পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙে সেখানে গড়ে উঠেছে বিশাল রাম মন্দির। ২২ জানুয়ারি উদ্বোধন। তার আগে শনিবার একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করতে অযোধ্যায় এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রামনগরে তাঁর বর্ণাঢ্য রোড শো’ ঘিরে উঠল মুর্হুমুর্হু ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান।
একাধিক প্রকল্প উদ্বোধনের পর ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ অযোধ্যার জন্য এক বিশেষ দিন। আজ মনে হল যেন পুরো অযোধ্যা শহর রাস্তায় নেমে এসেছে। এই ভালবাসা এবং স্নেহের জন্য অযোধ্যাবাসীকে অনেক ধন্যবাদ। অযোধ্যার রাস্তায় মানুষের আগ্রহ দেখে আমি আপ্লুত।’ ৩০ ডিসেম্বর তাঁর অযোধ্যায় আসা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর বিশেষ একটি দিন, কারণ ১৯৪৩ সালের এই দিনে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্দামানে পতাকা উত্তোলন করে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশের জন্য আমাদের নতুন সংকল্প নিতে হবে। নিজেদের মধ্যে নতুন শক্তির সঞ্চার করতে হবে। সেজন্য অযোধ্যার এই পবিত্র মাটি থেকে আমি ১৪০ কোটি দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করছি, ২২ জানুয়ারি আপনারা সবাই নিজেদের ঘরে ঘরে শ্রীরাম জ্যোতি প্রজ্জ্বলন করুন। সেদিন সন্ধ্যায় যেন গোটা দেশ ঝলমল করে। রাম মন্দিরের উদ্বোধন হয়ে গেলে এখানে প্রচুর সংখ্যক মানুষ আসবেন। সেকথা মাথায় রেখে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে অযোধ্যা শহরকে স্মার্ট অযোধ্যার রূপ দিচ্ছে। এখন অযোধ্যা ধাম স্টেশনে ১০-১৫ হাজার মানুষের যাতায়াতের জায়গা আছে। স্টেশনের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে এখানে দিনে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ যাতায়াত করতে পারবেন।’
প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ‘এই ভারত ঐতিহ্য-পরম্পরা ও উন্নয়নের মেলবন্ধন। অযোধ্যাই তার প্রমাণ। নিজেদের শিকড়কে ভুলে গেলে চলে না। আগে অযোধ্যায় রামলালা তাঁবুর মধ্যে থাকতেন। এবার তিনি পাকা ঘর পেলেন। শুধু রাম লালা নন, দেশের চার কোটি গরবি পাকা ঘর পেয়েছেন।’ ২২ জানুয়ারি রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা তথা মন্দিরের উদ্বোধন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ গোটা বিশ্ব ২২ শে জানুয়ারির ঐতিহাসিক মুহূর্তটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। এমন পরিস্থিতিতে অযোধ্যার মানুষের মধ্যে চরম উদ্দীপনা থাকা স্বাভাবিক।’
ভাষণের কিছুটা অংশ এদিন ব্যয় করলেন লোকসভা ভোটের জন্য। তুললেন ‘মোদি-গ্যারান্টি’ প্রসঙ্গ। বললেন, ‘মোদির গ্যারান্টিতে এত শক্তি কেন? কারণ মোদি যা বলে তা করতে জীবন উৎসর্গ করে দেয়। দিন-রাত এক করে দেয়। এই অযোধ্যা নগরীও মোদির সেই গ্যারান্টির সাক্ষী।’
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘কাশী বিশ্বনাথ ধামের সংস্কার যেমন হচ্ছে, কেদারনাথ ধাম যেমন নতুন করে সাজছে তেমনই ৩১৫টি নতুন মেডিক্যাল কলেজ গড়ে উঠছে। আমরা চন্দ্র, সূর্য, সমুদ্রের গভীরে গিয়ে গবেষণা করছি। আজকের ভারতের প্রতিচ্ছবি অযোধ্যায় দেখা যাবে। আজ এখানে প্রগতির উৎসব হচ্ছে, কয়েক দিন বাদে এখানে পরম্পরার উদযাপন হবে। এভাবেই একুশ শতকে ভারত সেরা হয়ে উঠবে।’
শঙ্খধ্বনির মধ্যে শনিবার সকাল অযোধ্যায় পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এদিন প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার একাধিক প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অযোধ্যায় নতুন বিমানবন্দর ও পুনর্নির্মিত রেলস্টেশন সহ একাধিক প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। শহরের মধ্য দিয়ে একটি মেগা রোড শো করার পরই রেলস্টেশনটির উদ্বোধন করেন। সেখান থেকেই ২টি অমৃত ভারত এবং ৬টি নতুন বন্দে ভারত ট্রেনের শুভ সূচনা করেন।
শনিবার যে দু’টি অমৃত ভারত ট্রেন উদ্বোধন হয়েছে তার মধ্যে একটি পেল বাংলা। মালদহ থেকে ছাড়বে ট্রেনটি। এছাড়াও অযোধ্যায় ৪টি রামায়ণের ধাঁচে সৌন্দর্যমন্ডিত রাস্তা যথা— রামপথ, ভক্তিপথ, ধরমপথ ও শ্রী রাম জন্মভূমি পথের উদ্বোধন করেন তিনি। রাম নগরীতে রেল স্টেশন, বিমান বন্দরের উদ্বোধনের কিছু সময় পরই জনসভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন, জনসংযোগ করতেও দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে। অযোধ্যা জংশন উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী যান উজ্জ্বলা গ্যাস যোজনার এক প্রাপকের বাড়িতে। ওই দলিত পরিবারের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটান প্রধানমন্ত্রী। ওই পরিবারের সঙ্গে চা খেতেও দেখা যায় তাঁকে।