নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ভবানীপুরে উপ-নির্বাচনের জন্য প্রচার শুরুর দিনেই বিজেপির বিরুদ্ধে সুর সপ্তমে চড়ালেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গেরুয়া শিবিরকে নেটিং ইঁদুর বলে কটাক্ষ করার পাশাপাশি বিজেপি পরিষদীয় দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করেও ‘ভগবানের জ্যেষ্ঠপুত্র’ বলে বিঁধেছেন। নন্দীগ্রামে তাঁকে জোর করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে যেমন অভিযোগ করেছেন– তেমনই ভোটে হারার পরে মুখ্যমন্ত্রী হতে চাননি বলেও গোপন তথ্য প্রকাশ্যে এনেছেন। প্রথম দিনেই মমতার ভোকাল টনিকে অনেকটাই উজ্জীবিত তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তাঁদের মতে– ‘ভবানীপুরে দলের প্রবীণ নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় যত ভোটে জিতেছিলেন– তার চেয়ে বেশি ভোটে জিতবেন তৃণমূল সুপ্রিমো।’ আগামীকাল শুক্রবারই ভবানীপুরে মনোনয়ন জমা দিতে চলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
ভবানীপুর আসনের উপনির্বাচনের জন্য যখন বিজেপি নেতৃত্ব হন্য হয়ে প্রার্থী খুঁজছেন– তখন কোমর কষে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার চেতলার অহীন্দ্র মঞ্চে দলের কর্মীদের নিয়ে প্রথম সভা করেন তিনি। কোভিড বিধির কারণে অবশ্য অসংখ্য তৃণমূল কর্মী ওই কর্মিসভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি– রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সহ শাসকদলের শীর্ষনেতারা কর্মিসভায় হাজির ছিলেন। আর সবাইকে চমকে দিয়ে হাজির হয়েছিলেন প্রবীণ সিপিএম নেতা বাদল চট্টোপাধ্যায়ও। বাংলার জনদরদি মুখ্যমন্ত্রীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতানোর আর্জি জানালেন তিনি।
কর্মিসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে এ দিন আগাগোড়াই বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। নন্দীগ্রামে তাঁর অপ্রত্যাশিত হারের পিছনে বড়সড় ষড়যন্ত্র হয়েছিল বলে দাবি করে মমতা বলেন– ‘কীভাবে এবারের নির্বাচনে লড়েছি– তা শুধু আমরাই জানি। কথায় কথায় হুমকি দিয়েছে। বাইরে থেকে লক্ষ লক্ষ গুন্ডা নিয়ে এসে ভোট করেছিল। এমনভাবে তৃণমূলকে ধ্বংস করার চেষ্টা হয়েছিল– ভাবলে শিউরে উঠবেন। আমি একটা জায়গায় হেরেছি। আদালতে গিয়েছি। ইলেকশন মেশিন নিয়ে প্ল্যানিংটা আমিও কিছু কিছু জেনেছি। তাছাড়া সমস্ত কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমার পায়ে আঘাত লেগেছিল। তাও জব্দ করতে পারেনি। চক্রান্ত করেই আমার উপরে হামলা করা হয়েছিল। হামলা চালানোর পর প্লাস্টার নিয়েই তিন দিনেই বেরিয়ে পড়েছিলাম। একটা আসনে আমি হেরেছি। মামলা করেছি। প্রমাণ না থাকলে তো মামলা হয় না। নন্দীগ্রামে আমি ষড়যন্ত্রের বলি হয়েছি। আমাকে হারাতে প্ল্যানিং করা হয়েছিল– কে করেছে আমি জানি। নির্বাচনে আমাকে আবার দাঁড়াতে হল, ওঁদের ষড়যন্ত্রের জন্য। কিন্তু আমি ভবানীপুরে নিজের ঘরে ফিরে আসতে পেরেছি। আমি নিশ্চিত ভবানীপুরের মানুষও চেয়েছিলেন– আমি এখানেই থাকি।’
কয়লাকাণ্ডে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপদস্থ করতে যেভাবে আদাজল খেয়ে নেমেছে বিশ্বাসযোগ্যহীন হিসেবে পরিচিত এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের শীর্ষ আধিকারিকরা– তা নিয়েও এ দিন ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন– ভোট এলেই এজেন্সি দেখানো হচ্ছে। এখন আমাদের যাকে খুশি ডাকছে ইডি– সিবিআই। অভিষেক– পার্থদা– সুব্রতদা সকলকে ডাকা হচ্ছে। দু’দিনও হয়নি অভিষেককে ডেকে ৯ ঘণ্টা জেরা করল। আবার ডেকে পাঠিয়েছে। অভিষেকের বিরুদ্ধে বেআইনি কেস থাকলে প্রমাণ করুক। কলকাতা থেকে মামলা কেন দিল্লিতে টেনে নিয়ে যাওয়া হল?কেন এমনটা হবে। কংগ্রেসকে এজেন্সি দেখিয়ে জব্দ করা হয়েছে। মুলায়ম সিং– শরদ পওয়ারকে জব্দ করেছে।’ এর পরেই হুংকার ছেড়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন– ‘আমাদের এভাবে ভয় দেখানো যাবে না। আমরা নেটিং ইঁদুর নয়। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।’
অভিষেক-সহ তৃণমূল নেতাদের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার তলব নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিতে গিয়ে নাম না করে বিজেপির পরিষদীয় দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও নিশানা করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ব্যাঙ্গের সুরে বলেন– ‘নারদকাণ্ডে সুব্রত মুখোপাধ্যায়– ফিরহাদ হাকিমকে ডেকে পাঠাচ্ছে আর আসল চোরের নাম নেই।’ মঙ্গলবারই কলকাতা হাইকোর্ট থেকে বিজেপি পরিষদীয় দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছিল। আদালতের অনুমতি ছাড়া গ্রেফতার করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থা। এ দিন ওই প্রসঙ্গে শুভেন্দুকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন– ‘আমাদের কাছে মার্ডার কেসে তথ্য থাকলেও এফআইআর করা যাবে না। কেন এফআইআর করা যাবে না? ভগবানের জ্যেষ্ঠপুত্র নাকি?
এ দিন উত্তর-পূর্ব দিল্লির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়েও সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন– এতদিন হয়ে গেল দাঙ্গায় কতজনের মৃত্যু হয়েছে তার হিসেব এখনও পাওয়া যায়নি। একটা রাজ্যে এত বড় একটা দাঙ্গা হয়ে গেল অথচ মৃত্যুর হিসেব দিচ্ছে না বিজেপির পুলিশ। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। ত্রিপুরায় আমাদের কর্মীদের রক্তাক্ত করা হয়েছে।