পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরিতে গাড়ি চাপা দিয়ে আন্দোলনকারী ৪ কৃষককে হত্যা করার মামলায় এবার কড়া হয়ে সুপ্রিম কোর্ট কোনও হাই কোর্টের এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে পুরো মামলার তদারকি করার জন্য নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিল। তবে উত্তরপ্রদেশের কোনও হাইকোর্টের কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে যে নেওয়া হবে না, তা জানাতে ভোলেননি বিচারপতিরা। যোগি সরকার যেভাবে এই মামলার তদন্ত করছে তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করে সোমবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের সদস্য বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, ‘এমনভাবে মামলার তদন্ত করা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলে আশিস মিশ্রকে বাঁচানোই পুলিশের একমাত্র লক্ষ্য। এর আগে তিনবার আমরা এই মামলার গতিবিধি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছি। আগে বলা হয়েছিল, এতজন মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন ঘটনার দিন। অথচ এত কম সাক্ষী কেন?
এরপর আরও কয়েকজনকে সাক্ষী হিসেবে নাম যোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারা সকলেই আশিস মিশ্রের পক্ষে বলতে চায়। কী হচ্ছে, এসব আমাদের বুঝতে দেরি হয় না।
প্রধান বিচারপতি এনভি রামানা বলেন, ‘আমরা কোনও রাজনৈতিক মাত্রা যোগ করতে চাই না। যে ঢিমেতালে এই মামলা চলছে তাতে শীর্ষ কোর্টের তদারকি করা ছাড়া উপায় নেই। আমরা ১০ দিন সময় দিয়েছিলাম মামলার গতিবিধি জানিয়ে একটা স্টেটাস রিপোর্ট দেওয়ার জন্য। যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে তাতে কয়েকজন বাড়তি সাক্ষীর নাম যোগ করা ছাড়া নতুন কিছু নেই। এতদিন হয়ে গেল, ল্যাবরেটরির রিপোর্ট এল না’। তাছাড়া এই মামলায় দুটি এফআইআর করা নিয়েও বিচারপতিরা সন্দেহপ্রকাশ করে বলেছেন, ‘দুটি এফআইআরের প্রয়োজন পড়ল কেন? মনে হচ্ছে, আশিস মিশ্রকে বাঁচাতেই দুটি এফআইআর করা হয়েছে। আবার বলা হচ্ছে, এক এফআইআরের তথ্য অন্যটিতে কাজে লাগানো হবে। আশ্চর্যের ব্যাপার’।
এদিন আইনজীবী হরিশ সালভে উত্তরপ্রদেশ সরকারের হয়ে ওকালতি করে বলেন, ‘দুটি এফআইআর পুলিশ তদন্তের সুবিধার জন্যই করেছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সাক্ষীরা প্রথম এফআইআর নিয়ে বলতে গিয়ে দ্বিতীয় এফআইআর নিয়ে বেশি তথ্য দিচ্ছে। এর ফলে দুটি এফআইআর কখনও যুক্ত হয়ে পড়ছে।
হরিশ বলেন, ‘ঘটনার দিন রামন কাশ্যপ নামে যে সাংবাদিক খুন হয়েছেন তিনি আশিস মিশ্রের দলে ছিলেন, না বিক্ষোভকারী কৃষকদের দলে ছিলেন, এই নিয়ে দু‘রকম দাবি উঠছে। এইসব বিষয় নিশ্চিত করার জন্যই দুটি এফআইআর করা হয়েছে’।
তখনই বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, ‘আপনাদের বক্তব্য নিয়ে আমরাও নিশ্চিত হতে পারছি না। তাই উত্তরপ্রদেশ ছাড়া অন্য রাজ্যের হাইকোর্টের এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে এই মামলার দৈনন্দিন কাজের তদারকি করার জন্য নিযুক্ত করা হবে’।
বিচারপতি হিমা কোহলি এদিন বলেন, ‘পুলিশ বলছে, একটিই মোবাইল ফোন ঘটনাস্থল থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং সেটি আশিস মিশ্রের।এটা হতে পারে না। আরও ফোন পেয়েছেন।লুকোচ্ছেন। আপনারা কি বলতে চান, আর কোনও অভিযুক্তের কাছে ফোন ছিল না’?
এর আগের শুনানিতে বেঞ্চের বিচারপতিরা মাত্র ২৩ জন সাক্ষী কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। উত্তরপ্রদেশ সরকারের কৌসুঁলিকে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, নিজেদের লোকের পক্ষে মামলা সাজাচ্ছেন এমন ধারণা যেন না হয় তা দেখবেন।
গত ৩ অক্টোবর এই হামলার ঘটনা ঘটে। ৪ কৃষক, ৩ বিজেপি কর্মী এবং একজন সাংবাদিকের মৃত্যু হয়। এদিন সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, বিজেপি কর্মীদের হত্যা নিয়ে পৃথক রিপোর্ট দিতে হবে। দুটি বিষয় গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।