শুভায়ুর রহমান– কৃষ্ণনগর নাতনীর কাছে গল্প করছিলেন দিদিমা। জীবনের গল্প। সে গল্পে নিজেই চরিত্র। সংসার ঘরকন্নার কাজ সামলে নিপুণ হাতের জাদুতে গড়ে তুলতেন নকসী কাঁথা। নদিয়ার করিমপুরের একটি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সৃজনী সাহা তার দিদিমা অঞ্জলি বিশ্বাসের মুখে কতবার শুনেছে– কিভাবে নকসী কাঁথা বুনতেন। নাতনীর আবদারে বাক্স থেকে কাঁথা বের করে দেখিয়ে বললেন– আর এসব কাঁথা বোনা হয় না রে। আগে কত বুনেছি। বয়স বেড়েছে। কত উত্থান পতন দেখেছেন। জীবনের বহমান ধারায় নিপুণ হাতের কারুকাজ নকসী কাঁথা গাঁথনী যেন আজও স্মৃতিতে ভেসে আসে। কিন্তু তাঁর আক্ষেপ– এখনকার মানুষ আর নকসী কাঁথা বোনে না।
শুধু কি শিমুরালির বাসিন্দা অঞ্জলি বিশ্বাস? এমন বহু অঞ্জলি বিশ্বাসই ঘরদোরের কাজ সামলে নকসী কাঁথা গাঁথতেন বা বুনতেন। কিন্তু ইদানীংকালে সেসব অতীত। সচরাচর দেখা যায় না। হরেক রঙের সুতোয় ফুল লতাপাতা– পাখি– তাজমহল হুবহু গড়ে উঠত। স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে পলাশি পাড়ার মার্জিয়া বিবি জানালেন– আগে ছেলে মেয়ে মানুষ করেছি। আবার হাতেই কাঁথা বুনেছি। মেয়ের শ্বশুর বাড়ি দেওয়ার জন্য নকসী কাঁথা– ছেলেদের জন্য নকসী কাঁথা এসব করেছি। এখন চোখে খুব একটা নজর হয় না। আর শরীরেও সায় দেয় না।
কালীগঞ্জের নার্গিস বিবির কথায়– পড়াশোনা করেছি। আমরা তিন-চার বান্ধবী একজায়গায় বসে রেডিয়োর গান শুনতে শুনতেই কাঁথা বুনতাম। কিন্তু সে রেডিয়ো নেই– কাঁথা বোনাও নেই। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক চাপড়া বাঙ্গালঝি কলেজের একজন ছাত্রীর কথায়– মায়ের কাঁথা বোনা দেখেছি। নিজেও পারি একটু আধটু। সত্যি বলতে কি মোবাইল সব সময়টুকু নিয়ে নিয়েছে। সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে কত কিছু। নকসী কাঁথাও তার মধ্যে একটি। নকসী কাঁথা পল্লী কবি জসিমউদ্দীনের লেখায় উঠে এসেছে। সাজু রূপাইয়ের কাহিনী আমাদের মনকে আন্দোলিত করে। নকসী কাঁথা একটা সত্যিই নস্টালজিয়া। মনটা ভারাক্রান্ত হয়। হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের সাধের নকসী কাঁথা বললেন চাপড়া বাঙ্গালঝি কলেজের অধ্যাপিকা সাহানা মণ্ডল।