মোল্লা জসিমউদ্দিন: ভূপতিনগর কাণ্ডে পুলিশের এক রিপোর্টে ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্ট। সোমবার ভূপতিনগর মামলার শুনানি চলে বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের বেঞ্চে। এদিন ভূপতিনগর থানা যে রিপোর্ট আদালতে জমা করে, তা দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি।
এদিন এই মামলার শুনানি পর্বে ক্ষুব্ধ বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “ওসিকে বলতে হবে আদালতের রক্ষাকবচের ফলে কবে কোথায় কোন নির্বাচন বানচাল হয়েছে?” আদালতের নির্দেশ, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই রিপোর্টের ব্যাখ্যা দিতে হবে ভূপতিনগর থানার ওসিকে। এই রিপোর্টে আদালতের অবমাননা হয়েছে বলে মনে করছেন বিচারপতি। বিচারপতি আরও প্রশ্ন করেন, “এই ধরনের রিপোর্ট লেখার সাহস পেলেন কী করে ওসি?”
আদালত সুত্রে প্রকাশ, তপন মিদ্দা নামে ভূপতিনগরের স্থানীয় এক বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে গত তিন বছরে ২৬টি ফৌজদারি মামলা রুজু করেছে পুলিশ। ১৫টি চার্জশিটও জমা করেছে পুলিশ। কিন্তু মামলাকারীর অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর-ই নেই। একটি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তারপর একের পর এক মামলায় তাঁকে ‘সোন অ্যারেস্ট’ দেখানো হয়। তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। আদালত এবার পুলিশের কাছে জানতে চায়, আদতে তপন মিদ্দার বিরুদ্ধে কতগুলো মামলা রয়েছে? কতগুলো মামলায় অভিযোগ রয়েছে, তা নিয়ে রিপোর্ট তলব করা হয়।
ভূপতিনগর থানার তরফে সোমবার রিপোর্ট জমা করা হয়। সেখানে পুলিশের তরফে বলা হয়, আদালতের নির্দেশে রক্ষাকবচ দেওয়া হলে, নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করতে পারে। আর সেই রিপোর্ট দেখেই ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি। ভূপতিনগরের বিজেপি নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলায় পুলিশের রিপোর্টে ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্ট।
অভিযুক্তরা হাইকোর্টের রক্ষাকবচ পেলে লোকসভা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে, পুলিশের এই রিপোর্টের পরিপেক্ষিতে সোমবার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। রিপোর্টের ব্যাখ্যা তলব করে ভূপতিনগর থানার ওসিকে সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
গত ২০২২ সালে ভূপতিনগরে তৃণমূলের বুথ সভাপতি রাজকুমার মান্নার বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনায় ২০ জন বিজেপি নেতার নামে মামলা করেছিল পুলিশ। ভুয়ো মামলায় তাদের ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই বিজেপি নেতারা। ২০২২ সালের ২ ডিসেম্বর রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে তৃণমূলের বুথ সভাপতি রাজকুমার মান্নার বাড়িতে প্রবল বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণে রাজকুমারের বাড়ির অ্যাসবেসটাসের চাল উড়ে যায়। দেহ উড়ে গিয়ে পড়ে কয়েক শ মিটার দূরে ধান ক্ষেতে। ওই ঘটনায় দেহ লোপাট করে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে।
এই ঘটনায় বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ। বিজেপির দাবি, কেউ কোনও অভিযোগদায়ের না করলেও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাজ্য সরকারের নির্দেশে বিজেপি কর্মীদের ভুয়ো মামলা দিয়েছেন জেলা পুলিশের আধিকারিকরা। আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।