পারিজাত মোল্লা: ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য সরকারি আইনজীবী হিসাবে দেবাশিস রায় নিযুক্ত হয়েছেন।কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে এবার ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ রাজ্য। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাদা কৃষ্ণেন্দু অধিকারীর দায়ের করা মামলায় এর আগে বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ পুলিশের পাঠানো ১৬০ নোটিস খারিজ করার নির্দেশ দিয়েছিল এর পাশাপাশি এসডিপিও এগরাকে ব্যক্তিগত ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায়ের নির্দেশিকা রয়েছে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ রয়েছে, আদালতের থেকে আগাম অনুমতি না নিয়ে কৃষ্ণেন্দু অধিকারীকে কোনও নোটিস পাঠানো যাবে না।
সিঙ্গেল বেঞ্চের ওই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে এবার ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য। প্রসঙ্গত, ওই মামলায় বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ সংশ্লিষ্ট এসডিপিও-কে ৫ লাখ টাকা জরিমানারও নির্দেশ দিয়েছে। সেই নির্দেশের উপরেও স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হল রাজ্য সরকার।পূর্ব মেদিনীপুরের বেশ কিছু মামলার তদন্ত করছে রাজ্য পুলিশ। সেই তালিকায় রয়েছে রাস্তার বাতিস্তম্ভ সংক্রান্ত এক মামলাও। ওই মামলায় সিআরপিসির ১৬০ ধারায় কৃষ্ণেন্দুর অধিকারীকে সাক্ষী হিসেবে ডেকে পাঠিয়েছিল পুলিশ। সাক্ষী হিসাবে ডেকে আয়কর হিসাব চাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠে। তবে বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ সেই নোটিসকে খারিজ করে দিয়েছিল।
বিচারপতির নির্দেশ রয়েছে , এই ধরনের নোটিস পাঠাতে গেলে আগাম অনুমতি নিতে হবে। ওই মামলায় সাক্ষী হিসেবে ডেকে পাঠানো হলেও, কৃষ্ণেন্দু অধিকারীর দশ বছরের আয়কর রিটার্নের তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছিল পুলিশ। শুধুমাত্র সাক্ষী হিসেবে ডেকে পাঠিয়ে, কেন আয়কর রিটার্নের তথ্য চেয়ে পাঠানো হচ্ছে? তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ। এই নিয়ে পুলিশকে তিরস্কারও করেছিলেন বিচারপতি। পাশাপাশি এসডিপিও-কে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানারও নির্দেশ দিয়েছিল বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ। এই দুই নির্দেশকেই চ্যালেঞ্জ করে এবার হাইকোর্টের উচ্চতর বেঞ্চের দ্বারস্থ রাজ্য। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বড়দা কৃষ্ণেন্দু অধিকারীকে হয়রানির মামলায় পূর্বে মেদিনীপুরের এগরার এসডিপিও’কে 5 লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল গত ১ নভেম্বর ।
ওইদিন এই জরিমানা করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় । নির্দেশে তিনি জানান, -এসডিপিও-কে নিজের পকেট থেকে এই টাকা দিতে হবে । আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এই জরিমানার টাকা না-দিলে আদালত রুল ইস্যু করবে’ । এর পাশাপাশি বিচারপতি জানিয়েছেন, এই মামলায় কোনও নোটিস ইস্যু করা যাবে না । আগের ইস্যু করা নোটিস খারিজ করা হল । এই মামলার শুনানির সময় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের তীব্র ভর্ত্সনার মুখে পড়তে হয় পুলিশ-প্রশাসনকে । নির্দেশে বিচারপতি আরও উল্লেখ করেন, -‘একজন সাক্ষীকে এভাবে হয়রানি ছাড়া আর কিছুই নয় । পুলিশ কোনও নাগরিককে হয়রানির জন্য তৈরি হয়নি’ । বিচারপতির প্রশ্ন, -‘সাক্ষী হিসেবে ডেকে কীভাবে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন চাইতে পারেন ?’উল্লেখ্য, পল্লব দত্ত নামে এক ব্যাক্তি পূর্ব মেদিনীপুরে দীঘা-মেচেদা রোডের দু’ধারে যে এলইডি আলো দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ করেন ।
কাঁথি পৌরসভা এলাকায় ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে ওই আলোর ব্যবস্থা করা হয় । ২ থেকে ৩ কোটি টাকা খরচ করে ওই আলো রাস্তার দু’পাশে দেওয়া হয় । কিন্তু সেগুলো কোনও পরিচর্যা করা হচ্ছে না । তাই কাঁথি পৌরসভার তত্কালীন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ মামলা দায়ের করেন পল্লব দত্ত নামে ওই ব্যক্তি । সেই সময় কাঁথি পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন শুভেন্দু অধিকারীর ছোট ভাই সৌমেন্দু অধিকারী । গত ১ নভেম্বর আদালতে শুভেন্দু-সৌমেন্দুদের বড়দা কৃষ্ণেন্দু অধিকারীর তরফে আইনজীবী ছিলেন রাজদীপ মজুমদার । তিনি আদালতে ব্যঙ্গের সুরে বলেন, ”অভিযোগকারী মর্নিংওয়াকে গিয়ে দেখেন এবং মেচেদা বাইপাস থেকে দিঘা বাইপাসের আলোর সমস্যা নিয়ে একটি অভিযোগ জানান । সেই দিনই কাঁথি থানায় বিরোধী দলনেতার ভাইয়ের (সৌমেন্দু অধিকারী) নামে এফআইআর দায়ের হয়ে গেল । সেই মামলাতেই ১৬০ ধারায় নোটিস ইস্যু করে ডেকে পাঠানো হয়েছে কৃষ্ণেন্দু অধিকারীকে ।”
আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার আরও বলেন, ”পুলিশ-প্রশাসন কী জিজ্ঞাসা করতে চান, সেই প্রশ্ন দু’দিন আগে দিলে কৃষ্ণেন্দু অধিকারী বুঝতে পারবেন এবং তদন্তে সহযোগিতা করতে পারবেন । ১৬০-এর নোটিশ দিয়ে মামলাকারীকে আইটি রিটার্নের কাগজ নিয়ে যেতে বলা হয়েছে । এই মামলায় আইটি রিটার্নের কাগজ কী কারণে প্রয়োজন ?”এর পর ক্ষুব্ধ বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্যের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, -‘পুলিশ যদি কোনও কিছুর তদন্তের জন্য কাউকে তলব করে, তাহলে কি তাঁর কাছে ১০ বছরের আয়কর রিটার্ন সংক্রান্ত তথ্য চাইতে পারে ? পুলিশ অযথা হয়রানি করার জন্য তাঁকে তলব করেছে । একজন ভারতীয় নাগরিককে এই ভাবে পুলিশ হয়রানি করতে পারে না’ ।সরকারি আইনজীবী আদালতে জানান, -‘তিনি বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে জানাবেন’ । ক্ষুব্ধ বিচারপতি বলেন, ”অবিলম্বে এর উত্তর চাই ।” কিন্তু রাজ্যের আইনজীবী সময় দিতে আবেদন জানান । তারপরই বিচারপতি আরও ক্ষোভে ফেটে পড়েন । এবং নির্দেশে বলেন, ”পুলিশকে অবিলম্বে এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে নিষেধ করা হচ্ছে । না হলে আদালত কঠোর পদক্ষেপ করতে বাধ্য হবে ।”পাশাপাশি এই ধরনের নোটিশ দেওয়ার জন্য এসডিপিও এগরাকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের । যদি পুলিশ আধিকারিক যদি টাকা না দেন, তাহলে ওই আধিকারিকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান বিচারপতি । এই মামলায় ডিভিশন বেঞ্চে গেল রাজ্য সরকার। খুব তাড়াতাড়ি এই মামলার শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে।