বিশেষ প্রতিবেদক: হাসপাতালে অসংখ্য মুমূর্ষ রোগীর ভিড়। রয়েছে শিশু, মহিলা-পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। এছাড়া গাজার সেই হাসপাতাল চত্বরে আশ্রয় নিয়েছেন বহু যুদ্ধবিধ্বস্ত সাধারণ মানুষ। যুদ্ধের আবহে আল-আহলি-আরব হাসপাতালটিকে নিরাপদ ভেবেছিলেন তারা। কারণ, সমস্ত আন্তর্জাতিক আইনে রয়েছে যে, যুদ্ধ হলেও হাসপাতালে হামলা করা যাবে না। এছাড়া মানবিকতার সাধারণ দাবিও এটাই। কিন্তু তাঁদের ভুল ভাঙে মঙ্গলবার রাতে। কোনও পরোয়া না করে হাসপাতালে রকেট হানে নেতানিয়াহু-র ‘রক্ত পিপাসু’ ইসরাইলি সেনারা। নিমেষেই ‘কবরস্থানে’ পরিণত হয় হাসপাতাল ও আশেপাশের এলাকা। বিধ্বস্ত হাসপাতাল চত্বর ও করিডোরে শুধু রক্ত আর পোড়া লাশের গন্ধ।
হামলার দায় ঘাড় থেকে হটিয়ে দিতে ‘ফলস ন্যারেটিভ’ বা মিথ্যা আখ্যান তৈরির চেষ্টার প্রচেষ্টায় ইসরাইল। বন্ধুত্বে অন্ধ হয়ে যাওয়া বাইডেনও একই সুর তুলে ‘ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ’ নামে একটি সংগঠনের উপর দায় চাপিয়ে দেয়। নেতানিয়াহু সরকারের দাবি, ইসলামিক জিহাদের ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গাজার হাসপাতালে আঘাত হেনেছে। তার জেরেই এত মানুষের প্রাণহানি। কিন্তু নেতানিয়াহুর এই দাবিকে ‘মিথ্যে’ বলে তথ্যপ্রমাণ পেশ করেছেন আমেরিকার সমরাস্ত্র বিশেষজ্ঞ ডাইলান গ্রিফিথ।
গ্রিফিথ তাঁর প্রথম তথ্যপ্রমাণে প্রথমেই জানান, বিস্ফোরণের সময়কাল ছিল ০.৫ থেকে ০.৭৫ সেকেন্ড। এই সময়সীমার মধ্যেই দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে হাসপাতাল চত্বর। প্রবল কম্পনে ভেঙে গুড়িয়ে যায় নিকটবর্তী ঘরবাড়ি-নির্মাণ কাঠামো। বিস্ফোরকটির ওজন ছিল আনুমানিক ৩০০ থেকে ৬০০ পাউন্ডের মতো । ১২ দিনের যুদ্ধের পর্যালোচনা করে এটা বোঝা গেছে, হাসপাতালে বোমা মারার যে ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে তাতে যে আওয়াজ শোনা গিয়েছে, সেটা হামাস ব্যবহারকৃত ক্ষেপণাস্ত্র শধের অনুরূপ নয়। আর হামাসের কাছে এত অত্যাধুনিক ও উন্নতমানের ক্ষেপণাস্ত্র নেই। এটা সম্ভবত জয়েন্ট ডিরেক্ট অ্যাটাক মিউনিশন (জেডিএএম) শধ। যেটা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে আমেরিকা ব্যবহার করে থাকে। এর আগে আফগানিস্তান ও ইরাকের যুদ্ধে এই বোমার ভয়াবহতা দুনিয়া দেখেছে। হামাসের এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র প্রয়োগের ক্ষমতা এবং পরিকাঠামো নেই বলেই এই মার্কিন সমরাস্ত্র বিশেষজ্ঞের মত।
ইসরাইল বাহিনী যে দাবি করছে, তাও সত্যিই নয় বলে ডাইলান গ্রিফিথ জানিয়েছেন। কারণ, ইসলামিক জিহাদি গোষ্ঠীদের এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের পরিকাঠামো নেই, দক্ষতাও নেই। এ ধরনের অত্যাধুনিক অস্ত্র প্রয়োগের প্রশিক্ষণও নেই তাদের।
এমকে-৮২ অথবা এমকে-৮৩ হল সাধারণ বোমা। আমেরিকা, ন্যাটো-সহ প্রায় সব দেশই চিরাচরিত এই ধরনের বোমা ব্যবহার করে থাকে। এই বোমায় নিশানা নির্দিষ্ট করা থাকে না। জিবিইউ-৩৯ হল ছোট সাইজের বোমা। আমেরিকা এবং সহযোগী দেশগুলি যা ব্যবহার করে। জিবিইউ-১২ হল লেজার গাইডেজ বোমা। আমেরিকা-সহ সহযোগী দেশগুলির ভাণ্ডারে আছে। এজিএম-৬৫ হচ্ছে মাভেরিক ক্ষেপণাস্ত্র। খুব জরুরি হামলায় ব্যবহার করা হয়। বিমান থেকে মাটিতে ফেলা হয় এই বোমা। আর জেডিএম হল সুপার পাওয়ারফুল এক বোমা। নিমেষেই সব ছাই’য়ে পরিণত করতে পারে এই বিস্ফোরণ।
এদিন গাজার হাসপাতালে হামলাটিকে সু-পরিকল্পিত পরিকল্পনা বলে আখ্যা দেন মার্কিন সমরাস্ত্র বিশেষজ্ঞ ডাইলান গ্রিফিথ। তিনি জানান, ঘটনার দু’দিন আগে ইহুদি বাহিনীদের হাসপাতালে শরণার্থীদের ভিড় জমার কথা জানিয়েছিল আইডিএফ। তার ঠিক দু’দিন পর আল-আহলি-আরব হাসপাতালে হামলা চালানো হয়। যার পরিণতিসরূপ প্রাণ হারান প্রায় ৮ শতাধিক নিরীহ মানুষ। গাজা’কে পুরোপুরিভাবে মনুষ্যহীন করার আশায় এই হামলা চালায় তারা।
পরে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় বিশ্বের নিন্দার মুখে পড়ে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নেমেছে নেতানিয়াহু সরকার। তারা এখন বলছে, ইসরাইল নয়, এই হামলা চালিয়েছে নাকি ফিলিস্তিনি সংগঠন ইসলামি জিহাদ। কিন্তু মার্কিন সমরাস্ত্র বিশেষজ্ঞ ডাইলান গ্রিফিথ ইসরাইল-আমেরিকার যৌথ প্রোপাগান্ডার ফানুস ফুটো করে দিল।