পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: খালিস্তানি ইস্যুতে কানাডার সঙ্গে সংঘাত নিয়ে কি নরম হল কেন্দ্র? বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরের মন্তব্য থেকে তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে রীতিমতো কনা ভাষায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়ে দিয়েছিলেন, কানাডার মাটিতে খালিস্তানিদের প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে ভারত বিরোধী কাজ হচ্ছে। সম্মেলন শেষ হওয়ার বেশ কিছুদিন পর এই খালিস্তানি ইস্যু নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন ট্রুডো।
বলেন, কানাডার খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের খুনে ভারতের ‘হাত’ রয়েছে। কানাডায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার পর্যন্ত করা হয়। জবাবে ভারতও দিল্লিতে নিযুক্ত কানাডার কূটনীতিককে ৫দিনের মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি, ভারতের তরফে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়। তারপর থেকে সময় যত গড়িয়েছে দুদেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব তত চওড়া হয়েছে।
এই আবহে শনিবার বিদেশমন্ত্রী জয়শংকর বলেন, ভারত ও কানাডার মধ্যে যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে তা আলোচনার মাধ্যমেই মেটানো উচিত।
প্রশ্ন উঠছে, হঠাৎ কেন কানাডার প্রতি সুর নরম করল ভারত? জয়শংকর এদিন বলেন, এক খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীর মৃত্যুর বিষয়ে নিজেদের মতপার্থক্য মেটাতে ভারত ও কানাডার উচিত একে অপরের সঙ্গে কথা বলা। তবে তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ যেটি তা হল—সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা এবং সহিংসতার প্রতি কানাডা সরকারের ‘সহানুভূতি’র ইস্যুটির অবশ্যই সমাধান হওয়া উচিত। এরপরই নিজ্জর হত্যা নিয়ে নিজেদের আগের অবস্থান থেকেও কিছুটা সরে আসতে দেখা গিয়েছে জয়শংকরকে।
এতদিন একযোগে এই ঘটনা নিয়ে কানাডার সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও এদিন জয়শংকর বলেন, ১৮ জুন খালিস্তানি চরমপন্থী হরদীপ সিং নিজ্জর খুনে ভারতীয় এজেন্টদের ‘সম্ভাব্য’ জড়িত থাকার কানাডার অভিযোগের সাথে সম্পর্কিত তথ্য খতিয়ে দেখতে ভারত প্রস্তুত। কানাডা কিছু অভিযোগ করেছে। আমরা তাদের জানিয়ে দিয়েছি এটা ভারত সরকারের নীতি নয়। তবে তারা (কানাডা) যদি এই বিষয়ে আমাদের সাথে সুনির্দিষ্ট এবং প্রাসঙ্গিক কিছু শেয়ার করতে প্রস্তুত থাকে তবে আমরা তা দেখতে রাজী রয়েছি।
জয়শংকর অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে কানাডা সরকারের সাথে ভারতের একটা চলমান সমস্যা তৈরি হয়েছে। সমস্যাটি সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা ও সহিংসতা সংক্রান্ত। ভারতের তরফে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যর্পণের অনুরোধ করা হলেও কানাডা তাতে সাড়া দেয়নি। কানাডার মাটিতে এমন কিছু ব্যক্তি এবং সংস্থা রয়েছে যারা স্পষ্টতই ভারতে সহিংসতা এবং অবৈধ কার্যকলাপের সাথে জড়িত, তারা নিজেরাই তা স্বীকার করেছিল। তারা কানাডায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তা গোপনে নয়। এখানে একাধিক সমস্যা রয়েছে। তাই, আমি মনে করি সংশ্লিষ্ট সরকারগুলিকে একে অপরের সাথে কথা বলতে হবে।
জয়শংকরের দাবি, তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভানের সাথে ভারত ও কানাডার মধ্যে চলমান কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। ভারতের বিদেশমন্ত্রীর দাবি,
ভারতের কূটনৈতিক কর্মীদের কানাডায় ধারাবাহিকভাবে এবং ক্রমাগত ভয় দেখানো হয়েছে। সেখানে আজ তাদের পক্ষে কাজ চালিয়ে যাওয়া নিরাপদ নয়। জয়শংকর বলেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী যে অভিযোগগুলি উত্থাপন করেছেন, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন।