বিশেষ প্রতিবেদন: মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন প্রায় আগামী শতাব্দীতে বড়সড় বিপদের সংকেত দিচ্ছে, যা মানুষের কাছে একটি হুমকি। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ১০০ কোটি মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ দেশের বনাঞ্চল সংকুচিত হয়ে যাওয়া। প্রতি বছরই কারণে-অকারণে প্রচুর গাছ কাটা হয়, রোপণ করা হয়, তাও আবার পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। এদিকে বনাঞ্চল বা বনভূমি দিনে দিনে উজাড় হচ্ছে। ফলে বিপদের আশঙ্কা বাড়ছে। কালবৈশাখী ঝড়, সাইক্লোন, অকাল বন্যা প্রভৃতি দেখা দিচ্ছে। অনেক প্রাণী গাছ খেয়ে বেঁচে থাকে আবার গাছই তাদের একমাত্র আবাসস্থল। বন উজাড়ের কারণে এসব প্রাণী যেমন তাদের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে পারছে না তেমনি আবাসহীন হয়ে পড়ছে। ফলে এ সব প্রাণী দিনকে দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বন উজাড়করণ বৈশ্বিক উষ্ণতা সৃষ্টি করে। একটি পরিবেশগত ভারসাম্য বাধাগ্রস্ত করে। বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বয়ে আনে। প্রভাব পড়ছে প্রাণিকূলে। বন উজাড়ের কারণে বেশির ভাগ প্রাণী তাদের বসবাসের স্থান হারিয়েছে। জলবায়ুর ওপর এটির অনেক ক্ষতির প্রভাব রয়েছে।
পাশাপাশি হচ্ছে কলকারখানা থেকে নির্গত তেল, গ্যাস, ধোঁয়া, ধুলো পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। কারখানাগুলি থেকে ৪০ শতাংশের বেশি কার্বন নির্গত হচ্ছে, যা কোটি কোটি মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করছে। ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন পৌঁছতে পারে, ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। আবহাওয়া পরিস্থিতি অস্বাভাবিক রূপ নিলে দুর্ভিক্ষ, দাবানল, বন্যা সেইসঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষ খাদ্য সংকটের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। এনার্জি জার্নালে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী শতাব্দীতে জলবায়ু পরিবর্তন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। কার্বনাইজেশন প্রক্রিয়াতে, উদ্ভিদ বা প্রাণী জীবাশ্মের মতো পদার্থ যা হাজার হাজার বছর ধরে মাটিতে জমে থাকে, ধীরে ধীরে হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেনের মতো উপাদানগুলি হারাতে থাকে তবে তারা কার্বন অর্জন করে এটি বৈশ্বিক অর্থনীতির ডিকার্বনাইজেশনকে ত্বরান্বিত করবে।
গবেষকদের বক্তব্য, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোও জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব ফেলেছে। জীবাশ্ম জ্বালানির তিনটি প্রধান প্রকার হল কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস। কয়লা একটি কালো, কঠিন পদার্থ যা প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। তেল একটি তরল পদার্থ যা পরিবহন এবং উত্তাপ সহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিক গ্যাস একটি বায়বীয় পদার্থ যা গরম এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
কানাডার ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোশুয়া পিয়ার্স বলেছেন, এই অবস্থা দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে হবে। পিয়ার্সের আশঙ্কা, জলবায়ুর এই পরিবর্তন এত দ্রুত হারে এখন ঘটছে যে অনেক প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। যেমন, বরফ গলতে থাকায় পোলার বিয়ার বা উত্তর মেরুর শ্বেত ভালুকের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি, আটলান্টিক মহাসাগরের স্যামন মাছ বিপন্ন হবে, কারণ যেসব নদীতে ঢুকে তারা ডিম পেড়ে বাচ্চার জন্ম দেয়, সেগুলোর জল গরম হয়ে যাচ্ছে। ট্রপিক্যাল অঞ্চলের কোরাল রিফ বা প্রবাল-প্রাচীর উধাও হয়ে যেতে পারে, কারণ বায়ুমণ্ডলের অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড সাগরের জলে মিশে জলে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। জলবায়ু মডেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠলে, শিশু এবং ভবিষ্যত প্রজন্ম ঝুঁকির মুখোমুখি হবে। গবেষকদের কথায়, গ্রীন হাউস থেকে নির্গমণ গ্যাস কোনও রকম ভাবে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।
সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এই বিশাল ভবিষ্যত দায়বদ্ধতাগুলিকে নিতে, মানুষের জীবন বাঁচাতে, মানবতাকে শক্তি দক্ষতা এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ করতে হবে। গবেষকদের বক্তব্য অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট মৃত্যুর সংখ্যা সম্ভবত একজন ব্যক্তির দশমাংশ এবং প্রতি ১০০০ টন জীবাশ্ম পোড়ানোয় ১০ জনের মধ্যে থাকবে।