পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ২০০২ থেকে ২০২২, দীর্ঘ ২২ বছর পর গুলবার্গ সোসাইটিতে আনন্দের অনুষ্ঠান। আহমদাবাদের গুলবার্গ সোসাইটির কথা কারুর অজানা নয়। ইতিহাসের পাতায় হিংসাত্মক, মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী বহন করছে এই গুলবার্গ সোসাইটি। গোধরা পরবর্তী দাঙ্গার পর সহিংসতায় ৬৯ জনের রক্ত ঝড়েছিল এই সোসাইটিতে।
আহমদাবাদের গুলবার্গ সোসাইটিতে রফিক মনসুরির বড় মেয়ে মিসবাহর প্রাক বিবাহ অনুষ্ঠান বসেছিল তার বাসভবনে। তার পরিবারের সদস্য, বন্ধু, প্রাক্তন প্রতিবেশী এবং পরিচিতরা ১৯ বছর বয়সী মিসবাহর হলদি অনুষ্ঠানে একত্রিত হয়।
মনসুরি জানিয়েছেন, ২২ বছরে এই প্রথমবারের মতো গুলবার্গ সোসাইটিতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, যা আমাদের জীবনে একটু হলেও খুশি এনে দিয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে মশগুল ছিলেন বাড়ির সদস্যরা। সকলকে একসঙ্গে বসে খেতে দেখা যায়। পরে অবশ্য মনসুরির পরিবার মধ্যপ্রদেশের বারওয়ানিতে কন্যাকে নিয়ে গণবিবাহ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চলে যান। মিসবাহ তার তিন সন্তানের মধ্যে বড়। মিসবাহর পরে তার এক কন্যা ও পুত্র আছে।
মনসুরি বলেন, আমাদের পরিবারের এটি ছিল প্রথম বিবাহ। তার পরিবারের থেকেই গুলবার্গ সোসাইটিতে এই আনন্দ অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মনসুরি জানান, দাঙ্গার সময় তার নিজের বয়স ছিল ৩০। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যে দাঙ্গা পরবর্তী সময় এই গুলবার্গ সোসাইটি আঁকড়ে পড়েছিলেন। বাকিরা একে একে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। তিনি দাঙ্গায় তার স্ত্রী, পুত্র এবং অন্যান্য আত্মীয়দের ছয় সন্তান সহ পরিবারের ১৯ জন সদস্যকে হারিয়েছেন। পরে তিনি আবার বিয়ে করেন।
প্রসঙ্গত, গোধরা স্টেশনের কাছে সবরমতি এক্সপ্রেসের একটি গণহত্যার ঘটনা ঘটে, ৫৮ জন ‘করসেবক’ নিহত হয়। এর পর ২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ছিল সেই দিন যেদিন মুসলিম উপনিবেশ গুলবার্গ সোসাইটিতে রক্ত ঝড়েছিল। প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরি সহ ৬৯ জনকে হত্যা করা হয়। একটি বিশেষ আদালত ২০০২ সালে গুলবার্গ সোসাইটি গণহত্যার বিষয়ে রায় দেয়। ৬৯ জনের মধ্যে ৩১ জনকে নিখোঁজ ঘোষণা করা হয়েছিল এবং তাদের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। আদালত ৬৬ আসামির মধ্যে ৩৬ জনকে বেকসুর খালাস এবং ২৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে।
গুজরাত দাঙ্গার প্রেক্ষিতে নারোড়া পাটিয়া গণহত্যা গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলির মধ্যে অন্যতম। এই মামলায় গুজরাতের তৎকালীন মোদি মন্ত্রিসভার সদস্য মায়া কোদনানি অভিযুক্তদের অন্যতম। ২০১২ সালে নারোড়া পাটিয়া গণহত্যাকাণ্ডে ৯৭ জন মুসলিম মানুষের মৃত্যু হয়। সেই সংক্রান্ত মামলায় কোদনানির ২৮ বছরের জেলের সাজা হয়। যদিও ২০১৮ সালে গুজরাত হাইকোর্ট কোদনানিকে মুক্তি দেয়