পুবের কলম প্রতিবেদক, বসিরহাট: করোনা আবহে লকডাউনের জেরে প্রায় দেড় বছর বন্ধ রয়েছে স্কুলের পঠনপাঠন। তবে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে পুজোর পরে স্কুলগুলোকে আংশিকভাবে খোলার চেষ্টা করছে। যদিও পড়ুয়ারা যাতে সঠিক পুষ্টি পায় তার জন্য চাল, ডাল, ছোলা, সোয়াবিন ও চিনি সহ একাধিক খাদ্যদ্রব্য স্কুলের তরফে দেওয়া হচ্ছে প্রতি মাসেই। রাজ্যের সর্বত্রই নিয়মমতো সেই ছবি দেখা গেলেও একেবারেই ভিন্ন চিত্র বসিরহাট মহকুমার সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের দক্ষিণ সাহেবখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গ্রামবাসী তথা অভিভাবকদের অভিযোগ, এই স্কুলে শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। আর শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দুজন। অভিযোগ প্রধান শিক্ষক দীপ্তেন্দু গায়েনের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ ছ মাস ধরে তিনি স্কুলমুখী হন না। যার জেরে স্কুলের কচিকাঁচারা তাদের প্রাপ্য খাদ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি শিক্ষা দফতরের অ্যাক্টিভিটি টাস্ক ।কিন্তু ঠিক কি কারণে আসেন না ওই প্রধান শিক্ষক?
অভিভাবকরা জানান, ওই প্রধান শিক্ষক এলাকার একাধিক শিক্ষিত যুবকের কাছ থেকে আপার প্রাইমারিতে চাকরি দেওয়ার নাম করে বহু টাকা নিয়ে বসে আছেন। কারও কাছ পাঁচ লাখ, কারো কাছ থেকে ৬ লক্ষ আবার কারুর কাছ থেকে ৭ লক্ষ টাকা নিয়েছে। মোট প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন ওই শিক্ষক এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের। অভিযোগকারীদের ভয়ে তারপর থেকে তিনি আর বিদ্যালয়মুখী হন না। তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেন না। আর স্কুলে তো আসেনও না। এ ব্যাপারে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ওই গ্রামের শতাধিক অভিভাবক। তারা জানাচ্ছেন, এক ফসলী এই সুন্দরবনের পড়ুয়ারা এই মিড ডে মিলের উপরেই অনেকটা নির্ভরশীল। কারণ সুন্দরবনের দিন আনি দিন খাই মানুষগুলোর পক্ষে তিনবেলা খাওয়ার জোগাড় করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। এই মিড ডে মিল বন্ধ থাকায় অভিভাবকরা যথেষ্টই সমস্যায় পড়েছেন। পাশাপাশি কচিকাঁচারা তাদের প্রাপ্য খাদ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা এও জানান, বিদ্যালয়ের চাবি থাকে প্রধান শিক্ষকের কাছে। কিন্তু তিনি না আসায় স্কুলে পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছে কয়েক কুইন্টাল চাল, ডাল, চিনি ও ছোলা। আবার অভিভাবকরা এও জানান, অন্যান্য বিদ্যালয় যেমন পরীক্ষার্থীদের অ্যাক্টিভিটি টাস্ক এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু সেখানেও বঞ্চিত দক্ষিণ সাহেবখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় এর পড়ুয়ারা। সেখানে ২০২০ সালের মার্চের লকডাউনের এর পর থেকে এখনো পর্যন্ত কোনও শিক্ষার্থীকে অ্যাক্টিভিটি ট্রাকের প্রশ্নপত্রও দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি নতুন যে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে তাদের ভর্তির খাতায় নামও ওঠেনি। এটা নিয়েই যথেষ্ট ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন গ্রামবাসীরা। এদিন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা গেলে তাদের দেখে স্কুলের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে বাধ্য হন তারা। ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষার কর্মাধ্যক্ষ তুষার মন্ডল, সাহেবখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য স্বপ্না মণ্ডল ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নিশিকান্ত গাইন সহ একাধিক গ্রামবাসী ও অভিভাবকরা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে হিঙ্গলগঞ্জ বিডিও অফিস ও যোগেশগঞ্জ এসআই অফিসে অভিযোগও জানিয়েছেন। তাদের দাবি অনতিবিলম্বে বিদ্যালয়ের যথাযথ পরিষেবা চালু করতে হবে। এবং সঠিক পরিকাঠামো গড়ে তুলে পড়ুয়াদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। যা একমাত্র সম্ভব ওই শিক্ষককে ওই স্কুল থেকে অপসারণের মাধ্যমে। তারা কোনমতেই ওই শিক্ষককে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে আর দেখতে চাইছেন না।