দেবশ্রী মজুমদার, শান্তিনিকেতন : পৌষমেলার কৌলিন্য বলতে মহর্ষি দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুর প্রবর্তিত পৌষ মেলা। তাঁর পুত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে প্রাধান্য দেন হস্ত শিল্প কুটির শিল্পকে যা গ্রামীন অর্থনীতির দিগন্ত খুলে দিতে সমর্থ। কবির আশ্রমে সেই গ্রামীন বোধ আজ নিরাশ্রয়।
সরেজমিন জরিপে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ক্ষতির পরিমাণ কয়েকশো কোটি। কবিগুরু হস্তশিল্প উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক আমিনুল হোদা বলেন, বোলপুর ও বোলপুর সংলগ্ন এলাকা মিলে হস্তশিল্পে কারিগরের সংখ্যা প্রায় চোদ্দ হাজার। তাদের উৎপাদিত বাজারের একমাত্র জায়গা এই পৌষমেলা। কিন্তু স্বেচ্ছাচারী উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী যিনি কথায় কথায় “ভোকাল ফর লোকাল” বলতেন, আমাদের শেষ করে দিলেন। শান্তিনিকেতন এখন তার সৌজন্যে “শাস্তিনিকেতন”।
শান্তিনিকেতন এলাকার মানুষ পিয়াল রায়চৌধূরী। গড়িয়ায় তাঁর দোকান আছে। আবার শান্তিনিকেতনে তাঁর ওয়ার্কশপ আছে। বাহিরি, ঘুড়িষা, পাঁড়ুই, সাত্তোর, ইলামবাজার ইত্যাদি এলাকার প্রায় তিনশো জন মহিলা কাজ করেন। বাটিক থেকে তসর, ব্যাঙ্গালোর সিল্ক সব ধরনের শাড়ি তৈরি হয়। যার বাজার দেশ বিদেশে। এই বিপুল উৎপাদন শান্তিনিকেতনের পৌষমেলায় স্টলের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য । কিন্তু গত দুবছরে প্রভূত ক্ষতি হয়েছে মানুষের।
তন্ময় দাসের বাড়ি রামপুরহাট মহকুমার বিষ্ণুপুরে। তিনি বলেন, সুতোর দাম বেড়েছে। থান তৈরী করে কোলকাতায় প্রিন্ট করি। হাত ঘুরে পৌষ মেলায় সেই শাড়ি বেচাকেনা হয়। এখন তো সব বন্ধ। বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সিং বলেন, এক এক জন শিল্পীর লক্ষাধিক টাকার ঋণ হয়েছে বাজারে। তাতে উপাচার্যের কি এসে যায়? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠানের একজন কর্তাব্যক্তির কাছে এমন আশা করা যায়? প্রধানমন্ত্রী বিশ্বভারতীর আচার্য। তিনি কেন ব্যবস্থা নিলেন না? তিনশো কোটি ক্ষতি এই মেলা না হওয়ার জন্য । এর দায় কে নেবে?
খোয়াই রোশানি রেজর্টের মালিক রুদ্র রায় বলেন, আমরা দোল আর পৌষ মেলার দিকে চেয়ে থাকি। ব্যাঙ্কের ই এম আই দিতে দিতে আমাদের দফারফা শেষ। শুধু হোটেল ব্যবসায় ক্ষতি পঞ্চাশ কোটি। আমি বুঝতে পারছি না, সব মেলা হচ্ছে। শুধু বিশ্বভারতীতে হলে অসুবিধা। এটা কি করে হয়?
শুধু কি হস্তশিল্প? কত বিচিত্র খাবারের সম্ভার। গোটা দেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত প্রান্তিক মানুষ এই মেলায় আসেন। চোদ্দোশো সাহিত্যগোষ্ঠীর মতো কতো ভালো অনুষ্ঠান হয়। এসবে ভ্রুক্ষেপ নেই উপাচার্যর। তাই আক্ষেপ সবার। অধ্যাপিকা সবুজ কলি সেন বলেন, মেলার মাধ্যমে প্রতিদিনের প্রাত্যহিকতা থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। গ্রামীন আর্থিক উন্নতি ছাড়াও মেলা তাঁর কাছে ছিল ভাবনার আদান প্রদানের মিলন ক্ষেত্র।( file picture)