পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: মুসলিম পার্সোনাল ল কে অকার্যকরী করতে মঙ্গলবার বিধানসভায় অভিন্ন দেওয়ানিবিধি বিল (UCC) পেশ করল উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকার। দেশের মধ্যে উত্তরাখণ্ডই প্রথম রাজ্য যারা এই বিল বিধানসভায় পেশ করল। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি নিজে বিলটি বিধানসভা কক্ষে পেশ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বিলটি পেশ করতেই ‘জয় শ্রীরাম’, ‘ভারত মাতা কি জয়’ ধ্বনিতে ভরে যায় গোটা অধিবেশন কক্ষ।
এই বিলে বিবাহ, বিচ্ছেদ, সম্পত্তির উত্তরাধিকার, দত্তক সহ একাধিক পারিবারিক বিষয়ের ক্ষেত্রে এবার একটাই নিয়ম রাখা হয়েছে। লিভ-ইন সম্পর্কের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা হয়েছে। যদিও বিলটি বিধানসভায় পেশ হওয়ার পরই সরকারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় এই বিল নিয়ে কোনও আলোচনা ও ভোটাভুটি হবে না। এই ঘোষণার পরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বিরোধীরা। তারা প্রবল বিক্ষোভ ও হইচই শুরু করে দেয়। বাধ্য হয়ে মুলতুবি করে দিতে হয় অধিবেশন।
উল্লেখ্য, সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশন ডেকেছিলেন ধামি। অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনেই পেশ হল এই বিতর্কিত বিল। রাজনৈতিক মহলের মতে এই বিল আইনে পরিণত হলে বিভিন্ন ধর্মের যে ব্যক্তিগত আইন রয়েছে সেগুলির সংশোধন করতে হবে। হিন্দু বিবাহ আইন, হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে সংশোধন করতে হবে। মুসলিম পার্সোনাল ল ও আর কার্যকরী হবে না। একইভাবে খ্রিস্টান, পার্সি, শিখদেরও ব্যক্তিগত আইন আর কার্যকরী হবে না।
[আরও পড়ুন: অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কখনোই মানব না, মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের যৌথ বিবৃতি]
এই বিল আইনে পরিণত হলে সব ধর্মের জন্য একই নিয়ম কার্যকরী হবে। ‘ মুসলিম পার্সনাল ল ’ বলে আর কিছু থাকবে না। সেগুলি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। যদিও প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে, আদিবাসীদের এই আইনের বাইরে রাখা হয়েছে। আইনে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও যারা ইতিমধ্যেই একাধিক বিবাহ করেছে তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে সম্পর্কে বিলে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই বলেই খবর। পাশাপাশি, বাবার সম্পত্তিতে ছেলে-মেয়ের সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। বিবাহ বর্হিভূত সন্তানেরও বাবার সম্পত্তিতে সমান অধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মেয়েদের বিয়ের বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর করা হয়েছে। আর ছেলেদের ২১। রেজিস্ট্রার বিয়ে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এই বিলে। লিভ-ইন সম্পর্কের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট কড়াকড়ি করা হয়েছে। কোনও যুগল লিভ-ইন করতে চাইলে প্রথমে তাদের পুলিশের কাছে গিয়ে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। সঙ্গে দিতে হবে লিভ-ইন সম্পর্কের ঘোষণাপত্র। আর তা দেখাতে ব্যর্থ হলে তাদের ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। ৩ মাসের জেলও হতে পারে। আর লিভ-ইন সম্পর্কের বিষয়টি নথিভুক্ত করতে বিলম্ব করলে ৩ মাসের জেল বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। বা উভয়ই হতে পারে। এই ধরনের সম্পর্কে থাকা যুগলের যদি সন্তান হয় তাহলে সেই সন্তান আইনি স্বীকৃতি পাবে। লিভ-ইন সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুগলের বয়স ২১ বছরের কম হলে বাবা-মায়ের থেকে অনুমতি নিতে হবে। এই আইনে দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিধানসভা ভোটে বিজেপির প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্ষমতায় এলে UCC কার্যকর করা হবে। সেইমতো ক্ষমতায় আসার পর তারা সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জনাপ্রকাশ দেশাইয়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে উত্তরাখণ্ড সরকার। সেই কমিটি অভিন্ন দেওয়ানিবিধির খসড়া তৈরি করে। সেই খসড়া রবিবার ধামির মন্ত্রিসভায় পেশ করা হলে সেখানে তা অনুমোদিত হয় সর্বসম্মতিক্রমে। এরপরই মঙ্গলবার সেই বিল বিধানসভায় পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী ধামি। উল্লেখ্য, উত্তরাখণ্ডে মোট বিধানসভা আসন ৭০টি। বিজেপির ৪৭জন সদস্য থাকায় তারাই একক সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে এই বিল পাস করাতে তাদের কোনও অসুবিধাই হবে না। উত্তরাখণ্ডের এই বিল খতিয়ে দেখছে অসম ও গুজরাত সরকারও। তারাও এই বিল আনার ভীষণভাবে পক্ষপাতী।
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.21-PM.jpeg)
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.20-PM-1.jpeg)
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.20-PM.jpeg)