দেবশ্রী মজুমদার, শান্তিনিকেতন:বুধবারও আদালতের রায় মানলেন না উপাচার্য।গতকাল ১০ই আগস্ট বিচারক অমৃতা সিনহা তাঁর আদেশনামায় ইতিপূর্বে অধ্যাপিকা শ্রুতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছুটির আবেদন সংক্রান্ত মামলায় ১৫ই জুলাই নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ম সমিতিকে চার সপ্তাহের মধ্যে শ্রুতি বন্দ্যোপাধ্যায়র বক্তব্য শুনে গ্রহণযোগ্য আইনানুগ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।সেই নির্দেশ অমান্য করে উপাচার্য কর্মসমিতির সদস্য সাখারাম সিং যাদব কে অধ্যাপিকা শ্রুতির বক্তব্য শোনার জন্য নিয়োগ করেন। উপাচার্যের এই বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে অধ্যাপিকা আদালতে গেলে বিচারক পুনরায় উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয়কে সতর্ক করে বলেন কর্মসমিতির মিটিং-ই শ্রুতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদন ও বক্তব্যের ভিত্তিতেই মীমাংসা করতে হবে এবং ঐ সভায় নুন্যতম ছ’জন সদস্য এবং তার মধ্যে দু’জন বিশ্বভারতীর বেতন ভুক্ত নয় এমন থাকতে হবে। কোনোভাবেই একজন সদস্যকে অধ্যাপিকার আবেদন শোনার দায়িত্ব দেওয়া যাবে না এবং কর্মসমিতির দায়িত্ব কোনো একজনের উপর ন্যস্ত করার অধিকার উপাচার্য ও কর্মসমিতির চেয়ারম্যানের নেই।
এই আদেশ ঐ দিনই অর্থাৎ ১০ই আগস্ট বেলা ৩টের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসচিবের কাছে পৌঁছে যায়। রাত দশটা নাগাদ অধ্যাপিকা শ্রুতিকে ইমেল মারফৎ কর্মসচিব অশোক মাহাতো জানান, তাঁরা আদালতের রায় সম্পর্কে অবহিত হয়েও জানাচ্ছেন যে,আগামীকাল অর্থাৎ ১১ই আগস্ট বিকাল ৪টের সময় কর্মসমিতির সদস্য সাখারাম সিং যাদবদের সামনে তাঁর বক্তব্য রাখতে হবে।
অন্যথায় আর তাঁকে বক্তব্য রাখবার সুযোগ নাও দেওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ আদালতের বারণ সত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় পূর্বের অবস্থানে অনড় থাকল। আজ সকালেই অধ্যাপিকার আইনজবী পুষ্পল চক্রবর্তী আদালতে পুনরায় মামলা দায়ের করেন।আর বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের এ হেন ডোন্ট কেয়ার আচরণে বিচারক বিস্ময় প্রকাশ করেন।বেলা ২টোর মধ্যে বিশ্বভারতীকে হাজির হওয়ার নির্দেশও দেন বিচারক।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী আদালতে হাজির হলে ক্রুদ্ধ বিচারক জানতে চান এইভাবে আদালতের রায় না মানার কারণ কি? কোনো জবাবই দিতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী। বিচারক অমৃতা সিনহা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আচরণে স্তম্ভিত হয়ে উপাচার্যের ঐ বেআইনি নির্দেশ স্থগিত করে দেন এবং অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়কে আগামী ১৬ ই আগস্ট উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেন। বারংবার আদালতের নির্দেশ না মানা যা দেশের সংবিধানের প্রতি অশ্রদ্ধা জ্ঞাপনের সামিল। আর সেটা রবীন্দ্রনাথের বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে অবমাননাকর। আগামী ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের প্রাক্কালে, উপাচার্যের জাতির উদ্দেশে এই উপহার বলে উল্লেখ করেছেন,নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষাবিদ ও প্রাক্তন অধ্যাপক।