উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, কুলতলি: সুন্দরবনে বাঘের কামড়ে মৃত আরও দুই মৎস্যজীবী পরিবারকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিলো আদালত। সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমনে মৃত্যুর পরেও ক্ষতিপূরণ পায়নি বহু মৃত মৎস্যজীবীদের পরিবার। বার বার নানা মহলে দরবার করেও সুরাহা হয়নি তাদের। বাধ্য হয়ে কলকাতার উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সুন্দরবনের কুলতলির বাসিন্দা দুই মৃত মৎস্যজীবীর পরিবারের সদস্যেরা। সেই মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য ঐ দুই পরিবারকে ক্ষতিপূরণের ৫ লক্ষ করে টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য সরকারকে।
বিচারপতির নির্দেশ দেন, চার সপ্তাহের মধ্যেই রাজ্য সরকারকে ক্ষতিপূরণের টাকা ঐ পরিবারদের হাতে তুলে দিতে হবে।জানা যায়, গত ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ-কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হয়েছিল কুলতলির কাঁটামারির বাসিন্দা দিলীপ সর্দারের। দিলীপের স্ত্রী শেফালি সর্দার বুধবার সকালে জানান, বন দফতরের অনুমতি নিয়েই জঙ্গলে গিয়েছিলেন দিলীপ। কিন্তু বন দফতর সহ সমস্ত সরকারি দফতরে আবেদন-নিবেদন করেও আমি কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি।তাই আমি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলাম।এই রায়ে আমি খুশি।
অপরদিকে কুলতলির মৈপিঠের বাসিন্দা অমল দণ্ডপাঠকে বাঘে আক্রমণ করেছিল ২০২১ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর। দিন দু’য়েক পরে সে মারা যান। স্ত্রী তপতীর বুধবার বলেন, অমলও বৈধ অনুমতিপত্র নিয়ে জঙ্গলে ঢুকেছিলেন। তবু ক্ষতিপূরণ দিতে গড়িমসি করছিল প্রশাসন।তবে তিনিও আদালতের এই রায়ে খুশি। সুন্দরবন এলাকায় দীর্ঘদিন বাঘে কামড়ে মৃত, আহতদের পাশে থেকে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর।এর আগে এপিডিআরের উদ্যোগেই কুলতলির বাসিন্দা শান্তিবালা নস্কর স্বামী লখিন্দর নস্করের মৃত্যুর জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করে আদালতে গিয়েছিলেন।এর পরে আদালতের নির্দেশে ক্ষতিপূরণ পান শান্তিবালা।
এ বারও এপিডিআর-এর উদ্যোগেই গত সপ্তাহে আদালতের দ্বারস্থ হন শেফালি, তপতীরা।এদিন আবেদন কারীদের তরফে আইনজীবী ছিলেন কৌশিক গুপ্ত এবং শ্রীময়ী মুখোপাধ্যায়। শ্রীময়ী বলেন, “চার সপ্তাহের মধ্যে দুই পরিবারকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। প্রত্যন্ত এলাকার এই সব মানুষজন আগে আদালত পর্যন্ত পৌঁছতে পারতেন না। এখন আসছেন, ফলে বিচারও পাচ্ছেন।” এ ব্যাপারে এপিডিআরের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সহ সম্পাদক মিঠুন মণ্ডল বুধবার বলেন,নানা অজুহাতে এঁদের ক্ষতিপূরণ আটকে রাখে প্রশাসন। ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয় এই সব পরিবারগুলি। আমরা চাই, কোনও গড়িমসি না করে বাঘের আক্রমণে মৃত ও জখম প্রতিটি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।আর এই সব মানুষদের পাশে এপিডিআর ছিলো আগামীদিনেও থাকবে।রাজ্যে সরকারের উচিত এই সব মানুষের ক্ষতিপূরনের পাশাপাশি তাদের কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া।কারন সুন্দরবনে বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় এই জাতীয় দূর্ঘটনা গুলো ঘটে চলেছে।এব্যাপারে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, আইন মেনে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।তবে আদালতের নির্দেশ এলে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলিকেও দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।