পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: ফিলিস্তিনের সোবহি ইয়াসিন, সাদি ও ইব্রাহিম সম্পর্কে ভাই। তাঁরা এখন আছেন দক্ষিণ গাজার রাফাহ এলাকার একটি বিদ্যালয়ে স্থাপন করা শরণার্থী শিবিরে৷ আরও অনেক ফিলিস্তিনির মতো এই তিন ভাইকে আটক করেছিল ইসরাইলি বাহিনী। তাঁদের সৌভাগ্য তাঁরা ফিরে এসেছেন। তবে ভয়ংকর অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করে ফিরতে হয়েছে তাঁদের। এই তিন ভাইয়ের অভিযোগ, আটকের পর ইসরাইলি বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের মারধর করেছেন। শুধু তা–ই নয়, নগ্ন করে সিগারেটের ছেঁকা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের শরীরে প্রস্রাব করেছেন ইসরাইলি সেনারা৷
শরণার্থীশিবিরে আরও অনেকেই এই তিন ভাইয়ের মতো ইসরাইলি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার ও অশোভন আচরণের মুখোমুখি হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। তবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্রের দপ্তর থেকে দেওয়া এক লিখিত প্রতিক্রিয়ায় দাবি করা হয়েছে, আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন মেনে আচরণ করা হয়। তবে সঙ্গে অস্ত্র কিংবা বিস্ফোরক বহন করছেন কি না, সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য কাপড় বদল করতে বলা হয়।
সোবহি, সাদি ও ইব্রাহিমের বাড়ি গাজার উত্তরাঞ্চলে জেইতুন এলাকায়। পেশায় দিনমজুর তাঁরা। জেইতুন থেকে আটক হয়েছিলেন তাঁরা। সপ্তাহ দুয়েক তাঁদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে অজ্ঞাতনামা জায়গায় রাখা হয়েছিল। তাঁরা কয়েক দিন একটি সামরিক ব্যারাকেও ছিলেন।
সে সময়ের অভিজ্ঞতা জানিয়ে সোবহি বলেন, ‘জোর করে আমাদের একটি ট্রাকে তোলা হয়। পায়ে আঘাত পাওয়ায় আমি উঁচু ট্রাকে উঠতে পারছিলাম না। এ সময় চারজন আমাকে পেছন থেকে মারধর করে। পরে একটি খোলা জায়গায় নিয়ে শরীরে সিগারেটের ছেঁকা দেওয়া হয়। পানি ছিটানো হয়। এমনকি আমাদের ওপর প্রস্রাব করে তারা।’ সাদি জানান, আটকের পর তাঁকে আরও অনেকের সঙ্গে একটি আবর্জনার ট্রাকে রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘ওরা আমাদের মারছিল। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে আরও বেশি মারা হচ্ছিল। এরপর আমাদের তল্লাশি করা হয়। অর্থ, আইডি কার্ড ও ফোন নিয়ে নেওয়া হয়।’
হাত ও চোখ বেঁধে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, বলেন তাঁদের আরেক ভাই ইব্রাহিম। তিনি বলেন, ‘ওরা আমাদের ঘুমাতে দেয়নি। শাস্তি হিসেবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল।’
পরবর্তীকালে তিন ভাইকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে গাজা-ইসরাইলের খেরেম শালম ক্রসিংয়ে ছেড়ে দেয় ইসরাইলি বাহিনী। হামাসের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় আরও অনেকের সঙ্গে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে রাফাহ এলাকায় আসেন তাঁরা। সেখানে শরণার্থীশিবিরে হাজারো উদ্বাস্তুর সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন তিন ভাই।