কৌস্তুভ দে সরকার, করণদিঘি: উত্তর দিনাজপুর জেলার করণদিঘি ব্লকের ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেই বুধবার সন্ধ্যা থেকে জমে উঠল চিরকালের গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী হুক্কাবাতি খেলা। এই খেলাটি করণদিঘির রাজবংশী সমাজ জীবনের অন্যতম স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বা ঐতিহ্য। মূলত কালীপুজোর আগে চতুর্দশীর রাতে এলাকার অধিকাংশ মানুষ এই খেলায় মেতে ওঠেন।
তবে স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বনাথ সিংহ জানান, রাজবংশী সমাজে হুক্কাবাতি খেলাটি কেবলমাত্র কচিকাঁচার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। দেওয়ালীর আনন্দ যে বয়সের ধার ধারেনা, এটি তার প্রমাণ।
কামতাপুরী রাজবংশী সমাজের সভাপতি রমেশ চন্দ্র সিনহা বলেন, সকালে নদীর ধারের কাশগাছ তুলে এনে, ঘরবাড়ি লেপালেপি করে, স্নান সেরে পাটকাঠি ও কাশের গাছ দিয়ে মশাল আকারে হুক্কাবাতি বানানো হয়। তারপর সন্ধ্যায় সেটি জ্বালিয়ে আনন্দ করা হয়। রাজবংশীদের মধ্যে এই অবশিষ্ট জ্বলন্ত মশাল রাস্তার পাশে গেড়ে দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ রাজবংশী ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল বোর্ডের সদস্য মোহন লাল সিংহ বলেন, আমাদের রাজবংশী জাতির পরম্পরা হুকাহুকি পরব যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। কিছুদিন থেকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে এই হুকাহুকি খেলা বাদ দিয়ে চাইনিজ লাইট আর পটকা বাজি ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। তাতে যেমন পরিবেশ দূষণ হয়, অর্থনৈতিক ক্ষতিও হয়।
আমাদের সংস্কৃতিরও ক্ষতি হতে শুরু হয়েছে। হুকাহুকি খেলা আজকের নয়া প্রজন্মও প্রায় ভুলতে বসেছে। যাতে আমাদের যুগ যুগ ধরে চলে আসা সংস্কৃতি বিনষ্ট না হয়, সেজন্য রাজবংশী অধ্যুষিত গ্রামে গ্রামে আমাদের ছেলেমেয়ে ভাই ভাতিজারা হুকাহুকি খেলায় মেতে ওঠে।
অন্যদিকে করণদিঘির পান্ডেপুর নিবাসী ভোলা মাহাতো জানান, পাণ্ডেপুর, ভাকোলিয়া, হলদিবাড়ি, চিলাপাড়া, বেলবাড়ি, ভাটোয়ার, সাঁওতালপাড়া, হাটখোলা, ছোট সোহার, বড় সোহার, ইটালবাড়ি, ঝাড়বাড়ি, ক্ষেত্রাবাড়ি, বিকৌর, রসাখোয়া প্রভৃতি এলাকায় মাহাতো পাড়াগুলিতেও পরিবারের শিশুকিশোরদের হাতে পাটকাঠির মশাল বানিয়ে ঘরের উঠোন থেকে পাড়ার রাস্তায় দৌড় দিয়ে অমাবস্যা আঁধার কাটানোর প্রচেষ্টাই এই খেলার বৈশিষ্ট্য। হুক্কাবাতি নিয়ে দৌড়ানোর সময় একটি মজার ছড়া উচ্চারণ করতে হয়। ছড়াটি হল এরকম, “হুক্কাবাতি লইলাই। মচ্ছর মরে টইটাই।”