পুবের কলম প্রতিবেদক : এবারের রমযানটা ওদের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা। ইউক্রেনে চলছে রাশিয়ার সেনা অভিযান। আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণে বদলে গিয়েছে সাধারণ মানুষের জীবন। নতুন করে সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হচ্ছে তাদের। ইউক্রেনের মুসলিমদের রমযান এবার সত্যিই কঠিন। ক্রিমিয়ান তাতার এবং ইউক্রেনের মুসলিম লীগের প্রধান নিয়ারা নিমাতোভা বলেন, আমাদের সবকিছু এডজাস্ট করতে হবে।
রাশিয়ার অভিযানে বাস্তুচ্যুত হওয়া মুসলিম পরিবারগুলোর জন্য ইফতারের আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন এই মুসলিম নেতা। তিনি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা জাপোরিঝিয়া থেকে ফোনে আল জাজিরাকে জানান , ‘অনেক মুসলিম এরই মধ্যে ইউক্রেন ছেড়ে বিদেশে চলে গেছে, যারা আছেন তাদেরও সাহায্য দরকার।’ রুশ সেনা অভিযানের পাঁচ সপ্তাহে ইউক্রেন বাস্তুচ্যুত হয়েছে এক কোটির মতো মানুষ। যাদের মধ্যে ৪০ লাখের বেশি মানুষ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে, আর বাকিরা দেশের মধ্যেই হয়েছেন বাস্তুহারা।
ইউক্রেনের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ মানুষ মুসলিম। যুদ্ধের আগে ইউক্রেনে ২০ হাজারের বেশি তুরস্কের মানুষ ছিলেন। এবারের রমযানটা ইউক্রেনের মুসলিমদের জন্য যেমন কঠিন, তেমন আবেগের। কারণ এবার তাদের দেশে মুহূর্মুহু বোমা পড়ছে। কারফিউ চলছে, চলাচলেও আছে নিষেধাজ্ঞা। যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়ায় অনেক মুসলিমই তাদের পরিবারের সাথে ইফতারির মতো আয়োজনে অংশ নিতে পারবেন না। কেউ আছেন নিজের ঘর থেকে অনেক দূরে।
নিমাতেভা বলেছেন, ‘আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা পেতে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি । আমরা আমাদের পরিবার, আত্মা, দেশ ও ইউক্রেনের মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করব।’ ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া যখন রুশ অধিকারে চলে যায় তখন নিজের এলাকা ছেড়ে নিমাতোভা জাপোরিঝিয়ায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন নিমাতেভা। তিনি বলেন, ‘যখন আমরা ক্রিমিয়ায় বাস করতাম, কখনও ভাবিনি একদিন আমাদের এই এলাকা ছাড়তে হবে।’
নিমোতোভা আরও বলেছেন, ‘জাপোরিঝিয়ায় বিভিন্ন কমিউনিটির মুসলিমরা আছেন। বিভিন্ন দেশের মুসলিম আছেন। তারা সবাই তাদের মতো করে রোযা রাখেন। ইফাতের প্রস্তুতি নেন। একদিন আমরা ভারতীয় বিরিয়ানি খাই, আরেকদিন খাই ফিলিস্তিনের মানতসেভ, অন্যদিন উজবেক প্লোভ।’ তবে যুদ্ধে সেই সম্মিলিত আয়োজনেও এবার ভাটা পড়েছে, চারিদিকে অনিশ্চয়তা। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা সাইরেন শুনলেই লুকিয়ে পড়ি। আমরা জানি না কাল কী ঘটবে। এটা কঠিন মানসিক অবস্থা।’