দেবশ্রী মজুমদার, নানুর: সুন্দরপুর! নানুরের থুপসরা পঞ্চায়েতের এই ছোট্ট গ্রামে আজ সুন্দরের ছিঁটেফোটা টুকু নেই! আছে বানভাসি মানুষের কান্না। কদিন টানা বৃষ্টির পর ঝাড়খণ্ডের সিকাটিয়া ব্যারেজের জল ছাড়ার পর বৃহস্পতিবার রাত আট’টা নাগাদ সুন্দরপুরে অজয়ের বাঁধ ভাঙে। তারপর হুড়মুড় করে সেই জল ঢুকে সুন্দরপুর সহ আশেপাশের বহু গ্রামের সব নিয়ে চলে গেছে। শনিবার জল অনেকটাই নেমেছে। বানভাসি ত্রিপল পেয়েছে। কিন্তু ঘর হারিয়ে মাথার উপর ছাদ হারিয়েছে। চারিদিকে গর্ত আর জমা জল। আর ভেঙে পড়া কংক্রিটের জঞ্জাল। বাঁধের উপরে সরকারি ত্রিপলের নিচে মাথা গুঁজে সরকারি রিলিফের জোরে বেঁচে আছে। মাঠের পাকা ফসল ধুয়ে মুছে সাফ। খোঁজ নেই বাড়ির গবাদি পশুর।
জানা গেছে, নানুরের থুপসরা ও ন’নগরকোড্ডা পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রাম এই বন্যায় ভয়ংকরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। থুপসরার নতুনডাঙা, বামুনিয়া, হাতোরা, পালিতপুর, সাতরা, কুরগ্রাম, সিডাই ডাঙাপাড়া ও রামকৃষ্ণপুর সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত। এছাড়াও ন’নগরকোড্ডা পঞ্চায়েতের ডোমরা, নবায়া অঞ্চলে ও ভালো ক্ষতি হয়েছে। সুন্দরপুরের বয়স্ক মহিলা স্বর্ণলতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, মেঘের জলে তো এত ক্ষতি হয় না! তবে কেন ঝাড়খণ্ডের বাঁধের জল ছেড়ে আমাদের বানভাসি করা হবে? তারপর হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, পুজোর সময়। কারো কিছু নেই। এক কাপড়ে নাতি নাতনিদের নিয়ে কোথায় যাব? ঝড় বাদলে কোথায় মাথা গুঁজব?
কান্নাকাটির মাঝেই একইভাবে গ্রামের হীরা মাঝি, বাগদি টুডুরা বলেন, এতটুকু সময় পাইনি। ঘরে আমাদের কিছু নেই। ভিটেমাটি ছাড়া। বাসাপাড়ার সফিকুল ইসলাম বলেন, বাসাপাড়ার নিচের দিকে জল আছে। উপরের দিকে কিছু নেই। কাদা জলের মধ্যে দোকান পাট খোলার চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে, নতুন হাট ব্রীজের কাছে শনিবার নদীতে মাছ ধরা দেখছিল বছর বারোর এক কিশোর। ধ্বসে সে তলিয়ে যায়। শনিবার বিকেল পর্যন্ত ডুবুরিরা তার খোঁজ পায়নি।
নানুর বিডিও শৌভিক ঘোষাল বলেন, সুন্দরপুরের পাশের গ্রাম বামুনিয়াতে রান্নাবান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই খাবার বানভাসি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সবাইকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে চাইলেও, কেউ ভিটেমাটি বা গ্রাম ছাড়তে চাইছে না। ত্রিপল, জামাকাপড়, শুকনো খাবার, বিস্কুট, জল, বেবিফুড, বাসনপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আরও দেওয়া চলছে। মেডিক্যাল ক্যাম্প, মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি অস্থায়ী টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতির হিসেব দিতে গিয়ে বলেন, জল পুরোপুরি না নামলে পুরোটা বোঝা যাবে না। প্রায় সাড়ে পাঁচশো হেক্টরের উপর বেশি জমির পাকা ফসল নষ্ট হয়েছে।
জানা গেছে, জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। ত্রান পাঠিয়ে ক্ষান্ত না থেকে দুর্গত এলাকায় ঘুরেছেন। একইভাবে নানুরের কাজল সেখ দুর্গত মানুষকে ত্রাণ দিয়ে তাদের পাশে থেকেছেন।