পারিজাত মোল্লা: মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে উঠেছিল বহু চর্চিত কামদুনি গণধর্ষণ মামলা। ‘কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ খারিজ করে কামদুনি মামলায় এখনই কাউকে গ্রেফতার নয়’। পরিবর্তে রাজ্য এবং অভিযু্ক্তদের থেকে জবাব তলব করে নোটিস পাঠানোর নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ । দেশের শীর্ষ আদালতে আপাতত স্থগিত এই মামলার শুনানি।
সুপ্রিম কোর্টে আপাতত মুলতুবি হয়ে গেল কামদুনি মামলার শুনানি। কামদুনিকাণ্ডের মৃতার দাদা সুপ্রিম কোর্টে আলাদা এসএলপি করেছেন। এদিন এই মামলার শুনানি হয়। ওই মামলায় মামলাকারীর কাছে হলফনামা চেয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ।
আর মামলার সব পক্ষকে নোটিস দেওয়ারও নির্দেশ দেয় আদালত। বহু চর্চিত কামদুনি গণধর্ষণ মামলায় গত বছর ৬ অক্টোবর রায় ঘোষণা করে কলকাতা হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, -‘ নিম্ন আদালতে যাদের ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছিল, সেই সাজা রদ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, যেসব অভিযুক্তদের আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছিল নগর দায়রা আদালত, তাদের বেকসুর খালাস ‘ ।
কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, -‘ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণের অভাবেই এই রায় দেওয়া হয়েছে’। কামদুনি গণধর্ষণ কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনের প্রথম সারিতে থাকা মৌসুমী কয়াল, টুম্পা কয়ালরা রায়ের পরেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, শেষ দেখে ছাড়বেন। সুপ্রিম কোর্টে যাবেন তাঁরা। তারপরই দেখা যায়, নির্যাতিতার দাদা সুপ্রিম কোর্টে একটি পৃথক মামলা করেন।মামলাকারীদের দাবি , -‘ নিম্ন আদালত যে রায় দিয়েছে, তা যাতে বহাল থাকে, সে কারণে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা’। মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য ও ৮ অভিযুক্ত কাছে জবাব চেয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে , -‘ মামলাকারীর আবেদনের ভিত্তিতে সকলকে নিজেদের জবাব হলফনামা আকারে জমা দিতে হবে। হলফনামা দেওয়ার পরেই এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে’। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকারও সুপ্রিম কোর্টে গেছে। আদালত সুত্রে প্রকাশ, গত ২০১৩ সালের ৭ জুন পরীক্ষা দিয়ে কামদুনির বাড়িতে ফিরছিলেন কলেজ ছাত্রীটি। নিহত পরিবারের অভিযোগ, -‘ বাস থেকে নেমে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে তাঁকে রাস্তা থেকে জোর করে পাঁচিল ঘেরা একটি ঘরে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। সেখানেই দফায় দফায় চলে গণধর্ষণ’। এই ঘটনার তদন্ত প্রথমে স্থানীয় পুলিশ পরবর্তীতে রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি পায়।
এই মামলার তদন্তে নেমে সিআইডি ৮ জনকে গ্রেফতার করে। ২০১৬ সালে নিম্ন আদালত ( নগর ও দায়রা আদালত) তাদের মধ্যে ৬ ‘জনকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা শোনায়। ৩ জনকে ফাঁসি ও ৩ জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিলেন দায়রা বিচারক। নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা করে অভিযুক্তরা।
সেই মামলায় দোষীদের সাজা মুকুবের আর্জি মেনে নেয় হাইকোর্ট এর ডিভিশন বেঞ্চ । তবে বেশ কয়েকটি শর্ত রয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রাজারহাট থানার অনুমতি ছাড়া বাইরে যেতে পারবে না তারা।
এছাড়াও প্রত্যেক মাসের প্রথম ও তৃতীয় সোমবার রাজারহাট থানায় গিয়ে হাজিরা দিতে হবে অভিযুক্তদের। সেইসঙ্গে পাসপোর্ট থানায় জমা দিয়ে রাখতে হবে বলে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানায় ।