নসিবুদ্দিন সরকার, হুগলি: ঘরের মধ্যে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন এক ব্যক্তি। ঘুম ভাঙাতে শেষ পর্যন্ত ভাঙতে হয় দরজা। বিস্ময়কর ওই ঘটনায় এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটি ঘটেছে চুঁচুড়ার বড়বাজার এলাকায়।
সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকার বাসিন্দা সৌমেন নিয়োগী। বছর ৪২ এর সৌমেনবাবু পেশায় রেলকর্মী। চুঁচুড়ার বড় বাজার এলাকায় এক আবাসনে তিনি বসবাস করেন। তার স্ত্রীর বাপের বাড়ি বর্ধমানে ছিল বিয়ের অনুষ্ঠান। সৌমেনবাবুর স্ত্রী আগেভাগে শুক্রবার বাপের বাড়ি পৌঁছে যান। শনিবার দুপুরে সৌমেনবাবুর যাওয়ার কথা ছিল। শুক্রবার বাপের বাড়ি পৌঁছানোর সংবাদ ফোন করে সৌমেনবাবুকেও জানিয়ে দেন তাঁর স্ত্রী। শনিবার সকালেও সৌমেনবাবুর সঙ্গে তার স্ত্রীর ফোনে কথা হয়। তারপর থেকেই সৌমেনবাবুর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার স্ত্রীর।
অন্যদিকে শনিবার দুপুরে সৌমেনবাবুর বর্ধমান শ্বশুর বাড়ি পৌঁছানোর কথা ছিল। ওইদিন বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন কিনা তা জানতে তার স্ত্রী তাকে ফোন করেন। কিন্তু স্বামীকে একাধিকবার ফোন করার পরও ফোন না ধরায় তার স্ত্রী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনতে গুনতে অবশেষে স্বামীর খোঁজ নিতে স্ত্রী সৌমেনবাবুর বন্ধু মনোজিৎকে ফোন করেন। সৌমেনবাবু তার ফোন কেন ধরছেন না সে বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার অনুরোধ করেন।
মনোজিৎবাবু দেখেন সৌমেনের ঘরের কোলাপসিবল গেট ভিতর থেকে দরজা বন্ধ। একাধিকবার কলিং বেল বাজিয়েও দরজায় ধাক্কা দিয়ে ও সৌমেনবাবুর কোন সাড়াশব্দ পাননি। ওই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই আবাসনের সামনে স্থানীয় কৌতুহলী মানুষদের ভিড় জমে যায়। সকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ওই খবর পাওয়া মাত্রই তড়িঘড়ি সৌমেনবাবুর স্ত্রী বর্ধমান থেকে দু’জনকে সঙ্গে নিয়ে চুঁচুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বিষয়টি জানতে পেরে চুঁচুড়া থানার পুলিশ কাঠের মিস্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ওই আবাসনের পৌঁছে দরজা ভাঙেন। ঘরের মধ্যে ঢুকে পুলিশের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।
দেখা যায় সৌমেনবাবু খালি গায়ে, বারমুন্ডা পরে, এসি চালিয়ে, চাদর গায়ে দিয়ে হাত পা ছড়িয়ে আরাম করে ঘুমাচ্ছেন। অবশেষে ঘুম ভাঙতেই পুলিশকে দেখে চমকে ওঠেন সৌমেনবাবু। তবে তিনি তার থেকেও বেশি চমকেছেন এলাকাবাসীকে। সৌমেনবাবুর গভীর ঘুমের কথা পথেমধ্যে তার স্ত্রীকেও জানানো হয়। স্ত্রী, স্বামীর প্রতি রাগান্বিত হয়ে পড়েন। মাঝপথ থেকে স্ত্রী আবার বাপের বাড়ি ফিরে যান। পুলিশ দরজা ভেঙ্গে সৌমেনবাবুর ঘুম ভাঙায়। রবিবার সকালে সৌমেনবাবু বর্ধমানে বিয়েবাড়িতে পৌঁছে যান।