আহমদ হাসান ইমরান: গাজায় নিহতের সংখ্যা এখন সরকারিভাবে ৯০০০ পেরিয়ে গেছে। আর আহতের সংখ্যা ৩২ হাজার। এর মধ্যে নারী ও শিশুদের সংখ্যাই বেশি। হামাসের সৈন্যরা কতজন মারা গেছে, তার কোনও সংখ্যা ইসরাইলও বলতে পাছে না। বৃহস্পতিবার রাত্রি ৯টা পর্যন্ত এটাই হচ্ছে আপডেট। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত পুবের কলমে উল্লেখ করা হয়েছিল, ‘গাজার বাসিন্দাদের মরু-নির্বাসনে পাঠানোর নীল নকশা প্রস্তুত’। আর এই হচ্ছে ইসরাইল ও তার পার্টনার আমেরিকার যৌথ পরিকল্পনা।
জো বাইডেন এতদিন পর বৃহস্পতিবার বলেছেন, তিনি গাজার হত্যাযজ্ঞে ‘ছোট্ট একটি বিরাম’ চান। তবে এ কথা তিনি বলেছেন প্রবল চাপের মুখে। বৃহস্পতিবারই জো বাইডেন যখন বক্তব্য রাখছিলেন, তখন এক ইহুদি নারী উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট আপনি এখনই যুদ্ধবিরতির কথা বলুন।’ আর সারা বিশ্বেও চাপ বাড়ছে আমেরিকার বিরুদ্ধে, শিশু ও নারী হত্যার বিরুদ্ধে অবাধ ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে। তাই তিনি বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘ছোট্ট একটা বিরাম’ হলে মন্দ হয় না। অর্থাৎ বিরামের পর আবার চলবে অবিরাম হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ। জো বাইডেনকে বলার অর্থ হচ্ছে এই, সারা দুনিয়া এখন জেনে গেছে ইসরাইলের মূল শক্তি হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন শাসকরা ইসরাইলের পিছনে না থাকলে ইসরাইল ১৯৪৮ সালের পর এখনও পর্যন্ত দুইদিনও নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে না।
কেন ইসরাইল ও তার সহযোগী আমেরিকা যুদ্ধবিরতিতে রাজি হচ্ছে না, তার পিছনের বড় কারণটি ফাঁস হয়ে গেছে ইসরাইলের একটি উঁচুমানের পত্রিকায়। পত্রিকাটির বিস্ফোরক তথ্য বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, গাজা এবং সেইসঙ্গে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে যে সকল ফিলিস্তিনিরা রয়েছে, তাদের নিজেদের সীমান্ত থেকে বেশ দূরে মিশর ও অন্য আরব দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বহুদিন থেকে ইসরাইল এক নীল নকশা প্রস্তুত করে রেখেছে। আর এতে পুরোপুরি সম্মতি রয়েছে দোষর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যার অস্ত্র এবং অর্থের জোরে ইসরাইলের এত হম্বিতম্বি। নইলে ইসরাইল হামাসের মতো ছোট একটি মুজাহিদ দলের কাছে কতটা অসহায়, তা বুঝিয়ে দিয়েছে ৭ অক্টোবর ইসরাইলের হামাসের পরিকল্পিত হানায়। কিন্তু পর্যবেক্ষকরা বলছেন, হামাস হামলা না করলেও ইসরাইল গাজা ও ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক থেকে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের পুরো জনসংখ্যাকে মিশরের ধু ধু মরুর সিনাই উপত্যকায় নির্বাসনে পাঠাতে বহুদিন ধরেই পাঁয়তারা করছে। তাদের মতে, এটাই হচ্ছে ফিলিস্তিন সমস্যার একমাত্র সমাধান। অবশ্য সংখ্যাটি নেহাত কম নয়। গাজায় রয়েছে ২৩ লক্ষ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু। আর পশ্চিম তীরের উদ্বাস্তুদের সংখ্যা ২৭ লক্ষ। সব মিলিয়ে কম করে ৫০ লক্ষ মানুষ। ব্রিটেন ও পশ্চিমা শক্তির সহায়তায় ১৯৪৮ সালে লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনিকে স্বভূমি থেকে বিতাড়িত করে ইসরাইল রাষ্ট্রের সৃষ্টি। কিন্তু ঘরহারা এই উদ্বাস্তুরাই জিওনিস্ট ইসরাইলের জন্য ‘কাবাব মে হাড্ডি’ হয়ে রয়েছে। অবরুদ্ধ গাজা থেকে হামাসের মুজাহিদদের ইসরাইলে ঢুকে পড়ে সেনা ও জিওনিস্টদের হত্যা করা, বুঝিয়ে দিয়েছে আশেপাশে ফিলিস্তিনিরা থাকলে মুশকিল। আর দ্বিতীয়ত, ইসরাইল চায় ইহুদি ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত ‘বৃহত্তর ইসরাইল’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। আর সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করে চলেছে। নতজানু মিশর, দাসখত লিখে দেওয়া আরব আমীরাত বা সউদি আরব ইসরাইলের জন্য তেমন কোনও বাধা নয়। বাধা হচ্ছে ফিলিস্তিনের উদ্বাস্তুরা। তাই দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইল ১৯৪৮, ১৯৬৭-র পর ২০২৩ সালে এই উদ্বাস্তুদের মিশরে ঠেলে দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা প্রস্তুত করে রেখেছে। আর হামাসের হামলাকে অজুহাত করে তারা তাদের নীল নকশাকে বাস্তবায়িত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এছাড়া গাজার সন্নিকটে সমুদ্র তটে রয়েছে গ্যাস, তেল ও অন্যান্য খনিজের বিশাল ভান্ডার। তাদের ভূ-তাত্ত্বিক গবেষকরা বেশ কিছু বছর আগে তার সন্ধান দিয়েছে। এগুলিকে তো কবজা করতে হবে!
সব মিলিয়ে নয়া সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা এবং তার পার্টনার ইসরাইল শত শত ফুলের মতো আরব শিশুর মৃতদেহের উপর দিয়ে ইসরাইল গাজা থেকে সব ফিলিস্তিনিকে উৎখাত করতে অগ্রসর হয়েছে। আর আমেরিকা অর্থ, বিমানবহর, যুদ্ধ জাহাজ, ক্ষেপণাস্ত্র সব নিয়ে ইসরাইলের পাশে দাঁড়িয়েছে। ইসরাইল ও আমেরিকা ভালো করে জানে, নপুংসক উপসাগরীয় শাসকরা কোনও ঝুঁকি নেবে না। তাদের গদি ও স্বার্থই তাদের কাছে সব থেকে মূল্যবাণ। ঈমান, ইনসাফ এগুলি থেকেও তারা বহুদিন আগেই মুক্ত হয়েছে। ইসরাইলি পত্রিকায় প্রকাশিত ফিলিস্তিনিদের মরুভূমিতে নির্বাসনের পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন কীভাবে হতে চলেছে, তা পুবের কলম-এ আগামী কিস্তিতে প্রকাশিত হবে।