বিশেষ প্রতিবেদন: ফিলিস্তিনি বন্দিদের জীবন দূর্বিষহ ও যন্ত্রণাদায়ক করে তুলতে বেশ কিছু অমানবিক নির্যাতনের পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে ইসরাইল। কারাগারের অন্ধকার কক্ষে বন্দিদের শেকল দিয়ে বেধে রেখে নৃশংস অত্যাচার চালানো হয়। ইসরাইলি কারাগার কর্তৃপক্ষের সেরকমই কিছু বর্বরতার ঘটনা ফের প্রকাশ্যে এল। জানা গিয়েছে, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মানসিক আঘাত দিতে করোনার ভয় দেখানো হচ্ছে। অসু্স্থ বন্দিদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, জেলে কোভিড সংক্রমণ রুখতে কোনও ব্যবস্থা রাখা হয়নি। সম্প্রতি এক রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ করেছে প্যালেস্টিনিয়ান প্রিজনার্স সোস্যাইটি। প্রিজনার্স সোস্যাইটির মুখপাত্র আমানি সারাহনেহ বলেন, ’ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ এই পদক্ষেপগুলিকে অস্থায়ী থেকে স্থায়ী করার চেষ্টা করছে। প্রতিটি পদক্ষেপই বন্দিদের অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা।’
২০২০ সালের নভেম্বরে ইসরাইলি জেলে ১০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি বন্দির করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। তা সত্ত্বেও কারাগারের কক্ষে বন্দিদের গায়ে থুতু ছেটাতো ইসরাইলি জেলের কর্মীরা। প্রিজনার্স সোস্যাইটির রিপোর্টে বলা হয়, ’একটি কক্ষে ৬জনেরও বেশি বন্দিকে রাখা হতো, এর ফলে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ বাড়ত। কারাগারের কর্মী ও আধিকারিকরা বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, সংক্রমণ বিস্তারের এটাও একটা কারণ।’ সবচেয়ে দু:খজনক বিষয় হল, ফিলিস্তিনি বন্দিদের করোনার ভ্যাকসিন পর্যন্ত দেয়নি ইসরাইল। সারাহনেহ বলেন, ’এই পদক্ষেপ ও ব্যবস্থার মাধ্যমে বন্দিদের পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে যা তাদের জীবনের সব ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে, বন্দিরা তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না।’ প্রিজনার্স সোস্যাইটি আরও জানায়, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মধ্যে ১২ জনকে জেলের এমন জায়গায় রাখা হয়েছে যা মানুষের থাকার ন্যুনতম যোগ্য নয়। সারাহনেহর কথায়, ’পুলিশি হেফাজতেও বন্দিদের নির্যাতন করা হচ্ছে, মানসিক ও শারীরিক ভাবে নিগ্রহ চলছে কিছু ক্ষেত্রে কোভিড মহামারিকে হাতিয়ার বানিয়ে বন্দিদের মনে আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে।’
ইসরাইলি জেলগুলির অবস্থাও অত্যন্ত শোচনীয়, বন্দিদের থাকার অযোগ্য। রিপোর্ট বলছে, জেলের কক্ষে সূর্যের আলো প্রবেশ করে না, ঘরগুলি স্যাঁতস্যাঁতে ও রোগ বিস্তারের আদর্শ জায়গা। এই কারাগারগুলির সাফ সাফাই করা হয় না বললেই চলে, বন্দিদের গোসল করা বা বস্ত্র পরিধানের ব্যবস্থাও নেই। এ নিয়ে বহু আন্তর্জানিতক মানবাধিকার সংগঠন সরব হয়েছে, কিন্তু ইসরাইলে এই অমানবিক ব্যবস্থায় কোনও পরিবর্তন আসেনি, থামেনি বন্দিদের ওপর জুলুম ও নির্যাতন।