলেও ইউক্রেনের উপরে লাগাতার গোলাবর্ষণ করে চলেছে রুশ সেনা। খারকিভ ও খতিরকায় লাগাতার হামলা চালানো হচ্ছে।
অষ্টম দিনে রাশিয়া জনাকীর্ণ ইউক্রেনীয় শহরগুলিতে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে এবং রাশিয়ান ট্যাঙ্ক এবং অন্যান্য যানবাহনের একটি দীর্ঘ কনভয় ধীরে ধীরে রাজধানী কিয়েভের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে যে তাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে যে রাশিয়ার মিত্র বেলারুশ ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। পালটা দাবি করেছে ইউক্রেনও। ইউক্রেনের পক্ষ থেকেও দাবি করা হয়েছে, তাদের হাতে রাশিয়ার ৯ হাজার সেনার মৃত্যু হয়েছে। ৩০টি রুশ যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার ১ হাজার ১১৭টি ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়িও তাদের হাতে ধ্বংস হয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়ার ১১টি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি ইউক্রেনের।
বৃহস্পতিবারও ইউক্রেনের কাধিক শহরে হামলা চালায় রাশিয়া। খারকিভের বিভিন্ন এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে। খারকিভের একটি স্কুলে রুশ সেনা মিসাইল হামলা চালায় বলে অভিযোগ ইউক্রেনের। বরোডিয়াঙ্কা শহরে রুশ সেনার সঙ্গে লড়াই চলছে ইউক্রেন সেনার। এদিন ইউক্রেনের চারটি শহর দখলের দাবি করেছে রাশিয়া। কিয়েভে বাজছে এয়ার রেড সাইরেন। ফলে আকাশপথে বড়সড় হামলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই খেরসন হাতছাড়া হওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছে ইউক্রেন।
কিয়েভর পাশ্ববর্তী শহরে ইরপিনে জোরালো হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। রাশিয়ার গোলাবর্ষণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এই শহরে। রেসিডেন্সিয়াল এলাকায় আছড়ে পড়ে রুশ মিসাইল। বেশ কিছু বাড়িঘর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ইউক্রেনের বন্দর শহর মারিওপোল বুধবার ১৫ ঘণ্টা একটানা বোমা হামলার শিকার হয়েছে। ডেপুটি মেয়রের মতে, এটা ‘মানবিক বিপর্যয়’। তিনি জানান রাশিয়ান সেনাবাহিনী আর্টিলারি রকেট লঞ্চ সিস্টেম বিমান রকেট সহ সমস্ত অস্ত্র দিয়ে হামলা চালাচ্ছে। এবার রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় গুঁড়িয়ে গেল বাংলাদেশের এক জাহাজ। মৃত্যু হয়েছে জাহাজে থাকা এক বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ারের। উত্তর কৃষ্ণসাগরের ধারে ইউক্রেনের বন্দর শহর অলিভিয়া। বুধবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা নাগাদ ওই বন্দরে নোঙর করছিল ঢাকার পণ্যবাহী জাহাজ ‘মভি বাংলার সমৃদ্ধি’।
সেই জাহাজে আছড়ে পড়ে রুশ গোলা। মুহূর্তে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে জাহাজটিতে। মৃত্যু হয় এক কর্মীরও। তিনি জাহাজটিতে থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরই মধ্যে কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেন লাগোয়া এলাকায় টহল দিচ্ছে রুশ নৌবহর। জানা গিয়েছে ৫টি রুশ যুদ্ধ জাহাজ কৃষ্ণসাগর দিয়ে ইউক্রেনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এদিকে রোমানিয়াতে পৌঁছে ভারতের কেন্দ্রীয় অসামরিক পরিবহণ মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া জানিয়ে দিয়েছেন, যে কোনও উপায়ে ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয় পড়ুয়াদের ফিরিয়ে আনা হবে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান, ১৯ টি বিমান ৩৭২৬ জন ভারতীয় পড়ুয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ময়দানে নামছে। এই বিমানগুলির মধ্যে বায়ুসেনার বিমান ও অসামরিক বিমানও থাকছে। ভারতীয় বায়ুসেনার চারটি সি-১৭ বিমান রোমানিয়া হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ড থেকে ৭৯৮ জন ভারতীয়কে উদ্ধার করেছে।এই যুদ্ধ আমরাই শেষ করব।V