পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ বৃহস্পতিবার সর্বসম্মতিক্রমে রায় দিয়েছে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগের জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটিতে থাকবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, ভারতের প্রধান বিচারপতি এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা।
যদি লোকসভায় কোনও বিরোধী দলনেতা না থাকেন তাহলে সর্ববৃহৎ বিরোধী দলের নেতাকে রাখতে হবে সেই কমিটিতে। এই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ভারতের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করবেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে। এই প্রথা চলবে যতদিন না ভারতের সংসদ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য কোনও আইন প্রণয়ন করছে। সুপ্রিম কোর্টের রায় খুব তাৎপর্যপূর্ণ।
কারণ এতদিন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার-সহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ভোগ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিচারপতি কে এম যোশেফের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চ বৃহস্পতিবার একগুচ্ছ আবেদনের শুনানি করতে গিয়ে উক্ত রায় দিয়েছে। আর্জিগুলিতে আবেদন করা হয়েছিল, নির্বাচন কমিশনারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে তাদের বাছাই করা হোক সেই প্রক্রিয়ায়, যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় সিবিআইয়ের ডিরেক্টর বাছতে।
সাংবিধানিক বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি কে এম যোশেফ ছাড়াও বিচারপতি অজয় রাস্তোগি, বিচারপতি অনিরুদ্ধ বোস, বিচারপতি ঋষিকেশ রায় এবং বিচারপতি সিটি রবিকুমার। নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত পাঁচটি ধারা রয়েছে সংবিধানে, ৩২৪ থেকে ৩২৯। তাতে বলা হয়েছে ভারতের যাবতীয় নির্বাচনের দায়িত্ব, নির্দেশ এবং নিয়ন্ত্রণ থাকবে নির্বাচন কমিশনের হাতে। যেখানে থাকবেন একজন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং তত সংখ্যক নির্বাচন কমিশনার, যেটি সময়ে সময়ে ঠিক করবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি।
ভারতের সংবিধানে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য কমিশনারের নিয়োগের প্রক্রিয়ার কথা পরিষ্কার করে বলা নেই। ভারতের রাষ্ট্রপতি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবেন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সুপারিশে। পরে ভারতের সংসদ ১৯৫০ সালে দ্য রিপ্রেজেনটেশন অব দ্য পিপল অ্যাক্ট এবং ১৯৫১ সালে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতার পরিধি বাড়াতে প্রণয়ন করে দ্য রিপ্রেজেনটেশন অব পিপল অ্যাক্ট।
এই আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনে হাতে নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্ত ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়। তবে চল্লিশ বছর ধরে নির্বাচন কমিশন চালিত হত শুধুমাত্র মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের মাধ্যমে। ১৯৮৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি একক নির্বাচন কমিশনারের ক্ষমতা খর্ব করতে নির্বাচন কমিশনে একাধিক নির্বাচন কমিশনের নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। তখন একক নির্বাচন কমিশনার ছিলেন পেরি শাস্ত্রী, তাঁর সঙ্গে রাজীব গান্ধির সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না।
১৯৮৯ সালের ৭ অক্টোবর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আর ভেক্টর রমন সংবিধানের ৩২৪(২) ধারা প্রয়োগ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। ১৯৮৯ সালের ১৬ অক্টোবর মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও আরও দু’জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়। একজন ছিলেন এস এস ধানোয়া এবং দ্বিতীয়জন ছিলেন ভি এস শেগিল।