পুবের কলম প্রতিবেদক: পশ্চিমবাংলার ‘বড় মসজিদ’ বলে পরিচিত মসজিদ-ই-নাখোদার প্রধান ইমাম (পেশ ইমাম) নিয়োগের প্রশ্নে আপাতত বিরতি পড়ল। বর্তমানে নাখোদা মসজিদের যে মুতাওয়াল্লী ও তাঁদের সহযোগীরা রয়েছেন তাতে মুতাওয়াল্লীদের সংখ্যা কমপক্ষে ৫ জন প্রয়োজন বলে ওয়াকফ বোর্ডের সিইও এক চিঠি লিখে ট্রাস্টিদের জানিয়েছেন। ওয়াকফ বোর্ড টেকনিক্যাল প্রশ্ন তুলে বলেছে, কয়েকজন মুতাওয়াল্লীর মৃত্যুর ফলে বর্তমানে মুতাওয়াল্লীদের সংখ্যা মাত্র ৩-এ দাঁড়িয়েছে। ওয়াকফ বোর্ডের মতে, ১৯০৭ সালের কলকাতা হাইকোর্ট এক রায়ে বলেছে, মুতাওয়াল্লীদের সংখ্যা কমপক্ষে ৫ অথবা সর্বোচ্চ ৭ হতে হবে। কিন্তু মুতাওয়াল্লীদের মৃত্যুর ফলে বর্তমানে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৩-এ। কাজেই তাঁরা নতুন প্রধান ইমাম নিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাঁরা শুধু দৈনন্দিন রুটিন কাজ পরিচালনা করতে পারবেন। এছাড়া ওয়াকফ বোর্ডের সিইও আরও লিখেছেন, নতুন মুতাওয়াল্লী শূন্যপদে নিয়োগের জন্য ট্রাস্টিরা এক বছর আগে যে আবেদন করেছিলেন তা ওয়াকফ বোর্ডে পেন্ডিং বা মুলতুবি রয়েছে। কাজেই মুতাওয়াল্লীদের নতুন প্রধান ইমাম নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যা নেই।
ওয়াকফ বোর্ড এই চিঠিটি পাঠিয়েছে মুতাওয়াল্লী কাচ্চি মেমন কমিউনিটি ওয়াকফের নামে। উল্লেখ্য, এই কাচ্চি মেমনরাই নাখোদা মসজিদ তৈরি করেন। এরা মূলত ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। এই মসজিদটি তৈরি করেন মেমন সম্প্রদায়ের নেতা হাজী জাকারিয়া। সে সময় ওই জায়গায় দু’টি মসজিদ ছিল। তা একত্রিত করে নাখোদা মসজিদ তৈরি করা হয়। এর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ১৮৫৪ সালে। আর সেই হিসেবে এর তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব প্রথম থেকেই রয়েছে কাচ্চি মেমন সম্প্রদায়ের হাতে।
ওয়াকফ বোর্ডের সিইও অবশ্য একটি বিকল্প পথও বলেছেন। তিনি বলেছেন, প্রধান ইমামকে কনগ্রিগেশন বা উপাসকমণ্ডলী (এক্ষেত্রে নাখোদায় নামায আদায়কারী মুসল্লীরা) নিয়োগ করতে পারবেন। এই চিঠিতে আরও বলা হয় নাখোদায় ইতিমধ্যেই দু’জন ইমাম নামাযে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এই চিঠি পাওয়ার পর নাখোদা মসজিদের কাচ্চি মেমন কমিউনিটি ওয়াকফের বর্তমান পরিচালকরা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, তাঁরা আল্লামা আফরোজ ইমামকে প্রধান বা পেশ ইমাম হিসেবে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মাওলানা সাবির সাহেবের ইন্তেকালের পর প্রধান ইমামের পদটি শূন্য ছিল। কিন্তু ২০ সেপ্টেম্বর ওয়াকফ বোর্ড প্রেরিত একটা অফিস মেমো পাওয়ার পর তাঁরা আল্লামা আফরোজ ইমামের নিয়োগ স্থগিত রেখেছেন। ওয়াকফ বোর্ডের ওই মেমোর বক্তব্য অনুসারে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পরে পুবের কলমকে অন্যতম মুতাওয়াল্লী মুহাম্মদ জাহিদ আহমেদ বলেন, তাঁরা আল্লামা আফরোজ আহমেদকে প্রধান ইমাম হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু ওয়াকফ বোর্ডের চিঠির বক্তব্য পালন করার জন্য তাঁরা আপাতত তাঁকে নামায পড়ানোর দায়িত্ব অর্পণ করছেন না।
এর ফলে প্রধান ইমাম নিয়োগ নিয়ে নাখোদা মসজিদে যে বিবাদ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল তা আপাতত দূর হল। কিন্তু বিষয়টি ঝুলে রইল। তবে যদি ওয়াকফ বোর্ড মুতাওয়াল্লীদের শূন্যপদ পূরণের আবেদনপত্র ঝুলিয়ে রাখে তাহলে এ নতুন মুতাওয়াল্লী নিয়োগ করা মুশকিল হবে। ফলে বাংলার প্রধান মসজিদের পেশ ইমাম নিয়োগের প্রশ্নটি অমীমাংশিতই থেকে গেল।