উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়,জয়নগর : জয়নগরে তৃণমূল নেতা খুন ও পাল্টা খুন ও তারপরে গৃহহীন বহু পরিবার। পুরুষশূন্য গ্রামে পুরুষ না ফেরায় চিন্তায় ও ভয়ে দিন কাটছে তাদের। জয়নগরের বামুনগাছিতে তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর সোমবার খুন হওয়ার পরেই জ্বলে উঠেছিল জয়নগরের বামুনগাছির দলুইখাকি গ্রাম। গ্রামের একের পর এক বাড়ি, দোকান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তার পর থেকেই কার্যত পুরুষশূন্য সেই গ্রাম। অধীর আগ্রহে তাঁদের ঘরে ফেরার অপেক্ষায় পরিবারের সদস্যেরা। পাশাপাশি, গত দু’দিনের মতো বুধবারও নিস্তব্ধতা এবং থমথমে পরিবেশে ডুবে রয়েছে দলুইখাকি গ্রাম।
অন্য দিকে, গত দু’দিন ধরে বাড়ির পুরুষ সদস্যদেরঅনুপস্থিতিতে চিন্তায় ঘুম উড়েছে দলুইখাকির বহু পরিবারের। পরিবারের পুরুষেরা বাড়ি না ফেরায় বাজারহাট হয়নি। গত দু’দিন ধরে কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছে পরিবারগুলি। গ্রামের এক পরিবারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা সদস্যের কথায়, ‘‘এই ক’দিন ধরে রাতে ঘুম নেই। রান্না হচ্ছে না। সে ভাবে খাওয়াদাওয়া হচ্ছে না। কোথায় থাকব, কী খাব বুঝে উঠতে পারছি না। বাচ্চাদের কী খেতে দেব জানি না।’’
গ্রামবাসীরা এ-ও দাবি করেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলির পাশে এসে দাঁড়ায়নি প্রশাসন। খাবারদাবার থেকে শুরু করে মাথা গোঁজার ত্রিপল—কোনও ত্রাণই এখনও হাতে এসে পৌঁছায়নি। পাশাপাশি, পরিবারের পুরুষ সদস্যেরা ফিরে না আসার কারণে আশা-আশঙ্কার ছাপ ফুটে উঠেছে গ্রামের বিভিন্ন পরিবারে। অভিযোগ উঠেছিল, সইফুদ্দিন খুনের পর বেছে বেছে সিপিএম নেতা-কর্মীদের বাড়িতেই হামলা চালানো হয়েছে। তার পর থেকেই গ্রাম ছাড়েন সেই সব পরিবারের পুরুষ সদস্যেরা।
সিপি আইএম নেতা অপূর্ব প্রামাণিকের দাবি,তাঁরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। যাতে নতুন করে কোনও অশান্তি না হয়, সে দিকেও নজর রাখা হচ্ছে। অন্য দিকে, জয়নগরের এই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার জয়নগর থানায় ডেপুটেশন দেন সুজাতা ব্যানাজীর নেতৃত্বে এসইউসিআইয়ের তিনজনের প্রতিনিধিদল।
এদিন এপিডিআরের জেলা সম্পাদক আলতাফ আহমেদের নেতৃত্বে ৬ জনের প্রতিনিধিদল দলুয়াখাকি গ্রামে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ,আশ্রয়হীনদের সাথে কথা বলেন এবং তথ্য অনুসন্ধান করেন।এদিন দক্ষিণ বারাসতের সিপিআইএমের দলীয় অফিসে গিয়ে দলুয়াখাকির আশ্রয়হীনদের সাথে কথা বলেন বাম নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গাঙ্গুলি,আর এসপি নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী সুভাষ নস্কর,চন্দ্রশেখর দেবনাথ সহ আরো অনেকে।
এদিন পুলিশ সূত্রে জানা গেল , জয়নগরের ঘটনায় নতুন করে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।মঙ্গলবার রাতে পুলিশের ১০টি দল বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে। ধৃত শাহরুল শেখকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যে সব তথ্য সামনে এসেছে তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় আরও বেশ কয়েকটি নাম সামনে এসেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। তাঁদের সন্ধানেও তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের মোবাইলগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে তাঁদের লোকেশন পেতে সমস্যা হচ্ছে।তবে আপাতত বিভিন্ন সূত্র ধরে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।এদিন ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এলাকায়।এদিন ও ঘটনাস্থলে যান বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পার্থ ঘোষ, এস ডি পি ও অতীশ বিশ্বাস জয়নগর থানার আই সি রাকেশ চ্যাটার্জী সহ আরো অনেকে।খুব শ্রীঘ্রই বাকি অপরাধীরা ধরা পড়বে বলে এদিন পুলিশ সূএে জানা গেল।