পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ ইমামে হারামাইন শরীফাইন-এর জেনারেল প্রেসিডেন্সি এবং সউদি আরবের সমস্ত মসজিদের ইমাম স্কলার ও আলেমদের পক্ষ থেকে ভারতের ঘটনা নিয়ে এক বিবৃতি জারি করা হয়েছে। সউদি আরবে ইতিহাসে এটা নজিরবিহীন ঘটনা। ভারতের মুসলিম ইস্যুতে সউদি আরবের সরকারি মহলে তোলপাড়ের ঘটনা ইতিপূর্বে কখনোই দেখা যায়নি। মক্কা শরীফের সম্মাননীয় ইমাম শাইখ আবদুল রহমান আল সুদাইসের স্বাক্ষর করা এই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মসজিদুল হারামাইন বা মক্কা শরীফের মসজিদুল হারাম এবং মদিনা শরীফের মসজিদে নববীর পক্ষ থেকে এবং সউদি আরবের সমস্ত মসজিদের অধ্যক্ষ, প্রচারক, খতিব, ইমাম, আলেম এবং কর্মী ও খাদেমদের পক্ষ থেকে ভারতে নবী সা.-র অবমাননার তীব্র নিন্দা জানানো হচ্ছে। আল্লাহ নবীর উপর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান থাকলে কখনোই এই ধরনের জঘন্য ঘটনা ঘটতে পারত না বলে আমরা মনে করি। যারা নবী সা.-এর অবমাননা করেছে, তারা নিশ্চয়ই কোনোদিন হযরত মুহাম্মদ সা.-র জীবনী পড়েনি। তাঁরই কারণে এই দুনিয়া বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে, মানবিকতার আলোয় উজ্জ্বল হয়েছে এবং দয়া ও অনুগ্রহ বর্ষিত হয়েছে মহান প্রতিপালকের পক্ষ থেকে।
উল্লেখ্য, শাইখ আবদুল রহমান আল সুদাইস মক্কা শরীফের ইমামের দায়িত্ব পালনের সঙ্গে মক্কা ও মদিনার মসজিদ নিয়ে গঠিত সরকারি ব্যবস্থাপনার প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন। তাই তাঁর পক্ষ থেকে জারি করা এই বিবৃতিতে সউদি রাজ পরিবার ও সরকারের অনুমোদন রয়েছে বলে সকলেই মনে করছিল। সউদি আরব সমস্ত ধর্মকে সম্মান জানানোর জন্য এই বার্তা দিল সেইসঙ্গে তামাম দুনিয়ার মানুষের শান্তির লক্ষ্যে ধর্মের প্রতি আঘাত না করার আহ্বান জানানো হল।
ভারতে বিজেপি সংগঠন তাদের এক নেত্রীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিক্রিয়া দেখার পর। সউদি আরব সেই পদক্ষেপকে স্বাগত জানানোর পর দেশের ইমাম ও আলেমদের এই প্রতিক্রিয়া দেখে অনেকেই মনে করছেন নবী সা.-র অবমাননা নিয়ে ভারতের শাসক দলের এই ব্যবস্থা গ্রহণ সত্ত্বেও আরব দেশে ক্ষোভ ধূমায়িত হচ্ছে।
অবশ্য বিজেপি তাদের সংগঠনের দুই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আগে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রেস রিলিজ জারি করে জানিয়েছিল নূপুর শর্মা ও জিন্দালদের বক্তব্যের সঙ্গে তারা একমত নয়। তারা সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু আরব দুনিয়ায় এর প্রতিক্রিয়া তীব্র হতে থাকে। সে-কারণে কাতার, কুয়েত দাবি জানায়, ক্ষোভ কমাতে ভারত সরকার ‘ক্ষমা প্রার্থনা করুক। তারা মনে করছে মোদি সরকার কেন নীরব রয়েছে, আর দোষটা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টির উপর। যদিও ঘরে-বাইরে দাবি উঠছে, সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। সংগঠন ব্যবস্থা নিতে পারে নাও পারে? কিন্তু সরকারের করণীয় কি? কেন ভারতীয় দূতাবাসকে বিজেপির প্রেস রিলিজ ছড়িয়ে বোঝাতে হচ্ছে সরকারের মনোভাবের বিষয়টি?
এখানে আরও একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে, বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার অবমাননাকর মন্তব্যের পরই ওমানের গ্রান্ড মুফতি শাইখ আহমদ বিন হামাদ আল খালিলি ‘বয়কট ইন্ডিয়া’ ডাক দেওয়ার আওয়াজ বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ে আরব দুনিয়ায়। আর সোশ্যাল মিডিয়ার ‘ট্রোল’ দেখে ধীরে ধীরে মুখ খুলতে থাকেন আরব শাসকরা। ওমানের গ্রান্ড মুফতির ফলোয়ারের সংখ্যা বেড়েছে ১০ গুণ সেইসঙ্গে মক্কা শরীফের ইমামের এই নিন্দাজনক বিবৃতিতে ভারতের ঘটনা আরবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করবে আরও কিছুদিন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সেইসঙ্গে ইমামের বিবৃতিতে চাপ বাড়ল ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের উপরও। রিয়াদের রাজদরবার ও মক্কা-মদিনার মসজিদ থেকে ভারতের ঘটনার নিন্দার ঝাঁঝ এবার ছড়িয়ে দেওয়া হল সমগ্র সউদি আরবে।