শুভজিৎ দেবনাথ, ধূপগুড়ি: ফোর লেন মহাসড়কের জমি মাপতে এসে বিক্ষোভের মুখে পড়ল পুলিশসহ প্রশাসনিক কর্তারা। বিক্ষোভ দেখান জমির মালিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। জমি দিতে অনিচ্ছুক এলাকার কৃষকরাও। বিনা নোটিশে জমিতে ফোর লেনের কর্তৃপক্ষের লোকেরা মাপজোক করতে নামায় রীতিমতো তাদেরকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন জমি মালিকরা। জমির মালিককে জমি থেকে সরাতে পুলিশ ’গুলি চালানোর’ হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। এই নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভে ফুঁসছে ধূপগুড়ি কলেজ পাড়া সংলগ্ন খলাইগ্রাম এলাকা।
মহাসড়কের কাজ নিয়ে শুক্রবার সকাল থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘটনাস্থলে ধূপগুড়ি থানার বিরাট পুলিশ বাহিনী নামাতে হয়।
জানা গেছে, এদিন সকালে ধূপগুড়ি ব্লকের বারঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বৃদ্ধাশ্রম এলাকায় মহাসড়ক নির্মাণের জন্য জমি মাপার কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা বাধা দেওয়ায় সেখানে জমি মাপা সম্ভব হয়নি। এরপর ধূপগুড়ি-ফালাকাটা রাজ্য সড়কের পাশে খলাইগ্ৰাম এলাকায় জমি মাপতে গিয়ে ফের বাধার মুখে পড়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কর্মীরা। স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের জমি মাপতে বাধা দেন। বাধা অতিক্রম করে জমি মাপতে গেলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় পুলিশের সঙ্গে জমির মালিকদের। এমনকি মহিলারা রীতিমতো ঝাঁটা হাতে বাধা দেন তাদের। ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মহিলার গায়ে হাত দিয়েছে পুরুষ পুলিশ কর্মীরা। যা নিয়ে রীতিমতো উত্তেজনা ছাড়া গোটা এলাকায়। জমির মালিকদের না জানিয়ে আচমকাই পুলিশ-প্রশাসন তাদের জমিতে নামায় রীতিমতো তাদেরকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। জমির মালিকরা এমনকি তাঁদের বাড়ির মহিলারাও রীতিমতো ঝাঁটা নিয়ে প্রশাসনিক আধিকারিকদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এমনকি পুলিশ রীতিমতো কৃষকদের হুমকি দেয় যে তাদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হবে জমি মাপতে না দিলে, এমন অভিযোগ করেন কৃষকরা।
অনিচ্ছুক কৃষক কৃষ্ণপদ বসাক বলেন, আমরা জমি দিতে রাজি নই। তা সত্বেও জোরপূর্বক জমিতে নেমে মহিলাদেরকে ধাক্কাধাক্কি করেছে আমরা জমিতে মাপতে দেবো না বলায়, আমাদেরকে গুলি করবে বলে পুলিশ হুমকি দিয়েছে। বলছে গুলি করে দেবে।
শুবতি বালা বলেন, আমাদের তিন ফসলি জমি, আমরা কোনভাবেই দেব না, আমরা হাত জোর করে অনুরোধ করছি মমতা দিদির কাছে। টাকা যতই দিক তিন ফসলি জমি চলে গেলে আমরা কি করব। টাকা তো একদিন শেষ হয়ে যাবে। আমাদের তিন ফসলি জমি দিয়ে বাইপাস হতে দেব না।
জমির মালিক খাদিমুল ইসলাম বলেন, ফোর লেন মহাসড়ক এদিক দিয়ে যাওয়ার কথা নয়, তা সত্ত্বেও আজকে এসে জমির মাপ জোক করছে। সরকারের নিজস্ব জায়গা আছে রাস্তার উপর দিয়ে ফোর লেন মহাসড়ক নিয়ে যাক। আমাদের আবাদি জমি চলে গেলে আমরা ভবিষ্যতে কি করব।
এ বিষয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁরা সংবাদমাধ্যমকে দেখে পালিয়ে যান। ধূপগুড়ি বিডিওর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
ধূপগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা তৃনমূলের জেলা সম্পাদক রাজেশ কুমার সিং বলেন, বিজেপির ইন্ধনে ওখানে বিক্ষোভ হয়েছে। জমি নেই এমন লোকও তারা ওখানে জড় হয়েছিল। যে কৃষকরা জমি দিতে অনিচ্ছুক তাদের সঙ্গে আবার আলোচনা করা হবে। আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।