দেবশ্রী মজুমদার, শান্তিনিকেতন: বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তার তিন পড়ুয়ার উপর পর্যায়ক্রমে কয়েকবার সাসপেনশনের মেয়াদ বৃদ্ধির পর একেবারে তিন বছরের জন্য সাসপেনশনের নির্দেশ দেয়। বুধবার কলকাতা উচ্চ আদালতের সিঙ্গল বেঞ্চ তার অন্তর্বতীকালীন আদেশে সেই সাসপেনশনের গেরো পাকাপাকিভাবে উঠে গেল। পাশাপাশি, পনেরো দিনের মধ্যে শিক্ষকদের সাসপেনশন নিয়ে বিশ্বভারতীকে রিভিউয়ের নির্দেশ দিল আদালত। এদিনের আদেশে বেশ কয়েকটি বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিশ্বভারতীর মতো প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য অবনমনের ক্ষেত্রে আদালত কর্তৃপক্ষ ও আন্দোলনরত পড়ুয়া কাউকে রেয়াত না করে কতগুলি পরামর্শ দিয়ে সতর্ক করেছে। আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছে, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের যে এই ধরনের একটা বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে ক্রমাগত নিচের দিকে টেনে নামানোর চেষ্টা হচ্ছে। এতে কোনও পক্ষই তার দায় অস্বীকার করতে পারে না। উপাচার্য ও প্রশাসনিক কর্তাদের নমনীয় হয়ে অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে হবে। আদালতের পর্যবেক্ষণ যে বিশ্বভারতীর এই আন্দোলনে ইন্ধন যোগাচ্ছে বহিরাগতরা। পড়ুয়াদের বুঝতে হবে রাজনীতির কারবারীরা নিজেদের স্বার্থে তাদের ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। তাই এসব করার আগে যে কাজের জন্য তারা বিশ্বভারতীতে আছেন, অর্থাৎ পঠনপাঠনে তাদের জোর দেওয়া উচিৎ। আদালত বহিরাগতদের ইন্ধনের কথা বললেও, এব্যাপারে অর্থনৈতিক বিভাগের ছাত্র ফাল্গুনী পান বলেন যে, বিশ্বভারতী নামের মধ্য সম্মিলিত কথাটি আছে। তাই বহিরাগত কথাটি অপ্রয়োজনীয় এবং অপ্রাসঙ্গিক। এখানে যারা আন্দোলনে যোগ দেন তারা প্রত্যেকেই কোন না কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। তাদের মধ্যে যেমন ব্যবসায়ী ছিলেন, তেমনি ছিলেন সাধারণ মানুষ পথচারী। পাশাপাশি তিনি বলেন, তিনটি বিষয় নিয়ে আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছিল। পড়ুয়াদের এবং শিক্ষদের সাসপেনশন প্রত্যাহার এবং উপাচার্যের পদত্যাগ। এই তিনটি দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন জারি থাকবে। তাঁদের দীর্ঘ ন’মাস এবং দুটো সেমিস্টার নষ্ট হওয়ায় তারা হতাশ হয়ে পড়েন। তবে সাসপেনশন প্রত্যাহারে তার খুশি।
আদালত আগেই বহিষ্কৃত তিন পড়ুয়ারাকে পঠন পাঠন যোগাদান করাতে হবে এই মর্মে ৮ সেপ্টেম্বরের শুনানিতে নির্দেশ দেয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে। ১০ সেপ্টেম্বর ক্লাসে যোগ দেওয়ার নোটিশ পেলেও, কিন্তু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কোনও ক্লাসের লিঙ্ক না পাঠিয়ে সেই নির্দেশকে অবমাননা করছে বলে ফের আদালত অবমাননার মামলা করেন ছাত্র সোমনাথ সৌ। যদিও এই অভিযোগ বিশ্বভারতী খারিজ করে দেয়। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে তারা আবারও ক্লাস করতে পারবে বলে জানান, বিচারপতি রাজ শেখর মান্থা।
এদিন একই সঙ্গে উপাচার্য গৃহের নিরাপত্তার জন্য যে পাঁচ সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল তা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় রাজ্য পুলিশকে। পরিবর্তে এখন থেকে একজন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।