পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: লোকসভা ও রাজ্যসভায় ইতিমধ্যেই পাশ হয়েছে ‘মহিলা সংরক্ষণ বিল’। ‘রাজনৈতিক মাইলেজ’ পেতে তড়িঘড়ি বিল পাশ হলেও তা কবে আইনে পরিণত হবে সেটা নিয়ে কার্যত দিশাহীন কেন্দ্রীয় শাসকদল। কেউ কেউ বলছে ২০২৯ সালের আগে বাস্তবায়ন হবে না এই বিল, কেউ বলছে ২০৩৪-এর আগে।
এবার মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে বেসুরো খোদ বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী। এই বিলের একাধিক ‘ত্রুটি’ প্রকাশ্যে এনেছেন তিনি। ফলে অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির। মোদি সরকারের আনা মহিলা সংরক্ষণ বিলকে সমর্থন করেও সংশোধনের পক্ষে সওয়াল করেছেন বিজপি নেত্রী । তাঁর বক্তব্য, মহিলাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষ্যে এটা বড় পদক্ষেপ। তবে এই বিলটি অসম্পূর্ণ।
সংসদের দুই কক্ষে এই বিল পাশের পর তা নিয়ে ট্যুইট করেছেন উমা ভারতী। তিনি বলেন, বিলে তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত মহিলাদের জন্য পৃথক আসন সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। অথচ উল্লেখ নেই ওবিসি’দের কথা। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। ওবিসি সংরক্ষণ বাদে মহিলা বিল অর্থহীন বলে দাবি উমার। এদিন প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন উমা। জানান, ওবিসি মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ ছাড়াই বিলটি পাশ হয়েছে। আমরা যদি ওবিসি মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ নিশ্চিত না করতে পারি তাহলে বিজপির প্রতি তাদের বিশ্বাস উঠে যাবে। লোকসভা এবং বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ একটি বিশেষ বিধান। তবে এই ৩৩ শতাংশের মধ্য ৫০ শতাংশ এসটি, এসসি, ওবিসিদের জন্য সংরক্ষিত রাখা জরুরি। পঞ্চায়েতি রাজ এবং স্থানীয় সংস্থাগুলিতে অনগ্রসর শ্রেণীর মহিলাদের জন্য বিশেষ সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। তাহলে এখানে সমস্যা কিসের ? মহিলা বিল পাশ করানো যেমন ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, তেমনই ওবিসি মহিলাদের সংরক্ষণের আওতা থেকে দূরে রাখাটা হবে দলের ঐতিহাসিক ভুল। মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে পদ্ম-শিবিরের অন্দরে যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব বিরোধীরা। সংশ্লিষ্ট বিলে ওবিসি কোটা প্রসঙ্গ তুলে কং নেত্রী সোনিয়া বলেছেন, রাজীবের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তবে এই বিলে ওবিসি কোটা না দিলে সেটা অপরিপূর্ণ থাকবে। একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রতি অবিচার হবে। অন্যদিকে রাহুল গান্ধি বলেছেন, ইউপিএ আমলে মহিলা সংরক্ষণের প্রস্তাবিত বিলে ওবিসি কোটা না থাকা নিয়ে বড় আফসোস হয়। ভারতের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ ওবিসি। ওই বড় অংশের মহিলাদের অধিকার রয়েছে সংরক্ষণ পাওয়ার। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, এটি কোনও ঐতিহাসিক বিল নয়। এটা একটা প্রতারণা। ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম মুখ নীতীশ কুমার প্রশ্ন তুলেছেন, ৬০ শতাংশ মহিলাকে সংরক্ষণের আওতার বাইরে রেখে একটা বিল পাশ করানো হাস্যকর পদক্ষেপ। অন্যদিকে সংরক্ষণ বিলের বিপক্ষেই ভোট দিয়েছেন মিম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি। বক্তব্য রাখার সময় তিনি বলেন, এই বিল মূলত ‘সাবর্ণ মহিলা'(উচ্চবর্ণের)দের সুযোগ করে দেবে। ওবিসি এবং মুসলিম মহিলাদের জন্য এই বিলে কোনও জায়গা নেই। ওবিসি এবং মুসলিম মহিলা বিরোধী বিল বলেও তোপ দাগেন। ৪৫৪ বনাম ২। আমরা হেরেছি, কিন্তু লড়েছি। মুসলিম কমের জন্য লড়েছি। বিজেপির অন্দরমহলের খরব, উমা সাহস করে প্রধানমন্ত্রীকে যে চিঠি লিখেছেন তা অনেকেরই মনের কথা। প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেও ওবিসি সম্প্রদায়ের মানুষ। ‘বিধবা এবং আদিবাসী বলেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী অনাহূত নয়া সংসদ ভবনে বলে অভিযোগ এনেছিলেন স্ট্যালিন-পুত্র উদয়নিধি। তাহলে কি শুধু ব্রাহ্মণ্যবাদীর স্বার্থরক্ষার জন্য কাজ করছে এই দল? উঠছে প্রশ্ন