পুবের কলম প্রতিবেদক : দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা ডাক্তারি পড়ার জন্য বিপুল সংখ্যায় ইউক্রেনে পাড়ি দিয়েছিল। এক হিসেবে ১৮ হাজারেরও বেশি পড়ুয়া রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় সেখানকার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তারি পড়ছিল। ভৌগোলিক সীমারেখায় ইউক্রেন ইউরোপের মধ্যে পড়ে।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠবে, কেন এত ভারতীয় পড়ুয়া অসম, বাংলাসহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে ইউক্রেনে পাড়ি দিয়েছিল? প্রথমত, জনসংখ্যা অনুযায়ী ভারতে ডাক্তারদের যোগান কম। তাই এই পেশাটি ভারতীয় ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের কাছে সবদিক থেকে আকর্ষণীয় পেশা বলে গণ্য।
ভারতীয় বেসরকারি কলেজগুলিতে কিছুদিন আগেও ডাক্তারি পড়তে গেলে ৭০-৮০ লক্ষ টাকা গুনতে হত।
কিন্তু ইউক্রেন ইউরোপের দেশ হলেও সেখানে এর প্রায় অর্ধেকেরও কম খরচে ডাক্তারি ডিগ্রি হাসিল করা যায়। মধ্যবিত্ত অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের কাছে তাই দূর হলেও ইউক্রেনের ডাক্তারি ডিগ্রি খুবই আকর্ষণীয়। আর শুধু ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরাই নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ডাক্তারি পড়ার জন্য ছাত্রছাত্রীরা ইউক্রেনের মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে হাজির হচ্ছিল।
স্বীকার করতেই হবে, এই ডাক্তারি পড়ানোর সুযোগ দিয়ে ইউক্রেন অর্থনৈতিকভাবেও ভালভাবেই লাভবান হচ্ছিল। তাই ইউক্রেন সরকারের এর পিছনে ছিল উৎসাহ এবং সহজে ভিসা প্রদানের ব্যবস্থা। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে ছাত্রছাত্রীরা জীবন বাজি থেকে প্রবল কষ্ট সহ্য করে ইউক্রেন থেকে ভারতে ফিরে এল তাদের কি হবে? এদের অনেককেই আর অভিভাবকরা ইউক্রেনে পুনরায় পাঠাতে রাজি হবেন না। তাই এই ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি বিরাট প্রশ্ন চিহ্ন জেগে উঠেছে।
মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া প্রধানমন্ত্রী মোদিকে একটি ভাল প্রস্তাব দিয়েছে। ইউক্রেন ফেরত এইসব মেডিক্যাল পড়ুয়াদের ভারতের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে সিলেবাস শেষ করার ব্যবস্থা করা হোক। এক্ষেত্রে ইউক্রেনে যারা ইন্টার্নশিপ করছিল তাদেরকে ভারতে সুযোগ দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের কি হবে? এ সম্পর্কে মুখ খুলেছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কসহ অনেকেই। নবীন পট্টনায়ক প্রধানমন্ত্রী মোদিকে এক চিঠি লিখে বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ফেরত এইসব মেডিক্যাল পড়ুয়াকে ভারতের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। কারণ, ইউক্রেন সমস্যা এবং ওই অঞ্চলে বিদ্যমান উত্তেজনা খুব সহজে শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে না।
নবীন পট্টনায়ক বলেছেন, এই অভাবিত সংকট ভারতীয় পড়ুয়া ও অভিভাবকদের জন্য এক বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। যারা ডাক্তার হয়ে রোগীর সেবা করবে ভেবেছিল তারা নিজেরাই মানসিক রোগী হয়ে দাঁড়াল। তাই বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠছে, ইউক্রেন ফেরত মেডিক্যাল পড়ুয়াদের ভারতেই পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আর ভারতে এই পরিকাঠামো রয়েছে। এর জন্য খুব বেশি মেহনত করার প্রয়োজন হবে না।