পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ চার বছরের ছোট্ট মেয়ে জলভেজা চোখে তার বাবাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। বাবাকে দেখতে না পেয়ে ভাত-পানি ছেড়েছে ছোট্ট শিশু। শুধু ছোট্ট মেয়েটিই নয়, পরিবারের স্বজনরা শোকে বিহ্বল।
৫২ বছর বয়সী দারের মৃত্যুর পর তার বাড়িতে শোকের মাতম। কাশ্মীরের বারামুলায় সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন হেড কনস্টেবল গোলাম মুহাম্মদ দার। দারের স্ত্রী ও সাত কন্যাসন্তানের এখন অসহায় অবস্থা। আগামী দিনের কথা ভাবলেই শিউরে উঠছেন তাঁরা। এই নিয়ে ভূস্বর্গে গত তিন দিনে তিনটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটল। সন্ত্রাসীদের হামলায় গত তিন দিনে প্রাণ হারালেন দুই পুলিশকর্মী-সহ এক পরিযায়ী শ্রমিক। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাহ।
জানা গিয়েছে, ঘটনার সময় বারামুলার কারালপোরায় নিজের বাড়িতেই ছিলেন জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের হেড কনস্টেবল গুলাম মুহাম্মদ দার। আচমকাই তাঁর বাড়িতে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এলোপাথাড়ি গুলি চালায় দারের উপর। জখম পুলিশকর্মী দারকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
হেড কনস্টেবল গুলাম দারের শ্যালক বশির আহমেদ বলেন, ‘গুলামের পরিবার শেষ হয়ে গেল। তাঁর সাত মেয়ে। ছোট মেয়ের বয়স মাত্র চার বছর। সে বাড়ির চারপাশে তার বাবাকে খুঁজছে। অভিভাবকহীন হয়ে পড়ল গুলামের স্ত্রী-সন্তানরা।’ তিনি আরও বলেন, গুলাম মুহাম্মদ দার ১৯৯৬ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। গুলমার্গ, অনন্তনাগ এবং পহলগাঁও-সহ কাশ্মীরজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় ট্যুরিজম পুলিশের বিশেষ অফিসার হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
৫২ বছর বয়সী দারকে পুলওয়ামাতেও পোস্টিং দেওয়া হয়েছিল। তাঁর ২৭ বছরের চাকরিজীবনে, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ ছিল না। তিনি সকলের সঙ্গে অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করতেন।
কাশ্মীর জোন পুলিশের তরফে এক্স হ্যান্ডেলে পুলিশকর্মী গুলাম দারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে লেখা হয়েছে, ‘আহত পুলিশকর্মী গুলাম দার সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন। আমরা শহিদ গুলাম দারের প্রতি আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। এলাকাটি ঘিরে রাখা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের খোঁজে অভিযানও চলছে। পাত্তান বারামুলা থানায় একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে’। গুলাম দারের স্বজনরা জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের আবেদন করেছেন, ‘ন’জনের পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন গুলাম দার। আমরা লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে (মনোজ সিনহা) এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে দার কন্যাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে পরিবারকে কিছু সহায়তা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’
সেদিনের কথা বলতে গিয়ে কেঁপে উঠলেন দারের শ্যালক বশির। তিনি বলেন, সন্ধ্যা তখন প্রায় ৬.৪৫। আমি নামায পড়তে ঘর থেকে বের হচ্ছিলাম। এমন সময় এলাকায় গুলি চলার শধ পায়। পাঁচটি গুলি চলে। গিয়ে দেখি বাড়ির বাইরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে গুলাম। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি।’